সূর্যোদয়ের আগে
সাথী দাস
তৃতীয় পর্ব
-শোন!একদম সময়মতো চলে আসবি!আর যেটা বললাম,সবটা বলবি দাদা-বৌদির সামনে!একটু এদিক-ওদিক হলে বেরিয়ে গুছিয়ে একটা লাথি মারবো।আমি আগে থেকেই ওদের একটু বলে রাখবো।
-এসব আর কতদিন ঝোরা?
-তুই আর কি বুঝবি?তোর তো সালা রেডিমেড বয়ফ্রেন্ড আছে!এনিটাইম...
-বালের কথা বলিস না,তুই চাইলে যে এখনই অরিত্র তোর পায়ে এসে পড়বে,সেটা তুই নিজেও খুব ভালো করে জানিস!কেন ঝুলিয়ে রেখেছিস ছেলেটাকে?বিয়ে করে নে না!
-সোহিনী!যেটুকু বললাম,সেটুকুই করবি!বেশি জ্ঞান মাড়াতে আসিস না!আমি যাই,বার্থডে পার্টির জন্য রেডি হই!টাটা!
-যা পারিস কর,হারামি মর তুই!!
সোহিনীর কথা শুনে হেসে ফোনটা রেখে দিলো ঝোরা।স্কুটি গ্যারেজে ঘুমোচ্ছে,ফোন করাতে ছেলেটা সেই সকালেই নিয়ে গেছে।কবে দেবে কোনো ঠিক নেই।বেশ অনেকটাই বেলা হয়ে গেছে।সকালে স্কুটিটার জন্য একবার মাত্র বিছানা ছেড়ে উঠে নীচে নেমেছিলো ঝোরা।তারপর আবার বিছানায় এসে শুয়ে পড়েছে।স্কুটি নেই,কিন্তু তাও আজ ওকে যেভাবেই হোক,একটু বেরোতেই হবে।কাল বমি করে-করে ঝোরা উল্টে পড়েছিলো বাথরুমে।মাথাই তুলতে পারছিলো না সকাল থেকে।দাদা-বৌদি দুপুরের একটু পরেই বাপেরবাড়ি থেকে চলে আসবে।এবার ওকেও দুপুরেই বেরোতে হবে।তাই ওদের মুখের সামনে দিয়ে বেরোনোর জন্য,বেশ জোরালো একটা কারণ চাই।অগত্যা সোহিনী ভরসা...বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো ঝোরা...বাথরুমে ঢোকার আগে একটা বাটিতে গুলে নিলো একটু ফেস-প্যাক!তারপর ঢুকলো বাথরুমে...
-তুই যাচ্ছিস তাহলে?ছেলেটাকে সাবধানে নিয়ে যাস!
-হুম,আছি যখন ওর সঙ্গে একটু যাই।আমি এলেই দিনরাত তো ছেলেটা এখানেই পড়ে থাকে,এইসময় ওকে একা ছেড়ে দেওয়া যায়?কাকু-কাকিমা সঙ্গে থাকলে তাও আলাদা ব্যাপার ছিলো!একা-একা যাবে বলছে!তোমার চিন্তা নেই মা!দেখি,ওদিকে কি হয়,আমি পৌঁছে তোমায় ফোন করবো।জানাবো সব পরিস্থিতি...
-সাবধানে যাস!বাইকটা নিবি তো স্টেশন পর্যন্ত?
-নাঃ!!এটুকু বাসেই চলে যাই!ওখান থেকে তো ট্রেনে যাবো!তীর্থকে একেবারে স্টেশনেই চলে যেতে বলেছি।আবার বাইক সারাদিনের জন্য কোথায় রাখবো না রাখবো....
-আচ্ছা ঠিক আছে।যেটা ভালো বুঝিস কর!!কিন্তু তুই ওর সঙ্গে যোগাযোগ করবি কিভাবে?কোথায় থাকবে ও!!
-কাকিমার ফোনটা বাড়িতে রেখে গেছে।ওটা থেকেই তো আমায় ও সকালে ফোন করলো...
-আচ্ছা!যা...বেশি সামনে যাস না কিন্তু পাপাই...রক্তারক্তি কোনো ব্যাপার থাকলে তোর আবার...
-জানি মা!!আমি সেসব বুঝেই এগোবো!আমি তো শুধু তীর্থর সঙ্গে থাকতে যাচ্ছি!আর তোমার কি মনে হয়,এতক্ষণ কি পেশেন্টকে ব্যান্ডেজ না করে খুলে ফেলে রাখবে!!আমি গিয়ে ফোন করবো বলছি তো,প্লিজ তুমি এত চিন্তা কোরো না...
-হুম!
ঘর থেকে বেরিয়ে এলো প্রিয়ম।ওদের ফ্লোরে প্রিয়মদের নিয়ে মাত্র তিন-চারটে পরিবার থাকে।এখনও পুরোপুরি জনবহুল হয়নি রামধনু এপার্টমেন্ট।ওপরের বেশিরভাগ সব ফ্ল্যাটই ফাঁকা।একমাত্র নীচের দুটো তলাতেই সবকটা ফ্ল্যাটে লোক থাকে।ঝোরা তো কাল রাতেই বলছিলো,ওদের ফ্লোরে একটা ফ্ল্যাটেই ভাড়া ছিলো একটা পরিবার।গত মাসে তারা আবার উঠেও গেছে।তেরো তলা এপার্টমেন্টের বারো তলায়,আপাতত ওরাই একমাত্র বাসিন্দা।আজ লিফটে ওঠার পর আটতলার একজন দাদার সঙ্গে আলাপ হলো প্রিয়মের,অভ্র দা।পেশায় চাকুরিজীবি,বিবাহিত,একটি পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়েও আছে।প্রতিবেশী হিসেবে ফোন নম্বরটাও
আদান-প্রদান করে নিয়েছে প্রিয়ম।যতই হোক,এইরকম একটা পাণ্ডববর্জিত জায়গায় মাকে একা ফেলে রেখে যেতে হবে,তাই ও যাওয়ার আগেই একটু আশেপাশের খোঁজখবর ভালোভাবে নিয়ে রাখছে।যাতে কোনো কারণে ফোনে মায়ের খবর না পেলে,আশেপাশের কাউকে একটু ফোন করা যায়...স্বল্প-পরিচিত অভ্র দার সঙ্গে কথা বলতে-বলতে নীচে নেমে এলো প্রিয়ম...উনি বেরিয়ে চলে গেলেন উল্টোদিকের রাস্তায়...প্রিয়ম একটু এগিয়ে এসে একটা ফাঁকা যাত্রী-প্রতীক্ষালয়ে দাঁড়ালো বাসের জন্য...
-আমি সবে বেরোলাম তীর্থ,তুই কোথায়?ঠিক আছে।সব ঠিক হয়ে যাবে।মন খারাপ করিস না,আমি পৌঁছে যাবো কিছুক্ষণের মধ্যেই...তুই স্টেশনের বাইরেই অপেক্ষা...
ফোনে কথা বলতে-বলতে কথা বন্ধ হয়ে গেলো প্রিয়মের।ও দেখলো,একটু দূরেই রাস্তার একদম কোণা ঘেঁষে একটা স্কুটি এসে দাঁড়ালো।স্কুটির পিছন থেকে একলাফে নামলো ঝোরা।সামনে সেদিনের সেই মেয়েটাই বসে রয়েছে...ওর হাতে নিজের ব্যাগটা ধরিয়ে দিলো ঝোরা।তারপর দু-হাত তুলে গা থেকে টেনে খুলে ফেললো টপটা...সাংঘাতিক ভাবে চমকে উঠে মুখ ফিরিয়ে নিলো প্রিয়ম...
-তীর্থ,ভাই আমি তোকে একটু পরে ফোন করছি।ইনফ্যাক্ট পৌঁছে যাচ্ছি তাড়াতাড়িই...
ফোন রেখে দিলো প্রিয়ম।আবার একবার ফিরে চাইলো ওইদিকে...দেখলো,সুন্দর সুতোর নকশা করা জামাটার নীচে জিন্স আর টপ পরে রয়েছে ঝোরা।ওপরের ঢলঢলে পোশাকটার কারণে,ভিতরের পোশাকটা একেবারে বোঝাই যাচ্ছে না...অবাক হয়ে গেলো প্রিয়ম,ও হাঁ করে ওইদিকে চেয়ে রইলো।এত গোপনীয়তা কিসের জন্য!!
-থ্যাঙ্কু!!থ্যাঙ্কু!!থ্যাঙ্কু সোহিনী।আমাকে বের করে দেওয়ার জন্য।মানে কিছু একটা স্ট্রং-রিজন না হলে বেরোতেই পারছিলাম না আজ!নেহাত তুই আছিস,আমার অসময়ের সহায়,তাই শ্রেয়ার জন্মদিন বলে বেরিয়ে আসতে পারলাম...
জামাটা মুড়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলো ঝোরা...
-তোর ফেক-বার্থডে পার্টির জন্য আমাকেও দিনদুপুরে সেজেগুজে আসতে হলো।উফফ!অসহ্য একেবারে!!
সোহিনী বিরক্ত হয়ে বললো...
-এটুকু তো কর সোনা আমার জন্য...নইলে আর কি বেস্টফ্রেন্ড হলি!!
-হ্যাঁ-হ্যাঁ ঠিক আছে...এবার একটু সেটেল হওয়ার চেষ্টা কর তো।অবশ্য তোকে বলা আর দেওয়ালকে বলা সমান।তুই কোনদিন কার কথা শুনেছিস!!যা ভালো বুঝিস কর!চল বাই!আমি এলাম!!
-ওকে টাটা!!
সোহিনী স্কুটি ঘুরিয়ে চলে গেলো উল্টোদিকের রাস্তায়...
ঝোরা এগিয়ে এলো স্ট্যান্ডের দিকে...
-প্রিয়ম?হাই!
ঝোরা হাসিমুখে এগিয়ে গেলো প্রিয়মের দিকে...
-হাই!!
-তুমি এখানে দাঁড়িয়ে?আমার স্কুটি তো হাওয়া খেতে গ্যারেজে গেছে।কিন্তু তোমার বাইক কোথায়?
-না আসলে এবারের গন্তব্য একটু দূরে।তাই ট্রেনেই যাবো।স্টেশনের দিকে যাবো,বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি...
-আরে আমিও তো স্টেশনেই যাবো।অবশ্য মাত্র দুটো স্টেশন।আমার গন্তব্য খুব বেশিদূর নয়!তুমি কোনদিকে যাবে?
-আসলে আমি ঠিক জানি না।আমার একজন পরিচিত স্টেশনে দাঁড়াবে।সে আমায় নিয়ে যাবে।কোনদিকে যাবো,কতটা সময় লাগবে,আমার না খুব একটা আইডিয়া নেই।তার মামার ছেলে গতকাল রাতে বাইক একসিডেন্ট করেছে।গতকালই খবর পেয়ে তার বাবা-মা বেরিয়ে গেছে সেখানে।আজ অবস্থা আরও ক্রিটিক্যাল হওয়ায়,এবার সেও যাবে দাদাকে দেখতে।তাই একটু তার সঙ্গে যাওয়া আর কি!!আসলে আমায় খুব ভালোবাসে ছেলেটা...এই অবস্থায় ওকে একা-একা ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করলো না।আছিই যখন,আর খবরটা নিজেই জানালো যখন,সেখানে...
-ওকে!আই উইশ,সে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাক!
-ডাউটফুল!!
-সেকি!!
-হুম!কুড়ি বছরের ছেলে!তীর্থর চেয়ে সামান্যই বড়।বন্ধুর বাইক হাতে পেয়ে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে উড়িয়েছে।শুনছি তো ভীষণ বাজেভাবে একসিডেন্ট করেছে।দেখা যাক...
-ইস!!
-তুমি কতদূর?
-আমি এই একটু...প্রিয়ম এগিয়ে এসো!বাস এসে গেছে!
-বাবা বাসে ভালো ভিড় তো!
-হুম!অনেকক্ষণ পর-পর আসে তো!তুমি কি আসবে?নাকি পরেরটার জন্য দাঁড়াবে?টাইম লাগবে কিন্তু।দেখো কি করবে!নইলে আমি বেরোলাম!
-নাঃ!চলো বেরিয়েই যাই!কতক্ষণ আর দাঁড়াবো?ওদিকে ছেলেটা এসে দাঁড়িয়ে থাকবে আমার জন্য....
ঝোরা আর প্রিয়ম দুজনেই উঠে পড়ে ভিড় বাসে...
ওরা ওঠামাত্রই বাসটা চলতে শুরু করে দেওয়ায় নিজেকে ঠিক সামলাতে পারে না ঝোরা।সোজা গিয়ে পড়ে একজন বয়স্কা মহিলার ওপরে..
-সো সরি!আমি মানে...দাঁড়াতেও পারিনি ঠিকমতো...
-নানা!ঠিক আছে।তুমি বরং একটু ভিতর দিকে ঢুকে দাঁড়াও...
-হুম!থ্যাঙ্কু...
ভিড়ের মধ্যে নিজেকে একটু সামলে সামনের দিকে এগোতেই,একটা চিৎকারের শব্দ শুনতে পেলো ঝোরা।সবটুকু কানে না এলেও মেয়েলি কণ্ঠের চিৎকারের পর ও যেটুকু শুনলো,তাতে ভিড় ঠেলে ওইদিকে এগোতে একরকম বাধ্যই হলো ও...
-মেয়ে দেখলেই গায়ে পড়ার সুযোগ খোঁজেন আপনারা।খুব ভালো করে জানা আছে আপনাদের স্বভাব-চরিত্র!সরে দাঁড়ান!গায়ে পড়বেন না একদম!!
-দেখুন ম্যাডাম,সরি!!আমি ইচ্ছে করে...
-আগে সরে দাঁড়ান আপনি!
-আমি কোথায় সরবো ভিড়ে?আমি উঠেই দাঁড়ানোমাত্রই বাসটা চলতে শুরু করলো,হঠাৎ করে ব্যালেন্স রাখতে পারিনি তাই...
-আপনি আগে সরে দাঁড়ান...নোংরামি করে আবার গলাবাজি করছেন!!
মাথা নামিয়ে নিলো প্রিয়ম।একবার মাত্র আশেপাশের কয়েকটা উৎসুক মুখের দিকে চাইলো ও।সামনে উপস্থিত প্রায় প্রত্যেকটা মুখই বাঁকা চোখে ওকেই দেখছে!সেটাই স্বাভাবিক!লজ্জায়-অপমানে কান গরম হয়ে গেলো প্রিয়মের।আর কথা না বাড়িয়ে ও চুপচাপ মাথা নামিয়ে নিলো...
সামনের মেয়েটা তখন নামার জন্য সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে...
প্রাণপণে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে পিছনের ভিড় ঠেলে রেখেও,মেয়েটার শরীর থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে প্রিয়ম।
হঠাৎ করে প্রিয়ম দেখলো ওর ডান হাতটা কেউ টেনে ধরলো...ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো,ঝোরা ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।ওকে একরকম টেনে-ঠেলে পিছন দিকে সরিয়ে দিয়ে মেয়েটার পিছনে এসে দাঁড়ালো ও নিজে...
নামেই সদ্য তৈরী হওয়া রাস্তা।জায়গায়-জায়গায় গর্ত।নাচতে-নাচতে বাসটা চলাকালীন মেয়েটাই এবার একটু সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।সুযোগটাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে ঝোরা কিছুটা ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত জোরে মেয়েটার ওপরে গিয়ে পড়লো।
-আজব তো!একটা কথা একবার বললে...
মেয়েটা সোজা ঘুরে দাঁড়ালো পিছন দিকে...ঘুরেই থমকে গেলো ও।দেখলো,ওর পিছনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।আর আগের ছেলেটি তার পিছনে দাঁড়িয়ে।অপ্রস্তুত হয়ে চুপ করে গেলো ও...
উনি চুপ করতেই এবার ঝোরা নিজ-রূপ ধারণ করলো,
-আপনি এগোননি?আপনিও তো এক ইঞ্চি হলেও মুভ করেছেন বাসের ঝাঁকুনিতে!করেননি?আপনার আগের জন কি আপনাকে চিবিয়ে খেতে এসেছে সেইজন্য?
-কি ফালতু কথা বলছেন আপনি...
-চুপ!একদম চুপ!ন্যাকামি করে সিম্প্যাথি আদায় করার চেষ্টা করবেন না!আমিও একটা মেয়ে।তাই কোনটা ইচ্ছাকৃত আর কোনটা অনিচ্ছাকৃত,সেটা কিন্তু আমরা খুব ভালো ভাবেই বুঝি!অতিরিক্ত ন্যাকামি করে কাউকে এভাবে পাবলিক প্লেসে অপমান করার আগে,দুবার ভাববেন!এত সমস্যা নিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে না উঠে,প্রাইভেটে গেলেই তো পারেন!তা হলেই আর কারোর গায়ে-গা ঠেকবে না!উনি হঠাৎ করে আপনার গায়ে এসে পড়া ছাড়া,কোথাও কি ছুঁয়েছে আপনাকে?
মেয়েটার চোখে-চোখ রেখে ঝোরা সটান প্রশ্ন করে বসে।মেয়েটা ঝোরার এমন ঠোঁটকাটা প্রশ্নে অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে পড়লো...
-যত্তসব ফালতু ঝামেলা!!
পিঠ বাঁচিয়ে ভিড় ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো মেয়েটা...
উনি এগিয়ে যেতে ঝোরা ওনার জায়গাটায় একটু ভালোভাবে দাঁড়িয়ে একবার মাত্র চেয়ে দেখলো প্রিয়মের মুখের দিকে।ও মাথা নামিয়েই রেখেছে...আর কিছু বললো না ঝোরা...
-প্রিয়ম?
বাস থেকে নেমে স্টেশনের দিকেই ওরা দুজন হাঁটছিলো,প্রিয়ম তখন থেকে আর একটাও কথা বলেনি।এবার ঝোরার ডাকে সাড়া দিলো ও,
-হুম!
-মুখ না খুললে বাঁচতে পারবে না কিন্তু!পিষে দিয়ে বেরিয়ে যাবে লোকে।বিনা দোষেই মার খেয়ে যাবে রাস্তাঘাটে...
-কি বলতাম বলো?সবাই যেভাবে আমার দিকেই চেয়েছিলো...ঝোরা,তুমি বিশ্বাস করো...
-আমি জানি!আমায় বোঝাতে হবে না!কার ক্ষমতা কতদূর,সে আমার ভালোভাবে জানা আছে...তেমন কেউ হলে আমিও এগোতাম নাকি!!প্রথমে উঠে আমিও তো ঠিকমতো দাঁড়াতে পারিনি।একজন মহিলা বসেছিলো,সোজা তার পায়ের ওপর গিয়ে পড়েছিলাম।কই!উনি কি তেড়ে এসেছেন!আসলে সব টিপিক্যাল মাইন্ডসেট হয়ে গেছে,পুরুষ হলে সবটাই ইচ্ছাকৃত!!কি আর বলবো!!ছাড়ো!বাদ দাও ওসব,তুমি আপসেট হয়ো না!ইটস ওকে!!কোনো ব্যাপার না এসব।রাস্তাঘাটে এসব দেখতে-দেখতে চোখ পচে গেছে!তুমি দেখো,তোমার জন্য যার আসার কথা ছিলো,সে কোথায়?
-তোমার তাড়া থাকলে তুমি বেরিয়ে যাও ঝোরা।আমি দেখে নিচ্ছি!
-ওকে!আর ইউ শিওর?মুড একটু ঠিক হয়েছে তো তোমার?
-হুম!!
-ওকে!!আমি তাহলে এলাম!বাই...
আর পিছন ফিরে তাকায় না ঝোরা।তাড়াতাড়ি করে এগোতে যায় সামনের টিকিট কাউন্টারের দিকে...
-ঝোরা??
প্রিয়মের চিৎকার শুনে ঘাড় ঘোরায় ঝোরা।
-কি?কিছু বলবে?
-থ্যাঙ্কু!
হেসে ফেলে ঝোরা হাত নাড়লো,
-বাই প্রিয়ম!সেফ জার্নি!
সিঁড়ি দিয়ে উঠে কাউন্টারের ভিতরে ঢুকে গেলো ঝোরা।প্রিয়ম সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ধরলো,
-তীর্থ!কোথায় রে তুই?এই তো আমি এই কাউন্টারের সামনেই...
টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে ফোনটা জিন্সের পকেট থেকে বের করলো ঝোরা,
-হ্যালো অরি?আমি জাস্ট স্টেশনে ঢুকলাম...আর বলিস না,সকাল থেকেই একরকম ঘুমিয়ে কাটিয়েছি।স্কুটিটাও কাল থেকে বিগড়েছে...অগত্যা এই দুটো স্টেশন ট্রেনেই চলে যাই।তুই একটু পরে বেরো বুঝলি।আমার পৌঁছতে একটু দেরি হবে...কথা বলতে-বলতে একেবারে টিকিট কাউন্টারের সামনে পৌঁছে যায় ঝোরা...
-হ্যাঁ জানি-জানি!!দাঁড়া!আজ আসি একবার...ওই অরি,ট্রেন ঢুকছে বোধহয়,রাখছি!!বাই!
লাইনটা কেটে ফোনটা পকেটে রেখেই ঝোরা ভাবলো,কি ট্রেন আসছে?কিছুই তো ঘোষণা করলো না!বা হয়তো ও প্ল্যাটফর্মে ঢোকার আগেই বলে দিয়েছে।যে ট্রেনই হোক না কেন,ওর কোনো মাথাব্যথা নেই।যাবে তো দুটো মাত্র স্টেশন!ট্রেনের ব্যাপারে পাশের দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রমহিলাকে সবে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলো ঝোরা,অতর্কিত একটা চিৎকারে কেঁপে উঠলো ও।সবাই একটা নির্দিষ্ট জায়গার দিকে দৌড়োচ্ছে দেখে ঝোরাও একটু পায়ে-পায়ে এগিয়ে গেলো ওইদিকে...ট্রেনটা ততক্ষণে পুরোপুরি ঢুকে গেছে স্টেশনে,কিন্তু থামলো না,ঝড়ের বেগে সোজা বেরিয়ে গেলো।ঝোরা দেখলো,ওটা প্যাসেঞ্জার ট্রেন নয়।ট্রেনটা বেরিয়ে যাওয়ার আগে পিছনে ফেলে এসেছে মর্মান্তিক এক দৃশ্য!একটা বয়স্ক লোকের হাঁটু থেকে কাটা-পা লাইনের ওপর পড়ে রয়েছে,আর বাদবাকি শরীরটা লাইনের পাশে পড়ে সাংঘাতিক ভাবে দাপাচ্ছে।কাটা পা-টা উরুর কাছ থেকে চেপে ধরে বীভৎসভাবে চিৎকার করছে লোকটা...প্যান্ট ছিঁড়ে-ফেঁসে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে জায়গাটায়,লোকটা ভয়ঙ্কর দাপাচ্ছে,যেকোনো মুহূর্তে অজ্ঞান হয়ে যাবে...চারপাশে কতগুলো শাক-সব্জি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।সবাই মিলে ওনাকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে।ঘটনার বীভৎসতায় গা-টা গুলিয়ে উঠলো ঝোরার।কেঁপে উঠলো ও...কয়েকজন আবার একটু দূরেই একজনকে ধরে-ধরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেখে,লাইনের ওপর পড়ে থাকা লোকটাকে ছেড়ে ওইদিকেই একবার তাকালো ঝোরা।জামার রংটা দেখেই চমকে উঠলো ও।ভিড় ঠেলে ঝোরা একদৌড়ে ছুটলো ওই দিকে...
কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই স্টেশনের বসার জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো ও...যেখানে নিয়ে গিয়ে বসানো হয়েছে ওই দ্বিতীয় মানুষটিকে...
সামনের লোকগুলোকে ঠেলে সরিয়ে একেবারে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ঝোরা,
-এই প্রিয়ম!এই,কি হয়েছে তোমার?প্রিয়ম!!
ঝোরা দেখলো,প্রিয়ম ঘেমে একেবারে অস্থির হয়ে গেছে।কথা বলার মতো শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই ওর মধ্যে!একটা অল্পবয়সী ছেলে ওর সঙ্গে রয়েছে।ওকেও দিশেহারা লাগছে...
কেউ একজন ব্যাগ থেকে একটা জলের বোতল বের করে দিয়েছে।সেটা হাতে নিয়েই ঢাকনা খুলে কিছুটা জল প্রিয়মের মাথায় ঢেলে দিলো ঝোরা।সেই মুহূর্তেই প্রিয়মের গা গুলিয়ে উঠলো।দৌড়ে গিয়ে স্টেশনের এক কোণে লোহার রেলিংয়ের পাশে হড়হড় করে বমি করে ফেললো ও।ঝোরা একদৌড়ে ওর সঙ্গে গিয়ে,টেনে ধরে রইলো ওকে...তীর্থও এসে দাঁড়ালো ওর পাপাই দার পাশে।জড়িয়ে ধরলো পাপাই দাকে...
ততক্ষণে প্রিয়মের কাছে ভিড় একটু হালকা হয়ে এসেছে।সবাই ছুটছে ওই ট্রেনলাইনের দিকেই...হাতের বোতলটা ঝোরা ওই সহৃদয় ভদ্রলোককে ফেরত দিতে গেলে উনি "থাক!আপনি রেখে দিন ম্যাডাম।আবার যদি লাগে!" বলেই ছুটলেন ওইদিকে...
ঝোরা বোতল হাতে নিয়ে এগিয়ে গেলো প্রিয়মের দিকে।
-প্রিয়ম?একটু ভালো লাগছে এখন?
-নাঃ!ভীষণ শরীর খারাপ লাগছে আমার...অস্থির লাগছে!
ঝোরা দেখলো,প্রিয়মের জামা ঘামে ভিজে গায়ের সঙ্গে লেগে গেছে!
-আচ্ছা দাঁড়াও,দেখছি আমি...
সেই মুহূর্তেই বেজে উঠলো তীর্থর পকেটে থাকা ফোনটা।ও তাড়াতাড়ি ফোনটা ধরলো,
-হ্যাঁ মা?বলো....কখন!
প্রিয়ম একবার মাত্র ঘোলাটে দৃষ্টিতে চাইলো ওর দিকে।তীর্থও ওর দিকে অসহায়ভাবে চাইলো।তারপরই মাথা নামিয়ে নিলো।
-আমি আসছি!রাখছি!!
ফোনটা রেখে দেয় তীর্থ।
-তীর্থ,কখন?
-মিনিট দশেক আগে পাপাই দা!
গলাটা একটু কেঁপে উঠলো তীর্থর,কান্নায় বুজে এসেছে।একটাও কথা বেরোচ্ছে না আর...একেবারে পিঠোপিঠি দুই ভাই ছিলো ওরা,মাত্র কয়েক বছরের ছোট-বড়।আগে স্কুলের প্রত্যেকটা লম্বা ছুটিতে ঊর্ধ্বশ্বাসে মামাবাড়ি ছুটতো তীর্থ।একবার গিয়ে পৌঁছতে পারলেই,একছুটে মাঠে।সবুজ গালিচা পাতা মাঠে একসঙ্গে ফুটবল খেলা থেকে শুরু করে,ধানক্ষেতের আল ধরে হেঁটে যাওয়া,পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ততক্ষণ পর্যন্ত সাঁতার কাটা,যতক্ষণ মামা দুটোকে কান ধরে টেনে না তোলে!যখন ওরা পুকুর থেকে উঠতো,তখন দুজনেরই চোখ রক্তজবার মতো লাল।আর হেঁচে-কেশে বিকেলের মধ্যেই গা-গরম,কাঁপিয়ে জ্বর!ওই জ্বরের মধ্যেই আবার দিদিমার ঘর থেকে অমৃত সমান আমের আচার-কুলের আচার চুরি করে ছাদে বসে খাওয়া।ঠাকুর দালানে বসে দিদার কাছে শিবঠাকুরের গল্পকথা শোনা।একই গল্প শুনে-শুনে মুখস্ত হয়ে গিয়েছিলো তীর্থর।তবুও যেন ভালো লাগতো!কি ভীষণ ভালো লাগতো!দিদার কোলে দুই ভাই শুয়ে আচার খেতে-খেতে শিবঠাকুরের তান্ডবের গল্প শুনতো।সেইসব শুনতে-শুনতে মানসচক্ষে কত কিছু কল্পনা করতো তীর্থ।এইসব ছাড়া ছুটির দুপুরগুলো একসময় ভাবতেই পারতো না ও।আর এই সব কিছুতেই তীর্থর সঙ্গী ছিলো ওই গুবলু দাদা।এমনকি লোকের আমবাগানে আম চুরি করা থেকে,ধরা পড়ে মামার কাছে নালিশ হয়ে কান ধরে ওঠবোস করা পর্যন্ত,সবকিছুই একসঙ্গে করেছে ওরা দুই ভাই।তারপর বয়স বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে কেমন যেন বদলে যেতে শুরু করলো গুবলু দাদা।তীর্থ শেষ মামারবাড়ি থেকে গিয়েছিলো বেশ কয়েক বছর আগে।গুবলু দাদা যেন আর আগের মতো নেই।বরাবরের একটু হৃষ্টপুষ্ট-গোলগাল গুবলু দাদা।তাই ছোট্ট থেকেই ওটাই ওর আদরের নাম।তীর্থর দিদা অবশ্য ওকে ডাকতো গোপাল বলে।দুজনকে আদর করে নিজের সামনে বসিয়ে খাওয়াতো দিদা।শেষের কয়েকবার গুবলু দাদা ওকে দেখে "কিরে ভালো আছিস?সব খবর ভালো তো?" মুখে একটু আলগা হাসি টেনে এটুকু বলেই দায় সারতো।তীর্থ বুঝতে পারতো,সম্পর্কের সেই হৃদ্যতা,সেই উষ্ণতাটা আর নেই।গুবলু দাদার জন্যই ও-বাড়ি ছুটতো তীর্থ।অন্তরের টান কমে যাওয়ায় শেষের দিকে আর যাওয়া হতো না বেশি।ওই বছরান্তে বিজয়াতে দিদাকে একবার দায়সারা প্রণাম করতে যাওয়া হতো বাবা-মায়ের সঙ্গে।এখনও দিদা বেঁচে আছেন।বয়সের ভারে খুবই অসুস্থ।কি যে ঝড় বয়ে যাবে মামা-মামীমা আর দিদার ওপর দিয়ে,ভাবতেও পারলো না তীর্থ।খবরটা পেয়েই কাল বাবা-মা বেরিয়ে গেছে।ভেবেছিলো ছোটখাটো কিছু হয়তো ঘটেছে।বলেছিলো,গিয়ে অবস্থা দেখে তীর্থকে ফোন করবে।সামনেই পরীক্ষা,শুধু-শুধু পরীক্ষার সময় সবাই মিলে গিয়ে...কাল রাতেই ফোন করেছিলো মা।বলেছিলো অবস্থা খারাপ।আজ সকালে নিজের টিউশনটা সেরেই বেরোবে ভেবেছিলো তীর্থ।কিন্তু বড্ড যে দেরি হয়ে গেলো...তীর্থর চোখ থেকে জল বেরিয়ে এলো...ও অস্থির হয়ে উঠলো বেরোনোর জন্য....আপ-লাইনে লোকটার পা-কাটা পড়েছে।ওটা চোখের সামনে দেখেই সাংঘাতিক অসুস্থ হয়ে পড়েছে পাপাই দা।তীর্থ যাবে ডাউনে।ওই লাইন ক্লিয়ার।কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘোষণা হলো তীর্থর গাড়ির...
-পাপাই দা?
-শুনেছি!চল!আমি পারবো।
-না!তুমি বাড়ি চলে যাও।আমি বরং পরের ট্রেনে যাচ্ছি।তোমাকে আগে ট্যাক্সিতে উঠিয়ে দিই...
গা-টা তখনও গুলোচ্ছে প্রিয়মের।মাথা ঝিম-ঝিম করছে।কত রক্ত!!উফফ!!আবারও উঠে গিয়ে খানিকটা বমি করলো ও...এবার দিশেহারা হয়ে পড়ছে ঝোরাও...
-শোনো?কি নাম তোমার?তীর্থ বোধহয়!
-হুম দিদি!
-তুমি ঠিকই বলেছো ভাই।প্রিয়ম পারবে না।ও এত দুর্বল আমি জানতাম না।এই অবস্থায় ওইসব একসিডেন্ট-কেসের বডির সামনে...
-আমি তো ওটাই বলছি দিদি!তুমি কি পাপাই দার বন্ধু?তোমার যদি খুব দরকারী কাজ না থাকে,তুমি কি একটু...
-আমি তোমায় আগেও একবার দেখেছি ভাই।তোমার হয়তো আমাকে মনে নেই।আমরা একই এপার্টমেন্টে থাকি।শোনো,একটা কাজ করো।তুমি বরং এই ট্রেনেই বেরিয়ে যাও।আর দেরি কোরো না।আমার কাজ অতটাও ইম্পরট্যান্ট কিছু নয়।প্রিয়মকে আমি নিয়ে যাচ্ছি!
-থ্যাঙ্কু দিদি!!
তীর্থ এগিয়ে গেলো প্রিয়মের দিকে।বমি করে হাঁপিয়ে গিয়ে পাশেই একটা উঁচু জায়গায় একটু বসে পড়েছে ও...
ঝোরা ওর দিকে হাতের জলের বোতলটা এগিয়ে দিলো...
-পাপাই দা...দিদিকে বললাম...
একটু সরে এসে জিন্সের পকেট থেকে ফোনটা বের করলো ঝোরা।ব্যস্ত-হাতে ফোন করলো অরিত্রকে...
-শোন,আজ আসতে পারছি না।একটু আটকে গেলাম।
-সেকি!কি হয়েছে?তুই তো বেরিয়েই গেছিলি!আমিও জাস্ট জামাটা পরেই...
-আসতে পারছি না অরি!পরে বলছি।তুই আর বেরোস না।রাখছি!এখন কিন্তু আর একদম ফোন করবি না।যেটা বললাম,সেটা মাথায় রাখবি...বাই!!
প্রিয়মকে ধরে নিয়ে যখন ঝোরা প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরোলো,তখন তীর্থর ট্রেন ঢুকছে প্ল্যাটফর্মে।ও ওভার-ব্রিজের ওপর দিয়ে তীরের বেগে ছুটছে....
-শুনুন!আপনি একটু পলিক্লিনিক হয়ে চলুন তো দাদা!বেশি সময় লাগলে ছেড়ে দেবো আপনাকে...
ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলে প্রিয়মের দিকে ফিরলো ঝোরা।ও তখন ট্যাক্সিতে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।এখনও একইভাবে দরদর করে ঘামছে ও....
ঝোরা একটু ডাকলো ওকে,
-প্রিয়ম?
কোনো সাড়া নেই...
অস্থির হয়ে পড়লো ঝোরা।
-প্রেশার এত হাই?
ডাক্তার অবাক হয়ে ঝোরার মুখের দিকে চাইলো।
প্রিয়ম ফ্যানের নীচে শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে বসেছে।এখন একটু সুস্থ লাগছে ওর।কিন্তু ও জানে,ওর আগামী কয়েক রাতের ঘুম শেষ!!এই ট্রমা-টা এখন মস্তিষ্কে চলবে কিছুদিন।
প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে ক্লিনিক ছেড়ে বেরিয়ে এলো ওরা।প্রিয়মকে সামনের সারি-সারি চেয়ারগুলোর মধ্যে একটায় বসিয়ে,ওষুধের দোকানের দিকে ঝোরা এগোলো।ওষুধ গুলো নিয়ে টাকা দেওয়ার জন্য সবে ব্যাগ খুলেছে ঝোরা,সেই সময় প্রিয়ম টলতে-টলতে সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো,
-একি!!তুমি আবার উঠে এলে কেন?
-দরকার আছে।দাদা,ট্রিপ্টোমার টোয়েন্টি-ফাইভ মিলিগ্রাম!
নিজের আজন্ম-পরিচিত ওষুধের নামটা প্রিয়মের মুখে শুনে চমকে উঠলো ঝোরা।কিন্তু আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না ও।টাকা দিয়ে ওষুধের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে,আবার ট্যাক্সিতে গিয়ে বসলো ওরা...
প্রিয়ম তখনও মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে হেলান দিয়ে রয়েছে ট্যাক্সিতে,দুটো চোখ বন্ধ....
ঝোরা একবার ওর দিকে চেয়ে জানলার দিকে চাইলো।হাওয়ায় উড়তে থাকা চুলগুলোকে একজায়গায় ধরে খোঁপা করে কব্জিতে রাখা ব্যান্ডটা আটকে নিলো চুলে...
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেল বাজালো প্রিয়ম।ওর পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ঝোরা।অপর্ণা দরজা খুলে বেরিয়েই চমকে উঠলো।
-কিরে পাপাই?কি হয়েছে তোর?কি ব্যাপার?
ঝোরার দিকে চেয়েই প্রশ্ন করলো অপর্ণা...
-আমি ঠিক জানি না আন্টি!হঠাৎ করেই প্রিয়ম ভীষণ অসুস্থ...
আর ওখানে দাঁড়ালো না প্রিয়ম,সোজা বাথরুমে ঢুকে গেলো।সিঙ্কের সামনে গিয়েই হড়হড় করে আবার বমি করে ফেললো ও।বীভৎসভাবে গা গুলোচ্ছে।বমি করে-করে বুক-পিঠ ব্যথা হয়ে গেছে ওর।
ছেলের পিছন-পিছন অপর্ণাও ছুটে বাথরুমে ঢুকলো।ঝোরাও পায়ে-পায়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে দাঁড়ালো...ওষুধের প্যাকেটটা রাখলো ডাইনিং টেবিলের ওপরে...
ডাইনিংয়ে দাঁড়িয়েই ঝোরা দেখলো,বাথরুম থেকে বেরিয়ে ধীর-পায়ে ঘরের দিকে চলে গেলো প্রিয়ম।বাথরুমে তখনও জলের শব্দ হচ্ছে...আন্টি রয়েছে ভিতরে...বাথরুম ধোয়াচ্ছে হয়তো...
ঘরে গিয়ে ফ্যান চালিয়ে ছেলের গা থেকে শার্টটা টেনে খুলে দিলো অপর্ণা...তারপর মাথায় কয়েকবার হাত বুলিয়ে দিলো।মাথা-মুখ ভিজে ছিলো জলে,আলতো করে মুছিয়ে দিলো জলটা...তারপর হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে...প্রিয়ম তখন নিস্তেজ হয়ে শরীর ছেড়ে দিয়ে,উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে বিছানায়...মুখ-মাথা অল্প ভেজা...
ঝোরাকে দেখেই অপর্ণা বলতে শুরু করলো,
-কি ব্যাপার গো?সুস্থ ছেলে বাড়ি থেকে বেরোলো,হঠাৎ করে...
-আন্টি এপার্টমেন্টের বাইরেই প্রিয়মের সঙ্গে আমার দেখা হয়।আমরা একসঙ্গেই স্টেশনে যাই।সব তো ঠিকই ছিলো,জাস্ট একটা একসিডেন্ট মানে স্টেশনে রেলে কাটা পড়ে একজনের পা,ওখানেই বোধহয় দাঁড়িয়ে ছিলো প্রিয়ম...তারপর থেকেই দেখছি...
আর কিছু শোনার প্রয়োজন নেই অপর্ণার।বাকিটুকু বুঝে গেছে ও।
-ঠিক আছে।বুঝেছি!তুমি বসো,আমি একটু আসছি...
পাপাইয়ের ঘরে ঢুকে অপর্ণা দেখলো,কুঁকড়ে জড়সড় হয়ে পড়ে রয়েছে ও।গায়ে হাত দিয়ে দেখলো,যা ভেবেছিলো তাই।ভালোই জ্বর এসে গেছে।পাপাইয়ের গায়ে একটা ভারী কম্বল দিয়ে দিলো অপর্ণা....ফ্যান বন্ধ করে দরজা ভেজিয়ে বাইরে এলো ও...
-আন্টি!এখানে কিছু মেডিসিন আছে।প্রেসক্রিপশনও ওর ভিতরেই আছে।আসলে আমি ওকে দেখে এত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,তাই একবার ডাক্তার দেখিয়েই এনেছি।প্রেশার-টা একটু হাই...নইলে আর সবকিছু তো ঠিক আছে বললো।আচ্ছা,কোনো ট্রমা থেকে কি...
-আজ থাক না ওসব কথা!অন্য একদিন বলবোখন।প্রথমদিন আমাদের বাড়ি এলে,একটু কিছু খাও!
-না আন্টি!থ্যাঙ্কু!!আমি বরং ওপরে যাই।আপনি প্রিয়মকে দেখুন।আমি পরে এসে ওকে দেখে যাবো।
-আচ্ছা!উঠবে?
-হ্যাঁ আন্টি!
-ঠিক আছে,এসো তবে।পাপাইয়ের শরীরটা একটু ভালো হলে,একদিন সময় করে এসো না আমাদের বাড়ি।
-আসবো আন্টি!আমি কাল বেরোবার সময়ই একবার খবর নিয়ে যাবো।
-আচ্ছা!তাই এসো!
-বাই আন্টি...
-হুম বাই!
ঝোরা বেরিয়ে গেলে দরজা বন্ধ করে পাপাইয়ের ঘরে গেলো অপর্ণা।ভীষণ জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে,কম্বলের ভিতরেও কাঁপছে পাপাই।ছেলেকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে ওর মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিলো অপর্ণা...পাপাইয়ের নিঃশ্বাস সাংঘাতিক উষ্ণ।একবার মাত্র মায়ের মুখের দিকে চেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো পাপাই,
-উফফ!মা!কত রক্ত!!লোকটার পা-টা একদম উরু থেকে আলাদা হয়ে গেছে গো।একদম সেদিনের মতো...সেই যে ধড় থেকে মুন্ডু আলাদা হওয়ার মতো...একদম-একদম ওই রকম...কি চিৎকার করছিলো মা লোকটা...উফফ!!মা রক্তে একেবারে ভেসে যাচ্ছিলো জায়গাটা...
-চুপ কর!চুপ কর!
ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলো অপর্ণা।
-তুই কি কোনোদিনও ভুলবি না পাপাই?উফফ ভগবান!
চোখে জল এসে গেলো অপর্ণার...
-চেষ্টা তো কম করি না মা!কিন্তু পারছি কই?দাড়ি কাটতে গিয়ে গাল থেকে সামান্য একটু রক্ত বেরোলেও,গা গুলিয়ে ওঠে।বমি করে ফেলি...
অপর্ণাকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকের মধ্যে কাঁপতে লাগলো প্রিয়ম।ছেলেকে শক্ত করে দুহাতে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলো অপর্ণা...
ঠাকুরদালানে এসে চুপ করে বসেছিলো তীর্থ।বাড়িতে মামীমার মর্মান্তিক বুকফাটা আর্তনাদ আর সহ্য করতে পারছিলো না ও।সন্ধ্যে হয়ে গেছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই।কিন্তু আজ আর প্রদীপ জ্বলেনি ঠাকুরদালানে।একটা মাত্র বৈদ্যুতিক আলো টিমটিম করে জ্বলছে।পিছন ফিরে একবার দেখলো তীর্থ।একেবারে সোজাসুজি ভয়ঙ্কর রূপে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শিবঠাকুর...ঘরের ভিতরের সিংহাসনের গৃহলক্ষী ছাড়াও,এই শিবঠাকুরের বাৎসরিক পুজো নিয়ম করে হয়।দাদুর নাকি জন্মের সময় কিসব মানসিক ছিলো এই ঠাকুরের।তারপর থেকেই তীর্থদের মামারবাড়ির ভিটের সীমানায় ঠাকুরদালান করে,এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়।এখন এখানকার স্থানীয় প্রায় সবাই এই দালানে সোমবার করে পুজো দিতে আসে।সবার জন্যই উন্মোচন করে দেওয়া হয়েছে এই দালান-চত্বরটুকু।মাথা নামিয়ে নিলো তীর্থ।এই শিবঠাকুরের কত্ত গল্প,এককালে দিদার মুখে শুনেছে তীর্থ।সেই সময় গুবলু দাদাও দিদার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতো।ওরা দুজন দিদার কোলের জায়গা নিয়ে মারামারি করতো।ঠাকুরদালান আছে,শিবঠাকুরের মূর্তি আছে,এমনকি দিদা পর্যন্ত বেঁচে রয়েছে।নেই শুধু গুবলু দা-ই।ভাবা যায়!!ওরা দিদার কাছ থেকে গল্প শুনে নিজেদের মানসপটে শিবের তান্ডব কল্পনা করতো।কল্পনার পরিধি তীর্থর বরাবরই সুবৃহৎ...তাই ওর কল্পনায়,ও যেন শিবঠাকুরের রুদ্রমূর্তি স্বচক্ষে দেখতে পেতো।গুবলু দাকে সেসব বললেই প্রাণখোলা হাসি হাসতো গুবলু দা।বলতো,
"হ্যাঁ!শিবঠাকুরের তো খেয়েদেয়ে কাজ নেই।তোর চোখের সামনে এসেই তান্ডব করবে!কই?আমি তো দেখি না ওসব?"
কিন্তু তীর্থ কি করে গুবলু দাদাকে বোঝাবে,যে ও চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পায় সেই রুদ্রমূর্তি,সেই তান্ডব!আর কানে বাজতে থাকে দিদার সুরেলা কণ্ঠ!দিদা বলে যাচ্ছে ঘটনাপ্রবাহ।দাদাকে বিশ্বাস করাতে না পেরে,একদিন তীর্থ বাধ্য হয়েই গুবলুকে বলেছিলো,
"আচ্ছা!এরপর দিদা যখন গল্প বলবে,তুই একদিন চোখ বন্ধ করবি,চোখ বন্ধ করে শুনবি।চোখ খুলে রাখলে হবে না কিন্তু দাদা...চোখ বন্ধ করে ওই মূর্তিটার কথা ভাববি,দেখবি ওরা কেমন জীবন্ত হয়ে উঠবে!তখন তোর চোখের সামনেই শুরু হবে তান্ডব..."
কোনোদিন গুবলু দা মানসচক্ষে দেখেছিলো কি তান্ডব?!কি জানি!!সেই খবর তো আর নেওয়া হয়নি....
শুধু তীর্থর মনে পড়ছে একগাল নিষ্পাপ হাসি!সেই নির্মল হাসিটাই যে আজ হারিয়ে গেছে।বাবা-মামা আর আরও কয়েকজন দাদাকে একবার বাড়িতে নিয়ে আসবে।তীর্থ চলে এসেছে হসপিটাল থেকে।ওখানে থাকা আর সম্ভব ছিলো না ওর পক্ষে।মুখের বাঁ-দিকটা প্রায় একেবারে থেঁতলে গেছিলো গুবলু দার।বাঁ-হাত ভেঙে গেছিলো,বুকের পাঁজরেও...
একটা গাড়ি এসে ঢুকলো উঠোনে।ঘরের ভিতর থেকে সমস্বরে কান্নার শব্দ আরও সহস্রগুণ বেড়ে গেলো সেই মুহূর্তেই।তীর্থ উঠে ছুটলো ঘরের দিকে...
পিছনে পড়ে রইলো শিবের তান্ডবের সময়কার একটা কাল্পনিক মূর্তি,যা প্রতিমা-শিল্পীর নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় একেবারে জীবন্ত-প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।সেই তান্ডব,যা তীর্থ নিজের কল্পনায় একাধিকবার দেখলেও,বাস্তব-জীবনে কোনোদিনও তার সম্মুখীন ওকে হতে হয়নি...
গুবলুর মরদেহ নামানো হলো গাড়ি থেকে।ঠাকুর-দালানে শিব দাঁড়িয়ে রয়েছে।দু-চোখে তীব্র রোষানল...তৃতীয় চক্ষু উন্মোচিত...
ঝোরা লিফটের মধ্যেই কুর্তি আর জিন্সের ওপর দিয়ে জামাটা পরে নিলো।কিন্তু ওর দুটো ভ্রু দুশ্চিন্তায় এক জায়গায় হয়ে গেছে।ভাঁজ পড়েছে কপালেও...কি এমন কথা,যা আন্টি ওকে আজ বললো না!!কোন অতীত বয়ে বেড়াচ্ছে প্রিয়ম...রক্ত দেখে এত ভয় কেন ওর!!প্রিয়মও ঘুমের ওষুধ ছাড়া ঘুমোতে পারে না!!কেন?
ভাবতে-ভাবতেই লিফটটা বারো-তলায় পৌঁছে গেলো।ফোনটা ব্যাগের ভিতরে কাঁপছে।বেল বাজানোর আগে ফোনটা বের করলো ঝোরা।যা ভেবেছিলো তাই।অরিত্র...
ফোনটা কেটে দিয়ে বেল বাজলো ঝোরা।নেমপ্লেটে লেখা রয়েছে পরপর তিনটে নাম।সৌম্যদীপ সেন,প্রিয়দর্শিনী সেন,শ্রীময়ী সেন।দরজা খুলে দাঁড়ালো প্রিয়দর্শিনী,ঝোরার বৌদি,ডাকনাম প্রিয়া...
-কিরে ঝোরা?তাড়াতাড়ি চলে এলি?বললি যে,শ্রেয়ার জন্মদিন,রাতে খেয়ে ফিরবি!!
-বলছি বৌদি!ভিতরে চলো!যাওয়া হয়নি গো...
-সেকি?কেন?যাসনি তো এতক্ষণ কোথায় ছিলি তুই?
-আমি আর সোহিনী ওর স্কুটি রেখে ট্রেনে করে যাচ্ছিলাম,কিন্তু হঠাৎ একটা একসিডেন্ট,মানে ওই আর কি ট্রেনে-কাটা...
-ইস!বাবাগো!!ওই সোহিনী কোথায়?
-সবাই ঠিক আছে বৌদি!ও বাড়ি চলে গেছে।আসলে স্টেশনে আমাদের মতো প্রিয়মও ওই একসিডেন্টটা চোখের সামনে দেখে,একটু অসুস্থ হয়ে যায়।ওকে ডাক্তার দেখিয়েই...
-প্রিয়মটা আবার কে?
ঝোরার দাদা উঠে এসে দাঁড়ালো ওর সামনে।ঝোরার কথা শোনার জন্য ও টিভিটা বন্ধ করে দিলো...
-সেদিন তোকে বলছিলাম না দাদা,ওই আটতলায় লোক এলো বোধহয়।ওরাই এসেছে।ছেলেটার নাম প্রিয়ম।ওকেই ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এলাম...
-হ্যাঁ-রে ঝোরা?যে ট্রেনে-কাটা পড়েছে,সে কি...
-বেঁচে তো আছে বৌদি!অন্তত আমি যতক্ষণ দেখলাম।উফফ!!ডোন্ট ইভেন আস্ক!!ইটস ভেরি ডিস্টার্বিং!!বীভৎস গো!!
বলতে-বলতেই দৃশ্যটা মনে পড়ে গেলো ঝোরার।সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো ওর।গা-টা গুলিয়ে মাথাটা একটু ঝিমঝিম করে উঠলো।
-ঠিক আছে।বাদ দে ওসব!তুই যা!চেঞ্জ করে একটু ফ্রেশ হয়ে নে।যা-যা!তারপর খেতে দেবো।তাড়াতাড়ি সবাই শুয়ে পড়ি।কাল থেকে তো আবার সব অফিস...
-হুম!!
ঢুকেই চেয়ারে বসেছিলো ঝোরা।উঠে নিজের ঘরে গেলো।দরজা বন্ধ করলো ও...ব্যাগের ভিতরে ফোনটা আবার গোঁ-গোঁ করে কাঁপছে।ফোনটা বের করে কানে দিলো ঝোরা...
-অরি কাল কথা বলি?ভীষণ টায়ার্ড আমি!
-কি হয়েছে বলবি?
-উফফ!আজই শুনতে হবে?রাখ না সালা ফোন!কেন এত বকিস?সব কৈফিয়ৎ দিতে হবে তোকে?আমার ইচ্ছে হয়নি,আসিনি!ব্যাস!!
-তুই বেরিয়েও এলি না ঝোরা।কিছু তো একটা সাংঘাতিক রকম হয়েছে।কি হয়েছে?
-একটা একসিডেন্ট!
-একসিডেন্ট!!ওই তুই কোথায় এখন?
-আমি বাড়িতেই।আরে স্টেশনে রে...রেলে একজনের পা...
ঝোরা বিছানায় শুয়ে একটু কথা বললো অরিত্রর সঙ্গে।তারপর ফোনটা পাশে রেখে চোখদুটো বন্ধ করলো।ক্লান্তিতে ঘুমিয়েই পড়লো ও...
মায়ের কোলে মাথা রেখে জড়সড় হয়ে ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে জ্বরে অচেতন প্রিয়মও...
(চলবে....)
উপন্যাসটি আংশিকভাবে (প্রথম দশটি পর্ব) প্রকাশিত হবে। সংগ্রহে রাখতে whatsapp করতে পারো পাঠকবন্ধুর নম্বরে - 7439112665
এছাড়াও পাওয়া যাবে flipkart ও amazon এও।
বাংলাদেশ থেকে পাওয়া যাচ্ছে: Indo Bangla Book Shop - +880 1556-436147
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন