সূর্যোদয়ের আগে
সাথী দাস
ষষ্ঠ পর্ব
-বোনকে বলেছো ব্যাপারটা?
-না!তুমি চেনো না তোমার বোনকে?মাথা ঠান্ডা দেখে বলতে হবে।মাথা গরমের সময় বললে,বাড়িকে তো কুরুক্ষেত্রে পরিণত করে ফেলবে।আজ আবার সকাল থেকেই দেখছি,ঘুরতে-ফিরতে গুনগুন করে গান গাইছে।কি ব্যাপার কে জানে!!
-মেজাজ ভালো হয়তো!এই সময় বলে দেখো একবার...
-হুম!তুমি খেতে বসো।ঝোরা বাথরুম থেকে বেরোলে আমি স্নান করতে যাবো।আজও কি তোমার দেরি হবে ফিরতে?
-না,দেখি।আজ তো তাড়াতাড়ি ফেরার ইচ্ছে আছে।কাজ অন্যদিনের তুলনায় একটু কম আজ।সামনের সপ্তাহটা কিন্তু পুরো নাইট-শিফট!প্রিয়া,তুমি বোনকে একটু ভালোভাবে বুঝিয়ে বোলো কিন্তু!বুঝলে?এত ভালো ছেলে,এত ভালো পরিবার যখন নিজে থেকেই এসেছে,তখন আর ফেরানো উচিত না।কি যে বিয়ে করবে না বলে জেদ ধরে বসে আছে।চলে নাকি এভাবে?ওর একটা ভবিষ্যৎ নেই?জীবনে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত।বয়সটাও তো নেহাত কম হলো না!এরপর লোকে যদি বলে,বোনের পয়সা খাওয়ার জন্য বোনকে বিয়ে না দিয়ে,ঘরে বসিয়ে রেখেছে,তখন তো আমার গায়েই লাগবে।বাইরের লোক তো আর জানবে না,যে বোন নিজেই বিয়ে করবে না বলে মরণ-পণ করে বসে আছে....
-জানো তো সৌম্য,আমার মনে হয়,ঝোরা বোধহয় লোনের দিকটা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ও ভাবে,ওর বিয়ের পর যদি চাকরিটা ছাড়তে হয়,তাহলে তো পুরো লোনের বোঝাটাই আমাদের দুজনের ওপর এসে পড়বে।তার ওপর সংসারের খরচও আছে।তাই হয়তো সবদিক ভেবে পিছিয়ে যায়....
-বা হয়তো আবার নতুন করে শুরু করতে ভয় পায়।কম ধাক্কা তো খায় নি জীবনে!
-হুম!!তাও হতে পারে।ঠিক বুঝে উঠতে পারি না ওকে।এত ঢেকে রাখে নিজেকে।কারোর সাধ্য নেই,ওর বাইরের ওই শক্ত আবরণ পেরিয়ে ওর কাছে পৌঁছয়।নিজের চারিদিকে যেন একটা কঠিন আবরণ তুলে রেখেছে।তুমি এত চিন্তা কোরো না সৌম্য।আমি দেখছি!আজই ওর সঙ্গে কথা বলবো।
-হুম!!একটু ডাল দাও তো?
-নাও!!
-প্রিয়া?
-বলো!
-শোনো এদিকে...
-কি?
অফিসে বেরোবে সৌম্য।সকালে উঠে চায়ের পর্ব সেরে,হুড়োহুড়ি করে রান্না সেরে সৌম্যকে খেতে দিচ্ছিলো প্রিয়া।ডাক শুনে প্রিয়া হাতা নিয়ে টেবিলের অপর প্রান্ত থেকে এগিয়ে এলো সৌম্যর কাছে।ঝোরা তখন ডাইনিংয়ের বাথরুমে।সৌম্য একবার বাথরুমের দিকে চেয়ে,বাঁ হাতে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়ার কোমর...ওকে একটু কাছে টেনে অনেকটা আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-ওদিকের কোনো খবর আছে?
মাথা নামিয়ে নিলো প্রিয়া।ওর চোখদুটো জলে ভরে গেছে।কি বলবে সৌম্যকে!!প্রতিমাসে একটা-একটা করে দিন পার হলেই,একটু-একটু করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ও।এবার তো বেশ দিন পাঁচেক কেটে গেছিলো।আশায় বুক বেঁধেছিলো প্রিয়া।তবুও সৌম্যকে কিছু জানায়নি ও।ভেবেছিলো একেবারে ঘরোয়া পরীক্ষাটুকু করেই জানাবে।কিন্তু সেই সুযোগ আর ও পেলো কই!!আজ ভোরবেলাতেই ওর যোনিপথ বেয়ে তীব্র বেগে ভেসে এলো উষ্ণ রক্তস্রোত!এবারও হলো না!সে এবারও এলো না।সৌম্য বাঁ-হাত দিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে,ওর মুখের দিকেই চেয়ে আছে।ডান হাত ভাতের থালায়।কোনোরকমে প্রিয়া বললো,
-নাঃ!!আজ সকালে হয়ে গেছে!
প্রিয়া স্পষ্টই দেখলো,সৌম্যর উজ্জ্বল মুখটা থেকে সমস্ত আলো নিভে গিয়ে,মুহূর্তেই অন্ধকার হয়ে গেলো।সেটাই স্বাভাবিক!একজন বিবাহিত পুরুষ,তার বৈবাহিক জীবনে একটা সময় পর পিতৃত্বের স্বাদ খোঁজে,নিজেকে প্রমাণ করার সঙ্গে-সঙ্গে ঘরে ফিরে ছোট্ট দুটো হাতের স্পর্শ খোঁজে।প্রেয়সীর আলিঙ্গনের পাশাপাশি একটু নিষ্পাপ হাসির শব্দ,ঘরময় শিশুর কলকাকলিও খোঁজে।হয়তো এইটুকুতেই তার সমস্ত দিনের পরিশ্রমের ক্লান্তি ধুয়ে যায়....ডাক্তার অনেকদিন ধরেই দেখাচ্ছে ওরা।সৌম্য সম্পূর্ণ স্বাভাবিক,সমস্যাটা প্রিয়ারই।আর সেই জন্যই প্রিয়ার লজ্জার শেষ নেই।সৌম্য যে ওর কারণেই পিতৃত্বের গৌরব থেকে বঞ্চিত,দিনের পর দিন এটা ভেবেই ও শেষ হয়ে যাচ্ছে।সৌম্য তাড়াতাড়িই ব্যাপারটা ঢাকতে বলে উঠলো,
-ঠিক আছে প্রিয়া।কোনো ব্যাপার না!সব ঠিক হয়ে যাবে।ডাক্তার তো তিনমাস সময় দিয়েছে।এটা তো সবে প্রথম মাস।এত অধৈর্য্য হলে তো চলবে না।আমি জাস্ট এমনিই জিজ্ঞাসা করেছিলাম।আসলে তোমার ডেট পেরিয়ে গেছে তো,হলে তো তুমি বলো।এবার কিছু বলোনি,তাই ভাবলাম....
-আজ সকালেই সবে...
-কোনো ব্যাপার না!!সব ঠিক হয়ে যাবে!বলেই এঁটো ঠোঁটদুটো সৌম্য ডুবিয়ে দিলো,অর্ধসিক্ত জামায় ঢাকা প্রিয়ার পেটে...
সেই মুহূর্তেই বাথরুমের ছিটকিনি খোলার শব্দ পেয়ে প্রিয়াকে ছেড়ে দিলো সৌম্য।
-বৌদি খেতে দাও!উফফ!!কত দেরি হয়ে গেলো আজ।
-তা এতক্ষণ পড়ে-পড়ে ঘুমোচ্ছিলি কেন?রাতে কি রাজু দার বদলে তুই পাহারা দিতে গিয়েছিলি??
খেঁকিয়ে উঠলো প্রিয়া...
বৌদির শেষ কথাটুকু শুনতে-শুনতে নিজের ঘরে ঢুকলো ঝোরা।
"হুম!ঝোরা একরকম পাহারাই তো দিয়েছে কাল!প্রায় সারারাতই তো জাগা।সে আবার আজও ডেকেছে...এরপর থেকে সে ছুটিতে এলে প্রতিদিন যদি এইরকম চলতে থাকে,তবে রাজু-দাকে ছাড়িয়ে দিয়ে ওকে রাখলেই হয়!কারণ,ওরা দুজন তো পেঁচার মতো প্রায় প্রতিটা রাতই জেগে কাটাচ্ছে!!"
জামাকাপড় পরতে-পরতে নিজে-নিজেই হেসে ফেললো ঝোরা,আজ আর জামার নীচে অন্তর্বাসটুকু ছাড়া কোনো অধোবাস পরলো না ও,আর একটুও সাজলো না।শুধু চোখের কোলে গভীর কাজল টেনে নিলো,আর ঠোঁটে একটু ওষ্ঠরঞ্জনী।অর্ধসিক্ত একপিঠ চুল ছেড়ে দিলো....তারপর দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে খাওয়ার টেবিলে গিয়ে বসলো।
-দাও!!এই দাদা,এই মাসের শেষে আমার কিছু এক্সট্রা-সেভিংস আছে।চল,এই উইকেন্ডে তিনজনে গিয়ে সোফার কভারগুলো কিনে আনি।
উৎসাহে টগবগ করে ফুটতে থাকে ঝোরা।ও কাল রাতে মাত্র ঘন্টা দুয়েক ঘুমিয়েছে।কিন্তু এত নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে,আর আজ সকালটা এত সুন্দরভাবে শুরু হয়েছে,তা ওর কল্পনারও অতীত!!সৌম্য শেষ পাতের ভাতটুকু খেতে-খেতে বললো,
-সে ঠিক আছে।ওসব হবেখন।প্রিয়ার তোর সঙ্গে একটু কাজের কথা আছে বুনি।
-কি কথা বৌদি?
-নে,খেতে-খেতে শোন!নইলে তো সময় নেই বলে আবার আধপেট খেয়েই দৌড়োবি!
-হুম,বলো!
ঝোরা একবার মাত্র একটু ভাত মুখে দেয়।সৌম্য খাওয়া শেষে উঠে যায় সিঙ্কের দিকে....
-দোতলার মাসিমার বোন,দিদির ফ্ল্যাটে বেড়াতে এসেছে বুঝলি!ওনার ছেলের জন্য তোকে খুব পছন্দ হয়েছে।তোকে দেখেছে হয়তো ঢুকতে-বেরোতে।দুই ভাই,এ ছোট।বড় ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে।নির্ঝঞ্ঝাট পরিবার।ছোট ছেলের আলাদা ব্যবসা আছে।বড় ছেলে চাকরি করে,আলাদা সংসার,বাবা নেই।ছোট ছেলে মায়ের সঙ্গে থাকে...কাল আমি অফিস থেকে ফেরার সময়,মাসিমা আমায় ঢুকতে দেখেই বারান্দা থেকে ডাকলেন,আমিও গেলাম ওনার ফ্ল্যাটে।তখন উনি আমায় বললেন।দেখ বাবু,তোকে একটা কথা বলি,জীবনে অনেকরকম ঝড়-ঝাপটা আসে,সেগুলো কাটিয়েও উঠতে হয়!!যা হয়েছে,ভুলে যা ওসব!!মাসিমার বোন বলছিলেন,ওমন লক্ষীমন্ত গড়ন,অমন একমাথা চুল,ঠিক যেন...
-রূপ দেখেই গলে গেলো?আর আমার অতীত?সেসব কিছু জানে ওরা?বিয়ের পর কি দুবেলা ভাতের বদলে আমার রূপ ধুয়ে জল খাবে?এই একমাথা চুলই যদি আমি বিয়ের পর,ওনার ছেলের গলায় পেঁচিয়ে মারি?তখনও থাকবো তো লক্ষীমন্ত?
ঝোরা মাথা নীচু করে,ঝরঝর করে একভাবে বলে গেলো কথাগুলো।প্রিয়া নির্বাক হয়ে সৌম্যর মুখের দিকে চাইলো।খেই হারিয়ে ফেললো কথার।সৌম্য এগিয়ে এসে ঝোরার কাঁধে হাত রেখে বললো,
-এভাবে চলে না বুনি!একটু বোঝার চেষ্টা কর!এইরকম বিয়ে করবো না বলে ধনুক-ভাঙ্গা পণ করলে হয়?সারাজীবন এইভাবে এই বাড়িতে....
খাওয়া মাথায় উঠে গেলো ঝোরার।ও হাত তুলে নিলো ভাতের থালা থেকে।
-কেন?এই বাড়িতে আমি সারাজীবন থাকতে পারবো না কেন?এই বাড়ি যতটা তোদের,ততটাই আমাদের।তোদের দুজনের সঙ্গে-সঙ্গে আমিও দিনরাত রক্ত-জল করা পয়সা দিয়ে বাড়ির লোন টানছি!তিনজনে মিলেই টানছি।তাই ফ্ল্যাট তো তিনজনেরই...
-তুই বুঝতে ভুল করছিস বুনি।তোকে বাড়ি ছাড়ার কথা তো কেউ বলছে না সোনা!আমরা তোর জীবনটা গুছিয়ে দিতে চাইছি।এভাবে সারাজীবন কি একা থাকা যায়?
-খুব যায়!!
-না ঝোরা!যায় না!
এগিয়ে আসে প্রিয়া।টেবিলে রাখা ঝোরার বাঁ-হাতটা জড়িয়ে ধরে ও...
-এভাবে চলে না ঝোরা।ভুলে যা সবকিছু!অন্তত চেষ্টা তো কর!
-আর ভুলে গিয়ে কি করবো?যারা আমার লক্ষীমন্ত গড়ন দেখে,আমার মাথাভর্তি চুল দেখে,আমার রূপ দেখে আমায় নিয়ে যেতে এসেছে,তাদের সঙ্গে ড্যাং-ড্যাং করে চলে যাবো!!
-আচ্ছা,ছেলেটাকে তো একবার দেখ।তারপর ভালো না লাগলে...
-উফফ!!
তিড়িং করে চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে পড়লো ঝোরা।
-ওকি!খাওয়া ছেড়ে উঠলি কেন?
-তোমাদের কথা শুনেই পেট ভরে গেছে!!
-আমার মাথার দিব্যি,বোস তুই আগে!আমি খাইয়ে দিচ্ছি!!
-উফফ বৌদি!
-বোস বলছি!!
ঝোরাকে টেনে ধরে টেবিলে বসায় প্রিয়া।
-ধেড়ে মেয়ে একটা!তাড়াতাড়ি গিলবেন!আমারও অফিস আছে,সেটা ভুলবেন না!
একটু হাসলো ঝোরা।
-কেউ বলবে আমি তোর থেকে ছোট?তুই বড়!!কি যে করিস না তুই ঝোরা!!
-না!তুমি তো আমার ঠাকুমা!!
-নে-নে!হাঁ কর!
-প্রিয়া এলাম!বুনি বাই!
-হুম,টাটা!!
চোখের ইশারায় একবার ঝোরার সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলার জন্য মিনতি করে সৌম্য!প্রিয়াও ভরসাসূচক ঘাড় নাড়ে...বেরিয়ে যায় সৌম্য...
-শোন না,কি বলছি!
-আমি শুনছি না!
-উফফ!!শোন না ঝোরা..
-কিইই?উফফ!এতো আচ্ছা জ্বালা!
-একবার দেখ না ছেলেটাকে।তারপর পছন্দ না হলে আমি আর দ্বিতীয়বার তোকে বলবো না...উনি বারবার বলছিলো,এমন একপিঠ চুল...অত মিষ্টি মুখ...ওনার তোকে সত্যিই খুব পছন্দ...
-উনি চুল-চুল করে এত অবসেসড কেন?নিজের কি টাক পড়ে গেছে নাকি!!ওনাকে বরং আমি একটা উইগ কিনে গিফ্ট করে দেবো।পরে বসে থাকতে বোলো!চুলের শখ মিটে যাবে!!
-উফফ!এত কথা বলিস না তুই!আজকের দিনটা ভেবে দেখ না!রাতে এসে জানাস আমায়...কিরে?ওই?
-কি?
-রাতে এসে জানা বুঝলি!ভেবে দেখ সারাটা দিন!!ওনার যখন তোকে এতই পছন্দ...
-ঠিক আছে।রাতে এসে কথা বলছি!তুমি এবার স্নানে যাও।আমি এই কটা বাসন মেজেই বেরোচ্ছি।যাও-যাও তাড়াতাড়ি যাও....
প্রিয়া আর ঝোরা দুজনই একসঙ্গে তৈরী হয়ে বেরোয়।লিফটে ঢুকেও প্রিয়া একভাবে ঝোরাকে বোঝাতে থাকে।ঝোরা মুখ বেঁকিয়ে ওপর দিকে চেয়ে থাকে....
-শোন না...কিরে?কথাগুলো কানে যাচ্ছে তোর?আমি কি দেওয়ালের সঙ্গে কথা বলছি ঝোরা?
-উফফ!!
ঝোরার উদাসীনতায় প্রিয়াও এবার ভীষণই বিরক্ত হয়ে যায়।বিরক্ত কণ্ঠে বলে ওঠে,
-তুমি কোনো বিদূষী-মহীয়সী নারী নও ঝোরা,যে সব পুরুষ তোমার পায়ে এসে পড়বে!নিজের জীবনটাকে কি করে রেখেছো,সেই অতীতগুলোও ভুলে যেও না।পাপ থেকে এত সহজে মুক্তি পাওয়া যায় না।নিজে তো মরেইছো,দাদাটাকেও চিন্তায়-চিন্তায় শেষ করে দিচ্ছ।
-তোমরা আমার কথা এত ভাবো কেন বলো তো?আমাকে আমার মতো ছেড়ে দাও না বৌদি!
-তোকে ভালোবাসি তাই।তোর ভালো চাই!!
-ভালো....উফফ!!এত ভালো আমার করতে হবে না তোমাদের....
-হ্যাঁ,আমার আর কি!!নিজের জীবনেই জ্বালার শেষ নেই,তারপর এই একটা...বিকেলের মধ্যে আমি তোমার উত্তর শুনতে চাই ঝোরা।তারপর কিন্তু আমি এগোবো।
চুপ করে গেলো ঝোরা।চোখে জল এসে গেছে ওর...কাজল বুঝি ঘেঁটে গেলো...লিফটের দরজাটা হঠাৎ করে খুলে গেলো।ঝোরা দেখলো,প্রিয়ম দাঁড়িয়ে আছে।তারপর দেখলো আট তলায় পৌঁছে গেছে লিফট।বৌদির কথা শুনতে-শুনতে খেয়ালই করেনি ও।বৌদি বোধহয় আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো,কিন্তু প্রিয়মকে দেখে চুপ করে গেলো।
-আরে বৌদি,ভালো আছেন?
-হ্যাঁ ভাই।তুমি ভালো?
-হ্যাঁ বৌদি!ঝোরা...হাই!!
-হাই!!
মৃদুস্বরে ঝোরা বললো।প্রিয়ম একবার ওর দিকে ভালোভাবে চেয়ে সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।বাকি সময়টুকু কেউ আর কোনো কথা বললো না।
-ভাই আসছি আমি,আমার তো আবার উল্টো রাস্তা।আজ অনেকটা দেরিও হয়ে গেলো।বাসটাও বেরিয়ে গেছে।ঝোরা...
-হুম?
-রাতে বাড়ি ফিরে আমরা কথা বলছি!
-হুম!!
মাথা নামিয়ে নিলো ঝোরা।প্রিয়া বেরিয়ে গেলো...
-গুড মর্নিং ঝোরা!!
-মর্নিং!!
-ঘুম হয়েছিলো তো রাতে?
বলেই বাইকে বসে মৃদু হেসে নিজের ঠোঁটটা কামড়ে ধরলো প্রিয়ম।হেসে ফেললো ঝোরাও...
-মুড অফ?
-নাঃ!ওই একটু বৌদি মাঝে-মধ্যে দু-চার কথা...ওটা প্রায়ই হয়ে থাকে!আসলে আমায় ভালোবাসে তো,সেই অধিকারবোধ থেকেই একটু শাসন আর কি!
স্কুটিতে উঠে বসলো ঝোরা।
-হুম!!বুঝলাম!চলো আমি বেরোলাম।আগে আমার তীর্থর বাড়ি,তারপর ও পাড়া!বিকেলের দিকে আবার ওইগুলো ডেলিভারিও দেবে।বিকেলে আজ আর বেরোনো হবে না!আর সেই....
-সেই?
-সেই রাতে!ওই একটা মেয়ের সঙ্গে স্মোকিং-ডেট আছে,সে আসলে স্মোক করতে এসে সিগারেট আনতেই ভুলে যায়।তাই আমার তো পবিত্র কর্তব্য তার হাতে সেটা সময়মতো তুলে দেওয়া...
-শাট আপ!!
হেসে ফেললো ঝোরা।
-ওকে!চুপ করছি!কিন্তু সত্যি কিনা বলো ঝোরা!ভুলে গেছিলে তো তুমি!?ঠিক তো?
নিজেকে লুকোতে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো ঝোরা...
-ঝোরা?
-হুম?
-ভেবে দেখো তো একটু,কেন ভুলে গেছিলে?তারপর বাকি কথা রাতে বলছি!বাই!!
হুশ করে বাইক নিয়ে প্রিয়ম বেরিয়ে গেলো।ঝোরা স্তম্ভিত হয়ে চেয়ে রইলো ওই দিকে।কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে শুধু ওইটুকু কথাই,
"ভেবে দেখো তো একটু,কেন ভুলে গেছিলে?"
বৌদিও বলেছে,আজ সারাদিন ভেবে দেখতে।রাতে ওর সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছে।
আর কিচ্ছু ভাবতে পারে না ঝোরা।স্টার্ট দেয় স্কুটিতে।স্কুটি বেরোতে দেখে টুলে বসে থাকা কাকা হাত তোলে,কিন্তু আজ আর কেউ বললো না,"বাই কাকা!সব ঠিক আছে তো!"ঝোরাকে চুপ করে বেরিয়ে যেতে দেখে বেশ অবাকই হলেন কাকা...
-এত দেরি কেন আজ বুনির?
-কি জানি গো!একটা ফোন করি দাঁড়াও...
সত্যিই ঘড়ির দিকে চেয়ে এবার অস্থির হয়ে পড়ে প্রিয়াও...
-আমি করেছি ফোন।বেজে যাচ্ছে,ধরছে না।
-উফফ!!মেয়েকে একটু কিছু বলাও যাবে না।অমনি মুখ ফুলে যাবে!
-কেন প্রিয়া?কি বলেছিলে বোনকে?
-আরে তেমন কিছুই না।একটু শুধু ভেবে দেখতে বলেছিলাম।তোমার বোন তো এমনিতে আমার কোনো কথা কানেই তোলে না,তাই ওকে শোনাবার জন্য ওই একটু....
বেলটা সজোরে বেজে উঠলো।প্রিয়া চমকে উঠে ছুটলো দরজার দিকে...
সৌম্য একটু নিশ্চিন্ত হয়ে টিভিটা চালিয়ে দিলো।
-একি রে!!ঝোরা!!
প্রিয়ার আর্তনাদে অন্তরাত্মা পর্যন্ত কেঁপে উঠলো সৌম্যর।ও একদৌড়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো।প্রিয়া তখনও কিছু একটা দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কাঁপছে...
-কিগো?কি হয়েছে প্রিয়া...
ঝোরাকে দেখে স্তম্ভিত সৌম্যও..
-বুনি!!
-হোয়াট!!
বলার সঙ্গে-সঙ্গেই ওর ঠোঁটের ওপরে একটা ছোট্ট বেলুন ফুলে উঠেই আবার চুপসে যায়...
-কি হাঁ করে দেখছো বলো তো!!সরো,আমায় ঢুকতে দাও!
প্রিয়া কেঁদেই ফেললো...
-আমার ওপর রাগ করে তুই এটা কি করলি বোন?এত জেদ তোর?
-আরে এটা তো নতুন একটা স্টাইল!আমায় দেখতে ভালো লাগছে না!!আজ অফিসের পর পার্লারে গিয়েছিলাম।ভাবলাম,অনেকদিন তো হলো ওই একঘেয়ে একপিঠ চুল,একবার বয়েজ কাট করেই দেখি না,নিজেকে কেমন লাগে দেখতে!!এই দাদা,ভালো লাগছে না আমায়?
সৌম্য আর একটাও কথা বললো না।চোখ ফেটে জল এসে গেছে ওর।নিজের ঘরে ঢুকে সজোরে দরজা বন্ধ করে দিলো ও...
-তুই এটা কি করলি ঝোরা?এই কয়েক মাস আগে অতগুলো টাকা খরচ করে স্ট্রেটনিং করালি,সেই কোমর পর্যন্ত চুল একেবারে ঘাড়ের ওপর তুলে দিলি!!ভগবান!!উফফ!!তুই এত দুর্বল জানতাম না তো ঝোরা!আমার ওই একটু কথাতেই তুই ভেঙে পড়লি?এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলি?
চিৎকার করে কাঁদতে-কাঁদতে সোফায় বসে পড়লো প্রিয়া...
প্রস্তরমূর্তির মতো ঝোরা শুধু বলে গেলো কয়েকটা মাত্র কথা...
-তোমার কোনো কথায় তো আমি ভেঙে পড়িনি বৌদি।এই পৃথিবীতে ঝোরাকে ভাঙার মতো কোনো শক্তি আজ আর নেই।যে নারী একবার নিজেই নিজেকে ভেঙে গড়েছে,তাকে তো তুমি আর ভাঙতে পারবে না!!শুধু তুমি কেন,কেউই ভাঙতে পারবে না।আর কি বললে তুমি?আমি দুর্বল!!ভুল বললে,নিজের সবচেয়ে বড় শখের জিনিসটা কাঁচির একটা খোঁচায় সমূলে উপড়ে ফেলতে না....অনেকটা স্পর্ধা লাগে বৌদি!যেটা ঝোরার আছে...
-উফফ!বোন!এইরকম স্পর্ধার কি কোনো প্রয়োজন ছিলো?আমার ওপর রাগ হলে একটু না হয় চেঁচিয়ে ঝগড়া করে নিতে পারতিস!এভাবে নিজের ক্ষতি...
-প্রয়োজন ছিলো বৌদি!নিজেকে দোষী ভেবো না।এটা ঠিক তোমার জন্য নয়।যারা আমার একমাথা চুল দেখে,আমার রূপ দেখে আমায় ঘরে তোলার ভাবে,বউ করে সাজিয়ে রাখার কথা ভাবে,তারা আর আমার ধারে-কাছে আসার চেষ্টাও করবে না।এতটা সহজলভ্য নয় ঝোরা!!সমাজে থাকতে গেলে তো আর এই ধরনের মানসিকতার মানুষকে,সবসময় নিজের আঙুলের মধ্যমা তুলে দেখাতে পারি না,তাই আমার রাস্তায় তারা যেন আর না আসে,সেই জন্যই এটার প্রয়োজন ছিলো।
অসহ্য জ্বালায় এই কটা কথা বলেই নিজের ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিলো ঝোরা।দরজার হাতলে হাত রেখেও,আবার ঘুরে দাঁড়ালো ও...
-তুমি আজ সারাদিন ভাবতে বলেছিলে আমায়,ভেবেছি!আর ভেবে এই সিদ্ধান্তেই এসেছি।আশা করি,তুমি তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছো বৌদি!!আর যেন আমাকে দ্বিতীয়বার এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে না হয়....
ঘরে ঢুকে সশব্দে দরজা বন্ধ করলো ঝোরা...
সৌম্য চিৎকার করে প্রিয়ার সঙ্গে অশান্তি শুরু করে দিয়েছিলো।ওর ধারণা প্রিয়া ওর বোনকে এমন কিছু বলেছে,যার জন্য ঝোরা জেদের বশে এমন একটা হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।একটু আগেই দুই ভাই-বোনে চূড়ান্ত অশান্তি হয়ে গেছে।আবার অশান্তির ভয়ে বৌদি ঝোরার ঘরে এসে,ওকে নিজের হাতে করে খাইয়ে দিয়ে গেছে।তারপর থেকেই দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে রয়েছে ঝোরা।একটু চোখটাও লেগে এসেছিলো বোধহয়,তলপেটটা হঠাৎ ব্যথা করে উঠলো ওর।ঝোরার মনে পড়লো,সেই বাড়িতে ঢোকার পর থেকে বাথরুমেই তো যায়নি ও।তখন থেকেই শুধু অশান্তি আর অশান্তি!!দাদা-বৌদির ঘরের মধ্যেই একটা ছোট বাথরুম আছে,ও ডাইনিংয়ের বাথরুমেই যায়।উঠে পড়লো ও,বিছানা থেকে উঠে অন্যমনস্কভাবেই অভ্যাসবশত দুহাত দিয়ে খোঁপা করতে গেলো চুলটা,হাত দুটো শুন্যই রয়ে গেলো,সেই গোছাধরা অবিন্যস্ত চুল আর ওর দুহাতে উঠে এলো না।চোখে জল এসে যাচ্ছিলো ঝোরার।ও তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে,নিজের ঘর ছেড়ে বাথরুমে ঢুকলো....
বাথরুমের পর সিঙ্কের কাছে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালো ঝোরা।একদিকের চুল একেবারে কানের ওপরে তোলা,আর একদিকের চুল দিয়ে কানটুকু ঢাকা রয়েছে।ঘাড়ের কাছে একবার হাত দিলো ঝোরা...একটুও চুল হাত দিয়ে ধরা যাচ্ছে না আর....ঝোরার মনে পড়ে যাচ্ছিলো,পার্লারে ঢোকার পর ও যখন বললো,একেবারে ব্লান্ট বা বয়েজ কাট দিতে,মেয়েগুলো পর্যন্ত একে-অপরের মুখের দিকে চেয়েছিলো...একজন তো বলেই ফেললো,
-এত সুন্দর চুলটা কেটে ফেলবেন ম্যাম?আপনার চুল তো ভীষণ ঘন,আর সবেমাত্র কিছুদিন আগে আমিই তো স্ট্রেটনিং করে দিলাম।অন্তত বছরখানেক যাক।নষ্ট হয়ে গেলে তখন না হয় কাটবেন।আপাতত আমি বরং একটু ছোট করে দিচ্ছি,এই পিঠ পর্যন্ত...
-যেটা বললাম,সেটা করো না!!বড্ড কথা বলো তুমি!
বিরক্ত হয়ে ঝোরা বলেছিলো।এমনিতেই ওকে এই সিদ্ধান্ত নিতে নিজের সঙ্গে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে,তার মধ্যে কেউ যদি শেষ মুহূর্তে এসে আরও দুর্বল করে দেয়,তো কেঁদে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।কিন্তু ঝোরা তো কাঁদবে না,কিছুতেই না!!ঝোরা আর কাঁদবেই না...চোয়াল শক্ত করে কঠিনভাবে চেয়ারে বসেছিলো ও।কুচকুচ করে কাঁচির শব্দও পাচ্ছিলো।ঝোরা দেখেছিলো,ছলছল চোখে কম্পিত হাতে মেয়েটা কেটেই ফেলেছিলো ঝোরার সাধের চুল....পুরো চুলটা নামিয়ে ওর পাশের ফাঁকা চেয়ারেই রেখেছিলো মেয়েটা।এক নজর সেদিকে দেখেই ঝোরা মুখটা ফিরিয়ে নিয়েছিলো...
এখনও আয়নায় নিজেকে দেখেই কল থেকে একটু জল নিয়ে আয়নায় ছুঁড়ে মারলো ঝোরা।আবছা হয়ে গেলো আয়না।সেই সঙ্গে ছোট চুলের ঝোরার প্রতিবিম্বও...আয়নার ওপর দিয়ে গড়িয়ে জল নীচের দিকে নেমে আসতে লাগলো...ঝোরা একদৌড়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।বিছানায় শুয়ে কেঁদে ফেললো হাউহাউ করে....সেই মুহূর্তেই গোঁ-গোঁ করে বাজতে শুরু করলো ওর ফোনটা।চোখের জল মুছে ফোনটা হাতে নিয়ে ও দেখলো,প্রিয়ম ফোন করছে...কোনোরকমে নিজের কান্নার বেগ সামলে নিয়ে বললো,
-হ্যালো!!
-কি ম্যাডাম!আজও রাত্রি-জাগরণের প্ল্যান আছে তো?
-প্রিয়ম,আজ আসতে পারছি না প্লিজ!
ধরা গলায় ঝোরা বললো।
-কি হয়েছে ঝোরা?
-কিছুনা...
-বেশ!আমি তো ছাদে যাচ্ছিই!!তার ইচ্ছে হলে সে আসবে,নইলে আর কি!কাল মর্নিং-ফ্লাইটে তো বেরিয়েই যাচ্ছি...আর দেখা হবে না,সেই নক্ষত্রখচিত কালো রঙের চাদরে মোড়া আকাশের নীচে...
-প্রিয়ম প্লিজ,আজ আমি আসবো না।একটু বোঝার...হ্যালো!
ফোনটা কেটেই দিলো প্রিয়ম।প্যাকিং হয়ে গেছে।ট্রলিটা ওর বিছানার পাশেই দাঁড় করানো রয়েছে।হাতের সবটুকু কাজ সেরে যখন ও ঝোরাকে ফোন করলো,তখন রাত একটা....মেয়েটার কিছু তো একটা হয়েছে।কাঁদছিলো বোধহয়,গলাটা ধরা।প্রিয়ম মেয়েটাকে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না।কোন অতীত বুকে করে বয়ে বেড়াচ্ছে মেয়েটা!কি হয়েছে ওর!!ফোনে জিজ্ঞেস করতে-করতে প্রিয়ম মরে গেলেও,একটা কথাও বলবে না ঝোরা।তার চেয়ে একটু পরখ করে দেখাই যাক না,আসে কিনা!!তাই প্রিয়ম একরকম ওর মুখের ওপর ফোনটা কেটেই দিলো...
সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে লিফটের দিকে এগোলো প্রিয়ম...ছাদে গিয়ে দেখলো,সে আসেনি।তার মানে আসবে না আর।আসার হলে এতক্ষণে চলে আসতো।না আসুক ঝোরা,তবু প্রিয়ম আজ সারাটা রাত এখানেই অপেক্ষা করবে।যদি একবার আসে!আর যদি ওকে না পেয়ে ফিরে যায়!অন্যমনস্কভাবে একটা সিগারেট ধরালো প্রিয়ম...চোখ মেলে চাইলো গেটের দিকে।রাজু দা একটা টুলে বসে-বসে ঝিমোচ্ছে!সারাদিন বেচারা গাড়ি চালায়।আবার রাতে এখানে কাজ করে।ঘুমোয় কখন!একভাবে প্রিয়ম কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো ওইদিকে...তারপর একবারে অনেকটা ধোঁয়া আকাশের দিকে ছাড়লো...
-আমাকে ছাড়াই স্মোকিং-ডেট!!
চমকে উঠে ফিরে চাইলো প্রিয়ম।দেখলো,ঝোরা ওর দিকেই এগিয়ে আসছে।আজ আকাশ তুলনামূলক পরিষ্কার,কমপ্লেক্সের আবছা ধোঁয়াটে আলোয় ঝোরাকে দেখে কেঁপে উঠলো প্রিয়ম।কোথায় গেলো ওর একঢাল চুল!!ও একভাবে চেয়ে রইলো ঝোরার দিকেই....ঝোরা এসে একেবারে ওর সামনে দাঁড়ালো।
-কি?বোবা হয়ে গেলে নাকি!!আজও কিন্তু আমি সিগারেট আনিনি।
বলেই প্রিয়মের আঙুল থেকে সিগারেটটা টেনে নিজের ঠোঁটে ঠেকালো ঝোরা...
একটু হাসলো প্রিয়ম।কি সুন্দর দেখাচ্ছে ঝোরাকে।এমনিতেই তো শরীরের গড়নটাই এমন,সহজে মেয়েটার বয়স বোঝা যায় না।এখন তো ছোট চুলে আরও মিষ্টি লাগছে।চোখ দুটো অল্প ফোলা,কাঁদছিলো মনে হয়!চোখের কোণে ধেবড়ে যাওয়া কাজল ওর সৌন্দর্যকে যেন আরও শতগুণ বৃদ্ধি করেছে।
-কি হলো?
-কি হবে?
-মানে?কিছু হয়নি?
-নাতো!!
-আমি চুল কাটিয়েছি!অন্ধ নাকি তুমি?দেখতে পাচ্ছ না?
-হুম!!তো?
-চেঁচাবে না তুমি?চুল কোথায় গেলো?কাটলে কেন?এসব বলবে না?
-কেন বলবো?তোমার ইচ্ছে হয়েছে,কেটেছো!আর সত্যি বলতে...
-সত্যি বলতে?
-ভালোই তো লাগছে!জাস্ট লাইক সুইট-সিক্সটিন!!
-হোয়াট!!বালের কথা বোলো না তো!ওই রকম বাটারিং-মার্কা কথা অনেক শুনেছি!
-সত্যি কথাই তো বললাম!এবার তুমি সেটা কিভাবে নেবে,তোমার ব্যাপার!
ঝোরা অবাক হয়ে তাকালো প্রিয়মের দিকে...
-সত্যি ভালো লাগছে আমায়?ঝোঁকের মাথায় জেদের বশে করে ফেললাম।এখন ঠিক কনফিডেন্স পাচ্ছি না।নিজেই আয়নার দিকে দেখতে পারছি না।দাদা-বৌদি বাড়িতে পা রাখার পর থেকে,চিৎকার করে আমার শ্রাদ্ধ করে ফেলছে প্রিয়ম...
-আসলে ওরা তোমায় ঠিক এভাবে দেখতে অভ্যস্ত নয় তো,তুমি নিজেও নও।একটু সময় দাও।সব ঠিক হয়ে যাবে।চেনা মানুষগুলোকে হঠাৎ করে অচেনা হয়ে যেতে দেখলে,প্রথমে মানতে একটু কষ্ট হওয়াটাই তো স্বাভাবিক ঝোরা।আমি তোমাকে আর কদিন দেখছি
বলো!তাও আমারও চোখে সইয়ে নিতে,একটু তো সময় লেগেছে।আর ওরা তো তোমায় রোজ দেখছে।ওদেরও একটু সময় দাও।সব ঠিক হয়ে যাবে।ট্রাস্ট মি ঝোরা,ভালো লাগছে তোমায়!!
আজ আর ঝোরার বলতে ইচ্ছে করলো না,
"ট্রাস্ট??তোমায়!তোমাদের!!"
বরং আজ ভীষণ বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করলো প্রিয়মকে..
-তাই?বলছো?
-হুম!!মিষ্টি লাগছে!আবেদন ব্যাপারটা তোমার মধ্যে থেকে পুরোপুরি চলে গেছে ঠিকই,কিন্তু একদম অন্যরকম লাগছে।অন্যরকম সুন্দর!!
একটু হাসলো ঝোরা...
-থ্যাঙ্কু!!
-এটা কেন?
-উমম!এমনিই!!তো,তুমি বলো...আজ সারাদিন তোমার কেমন কাটলো?
-হুম,ভালো-মন্দ মিশিয়ে...
-ভালো তো বুঝলাম,কিন্তু মন্দ কেন?
-তীর্থ ভালো নেই ঝোরা!একদম পড়ছে না।পাশ করতে পারবে বলে মনে হয় না!নিজের মুখেই বলছে!কি যে করবে ছেলেটা!!তার ওপর দাদাটা মারা যাওয়ায় এত ভেঙে পড়েছে...
-তুমি আর কি করবে বলো?
-সেই!
-ফ্রিজ?গিজার?
-ডান!সব কমপ্লিট!আমার প্যাকিংও...
বলেই ঝোরার দিকে চাইলো প্রিয়ম।
-হুম!
মনটা খারাপ হয়ে গেলো ঝোরার।কি রকম একটা লাগছে যেন!অদ্ভুত লাগছে!!কিছু একটা প্রবলভাবে টানছে ওকে,আবার সেটাই যেন হারিয়েও যাচ্ছে ওর কাছ থেকে...
প্রিয়মের দিকে চেয়ে ঝোরা দেখলো,প্রিয়ম একভাবে ওর দিকেই চেয়ে আছে।নীচের ঠোঁটটা দাঁতের দংশনে আবদ্ধ...মাথাটা নামিয়ে নিলো ঝোরা,
-আবার...
বলেই থেমে গেলো ঝোরা...
-বলো?কি আবার?
প্রিয়ম বাকিটুকু শোনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো...
-আবার কবে আসবে প্রিয়ম?
-হয়তো দোলপূর্ণিমায়...মা একটু নারায়ণ পুজো দেবে বলছে,দেখা যাক ম্যানেজ করতে পারি কিনা...
-ওঃ!সেতো দেরী আছে!
-হুম!তা তো আছে।কিন্তু এই যে দেরী,এই যে অন্তহীন অপেক্ষা,তাতে কি আমার জন্য কারোর কষ্ট হবে?
কেঁপে উঠলো ঝোরা...কিন্তু একটা শব্দও মুখ থেকে বেরোলো না ওর....প্রিয়মও চুপ করে রইলো...
-ঝোরা?
-হুম!
-যোগাযোগ রাখবে তো আমার সঙ্গে?ফোন করবে তো আমায়?আমি ফোন করলে ধরবে তো?
চোখ উপছে জল বেরিয়ে এলো ঝোরার....মুখটা ঘুরিয়ে নিলো ও..-তোমার হাতটা একবার ধরতে পারি?
নিরুত্তর ঝোরা...
-তোমার নীরবতাকে আমি সম্মতিই মনে করলাম....
প্রিয়ম এগিয়ে এসে ঝোরার একটা হাত ধরলো...
-একটু যোগাযোগ রেখো ঝোরা,প্লিজ!
-এসব কোরো না প্রিয়ম!!তুমি ভালো ছেলে।কিন্তু আমি ভালো নই,তুমি কিচ্ছু জানো না আমার সম্পর্কে।আন্টিও খুব ভালো।তুমি কষ্ট পেলে,আন্টি ভালো থাকবে না...অন্তত মায়ের মুখের দিকে চেয়ে...
-ঠিক বলেছো ঝোরা।আমি কষ্ট পেলে,আমার মা-ও ভালো থাকবে না!আর তুমি কিন্তু জানো,তুমি আমার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলে,আমি কষ্ট পাবো।আমি ওখানে কষ্ট পাবো,মা এখানে....আমি খুব কষ্ট পাবো ঝোরা...কথা দাও,আমার সঙ্গে তুমি যোগাযোগ রাখবে।কিচ্ছু চাই না,দিনের শেষে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তোমার সঙ্গে একবার একটু কথা বলতে চাই।জানো ঝোরা,তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আমার আর খুব একটা ঘুমের ওষুধ প্রয়োজন পড়ে না।আমি বিছানায় গেলেই,একটা শান্তির ঘুম আমায় জড়িয়ে ধরে চারদিক থেকে....প্লিজ!আমায় একটু শান্তিতে ঘুমোতে দাও!আমায় একটু বাঁচতে দাও!আমি আর কষ্ট পেতে চাই না।আমায় একটু ভালো থাকতে,ভালো রাখতে দাও...ঝোরা!!
বলেই ঝোরার হাতে মৃদু চাপ দিলো প্রিয়ম....
-রাত হয়ে গেছে প্রিয়ম!কিছুক্ষণ পরেই তোমার বেরোনোর সময় হয়ে যাবে।যাও,কয়েক ঘন্টা একটু ঘুমিয়ে নাও!
-নাঃ!!আজ আর ঘুমাবো না!
নিজের দু-হাত দিয়ে ঝোরার দুটো হাত ধরলো প্রিয়ম...
-প্রমিস মি,তুমি কন্ট্যাক্ট রাখবে?ঝোরা?
-হুম?
-প্রমিস মি?
-ওকে!
-থ্যাঙ্কু!মা একা থাকে।একটু পারলে,মানে যদি তোমার সময় হয় আর কি,একটু খোঁজ-খবর রেখো!
-এটা তুমি না বললেও করতাম!
-হুম!!
সেদিন সূর্যোদয়ের আগের মুহূর্ত পর্যন্তও,ঝোরার দুটো হাত প্রিয়মের হাতে বন্দী হয়ে রইলো।একইসঙ্গে ওরা সেই রাতের শেষে পরস্পরের হাতে-হাত রেখে,প্রথম সূর্যোদয় দেখলো...
ছাদের কার্নিশে কোমর ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো প্রিয়ম।একটু দূরে জলের ট্যাঙ্কগুলো যেখানে রাখা থাকে,সেখানে উঠে বসে পা দোলাচ্ছিলো ঝোরা।
-এবার যেতে হবে ঝোরা!আর সময় নেই!হাতে একটু সময় নিয়ে বেরোতে হবে।ফ্লাইট বিফোর-টাইম থাকলে....
-সেফ জার্নি!
-হুম!!ঝোরা শোনো...
প্রিয়ম হাত বাড়িয়ে দিলো ঝোরার দিকে...
-কি?
ঝোরা প্রিয়মের এগিয়ে দেওয়া হাতে হাত রাখলো।
-এবার কানে ইয়াররিং-এর সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে,নাকের মাঝে একটা ম্যাট-সিলভার নোজ-পিন পরো!তোমার এখনকার লুকের সঙ্গে ওটা খুব ভালো যাবে!!চাইলে ট্যাটুও করো!আমি জানি,তুমি হয়তো তোমার এই লুকটাকে এখনও ঠিকমতো ক্যারি করতে পারছো না।কনফিডেন্ট নও।তাই হয়তো এসব ভাবোনি,পরে ভাববে।আমি এমনিই বললাম,জাস্ট আ সাজেশন!আসলে লুক চেঞ্জ করার সঙ্গে-সঙ্গে একটু জুয়েলারীও পরিবর্তন করলে,পুরো ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগে দেখতে,আরও প্রমিসিং লাগে...আমার কথা শোনার দরকার নেই।জাস্ট একটা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে পারো।ভালো না লাগলে,তোমার যেটা মন চায়,সেটাই কোরো।আমার মনে হলো,তাই বললাম আর কি....
অবাক হয়ে গেলো ঝোরা!কানে একগাদা দুল,নাকের বড় নোজ-পিন,বয়েজ-কাট চুল,চুলে সাংঘাতিক উগ্র রং,ট্যাটু....এগুলোও কি কারোর পছন্দের তালিকায় পড়তে পারে!!এসব করতে বারণ করার মতো মানুষ ও জীবনে অনেক দেখেছে।কিন্তু কেউ যে এসব করতেও বলতে পারে,এই অভিজ্ঞতা ঝোরার প্রথম হলো!আগে ট্যাটু দেখাতে গেলে পিঠের চুল সরাতে হতো।আজ আর সেসব ঝামেলা নেই।প্রিয়মের দিকে পিছন করে ঘুরে দাঁড়ালো ঝোরা....জামাটা একটু নীচের দিকে টেনে ধরলো,ঘাড়ের কাছের ট্যাটুটা বেরিয়ে এলো সেই মুহূর্তেই...
-কি দেখলে প্রিয়ম?
-দুটো সাপ একে-অপরকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রয়েছে...ওদের সঙ্গমের একটা সুন্দর মুহূর্ত...
-হুম!সুন্দর না?
-খুব সুন্দর!!
-জাস্ট শখেই এটা করেছিলাম,বৌদি এত অশান্তি করেছে,কি আর বলবো!চুলটা কেন কাটলাম জানো?
-কেন?
-পাত্রপক্ষ খেদাতে!
-মানে?
-মানে বিয়ের প্রপোজাল আসছিলো।কি দেখে?না আমার রূপ,আর আমার চুল!আমার কোনো খোঁজ-খবর নেওয়ার প্রয়োজনই নেই।ছেলের মা আমায় নিয়ে গিয়ে,ছেলের ভোগের জন্য সিংহাসনে সাজিয়ে রাখবে।নিজের মুখে নিজের হাতে এসিড মারার তো আর ক্ষমতা নেই,সত্যি বলতে সাহসই নেই।তবে চুলটা সমূলে ওড়ানোর মতো স্পর্ধা রাখি।ব্যাস!দিলাম উড়িয়ে!
অবাক হয়ে গেলো প্রিয়ম।কেঁপে উঠলো ওর বুকের ভিতরটা।কতটা দুঃসাহস আর মনের জোর থাকলে,প্রতিবাদ কতটা তীব্রতম হলে,এই সামান্য একটা কারণে,নিজের এত বছরের শখকে এক মুহূর্তে গলা টিপে খুন করা যায়!!
-হুম!যে কারণেই করো না কেন,তোমায় খুব ভালো লাগছে দেখতে...আর যদি আমার সাজেশন মানো,তাহলে তোমার একটা ছবি পাঠিও।আমিও দেখবো,আমার ধারণা ঠিক ছিলো,নাকি ভুল!!
-হুম!অবশ্যই!
-চলো!টাটা ঝোরা!!
-কখন বেরোবে?
-এই কিছুক্ষণের মধ্যেই...
-বেরোবার আগে আমায় একবার ফোন করবে!
-আচ্ছা!করবো!বাই!!নিজের খেয়াল রেখো!
-হুম!তুমিও...
-নীচে নামবে না ঝোরা?
-যাচ্ছি,একটু পরে!
-আচ্ছা!
একেবারে দরজার সামনে গিয়েও একবার ঘুরে তাকালো প্রিয়ম।তখনই ও দেখলো,ঝোরা সবে চোখটা মুছতে যাচ্ছিলো,কিন্তু ওকে ঘুরতে দেখেই হাতটা সরিয়ে নিলো চোখ থেকে।বুকটা চিনচিন করে ব্যথা করে উঠলো প্রিয়মের।একটু হেসে নীচে নেমে গেলো ও...
প্রিয়ম নীচে নেমে গেলে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া অবাধ্য জলটুকু মুছে নিলো ঝোরা।একবার মাত্র চাইলো মাথার ওপরের খোলা আকাশের দিকে....তারপর চোখটা বন্ধ করে নিঃশব্দে কেঁদে ফেললো ও...
নীচে নামার পর থেকেই নিজের বিছানা আঁকড়ে পড়ে রয়েছে ঝোরা।একটু পরেই বেজে উঠলো ওর ফোনটা...লাফিয়ে উঠে ফোন ধরলো ঝোরা,
-বলো?
-বেরিয়ে যাচ্ছি!
-আচ্ছা!সাবধানে এসো!
-হুম!
ফোন রেখেই ঝোরা ছুটলো ছাদের দিকে...কেউ কোত্থাও নেই।একদম ফাঁকা রাস্তা।রাতের ডিউটির সময়সীমা শেষে রাজু দা লম্বা একটা ঝাঁটা দিয়ে,বড় গেট থেকে পার্কিং পর্যন্ত জায়গাটা ঝাঁট দিচ্ছে।কাকা সবে এসে দাঁড়ালো ওইখানে।এবার দুজন মিলে চা খেতে যাবে।এই সময়টা গেট কিছুক্ষণের জন্য ফাঁকা থাকে।তারপর কাকা থাকবে,রাজু দা বাড়ি চলে যাবে।সারারাতের ডিউটি শেষে রাজু দার চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।চলে যাওয়ার সময় তো তারও হয়ে গেছে।ঝোরার চোখে বারবার জল এসে যাচ্ছে!একটু পরেই ও ওপর থেকে দেখলো,একটা সাদা গাড়ি এসে দাঁড়ালো ওইখানে।ওদের পার্কিংয়ের ভিতর থেকে প্রিয়ম আর আন্টি বেরোলো।প্রিয়মের হাতে একটা বড় ট্রলি।টেনে নিয়ে যাচ্ছে ও,আর কাঁধের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে একটা ছোট ব্যাগ রয়েছে।গাঢ় লালচে একটা গেঞ্জির সঙ্গে কালো একটা জ্যাকেট মতো পরেছে ও।একেবারে গেটের সামনে গিয়ে,মাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়ম।সেই মুহূর্তেই ঝোরার বুকের ভিতরটা কি ভীষণ কষ্টে হু-হু করে উঠলো।চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে ওর।কি ভীষণ কষ্টে আজ বারংবার চোখে জল এসে যাচ্ছে....দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়েই কেঁদে ফেললো ঝোরা...
মেয়েটা বারবার করে বেরোনোর আগে ফোন করতে বললো কেন!!একবার মাত্র বারো তলার জানলার দিকে তাকালো প্রিয়ম,যদি ওই জানলায় বা বারান্দায় সে থাকে!কিন্তু কোত্থাও কেউ নেই।মাথা ঘুরিয়ে নিয়েও বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠলো প্রিয়মের।ছাদে কে দাঁড়িয়ে রয়েছে!!গাড়ির হাতল খুলেও কয়েক মুহূর্ত ওইদিক থেকে চোখ ফেরাতে পারলো না প্রিয়ম।ছেলের দৃষ্টি লক্ষ্য করে অপর্ণাও একবার ওইদিকে দেখলো।একবার ঝোরাকে দেখে,আর একবার নিজের ছেলের মুখের দিকে চেয়ে,মাথা নামিয়ে নিলো ও...
ছাদের দিকে চোখ রেখেই প্রিয়ম বললো,
-মা আসছি!
-হুম!সাবধানে আয় বাবা!
গাড়িতে ঢুকে দরজাটা টেনে সশব্দে বন্ধ করে দিলো প্রিয়ম।ড্রাইভার ট্রলিটা গাড়ির পিছনে রেখে নিজের জায়গায় গিয়ে বসলো।মায়ের দিকে চেয়ে হাত নেড়ে,শেষ একবার ছাদের দিকে দৃষ্টি-নিক্ষেপ করে,তাকে দেখার ইচ্ছেটুকু পূরণ করে নিলো প্রিয়ম।তারপর গাড়িটা ধীরে-ধীরে বেরিয়ে গেলো দৃষ্টিসীমার বাইরে...
ছেলে বেরিয়ে যেতেই অপর্ণা পার্কিংয়ের দিকে ফিরে আসতে গেলো।একবার মাথা তুলে ও চাইলো ছাদের দিকে।সে আর ওখানে দাঁড়িয়ে নেই।শুন্য ছাদ!কেবল মাথা উঁচু করে প্রাণহীন দৈত্যের মতো বড়-বড় জলের ট্যাঙ্কগুলো,একাকী দাঁড়িয়ে রয়েছে....
এক্ষুণি নীচে নামতে পারছে না ঝোরা।দুচোখ ভেঙে জল আসছে ওর।নিজেকে সামলানোর জন্য একটু সময় নিতে হবে।আজ বারংবার কাজলের কালির সঙ্গে চোখের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে....চোখের কোলের ওই কাজলের কালিতেই বন্দী করে রাখতে ইচ্ছে করছে,বিগত দুটো অন্ধকার রাত্রি....
ছাদের কোণে বসে পড়লো ঝোরা।সুদূরপ্রসারী সুনীল আকাশের দিকে একভাবে চেয়ে রইলো ও...একটু পরেই ওই আকাশের বুক চিরেই উড়ে যাবে একটা উড়োজাহাজ,যার মধ্যে বসে প্রিয়ম প্রতি মুহূর্তে ঝোরার কাছ থেকে সরে যাবে অনেকটা দূরে....
ঝোরার উন্মুক্ত চোখের এককোণ থেকে,একবিন্দু জল গড়িয়ে পড়লো....
(চলবে...)
উপন্যাসটি আংশিকভাবে (প্রথম দশটি পর্ব) প্রকাশিত হবে। সংগ্রহে রাখতে whatsapp করতে পারো পাঠকবন্ধুর নম্বরে - 7439112665
এছাড়াও পাওয়া যাবে flipkart ও amazon এও।
বাংলাদেশ থেকে পাওয়া যাচ্ছে: Indo Bangla Book Shop - +880 1556-436147
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন