সূর্যোদয়ের আগে
সাথী দাস
সপ্তম পর্ব
-মা তুমি চুপ করবে?আবার সকাল-সকাল শুরু করলে?প্রতিদিন এই এক গল্প!বাড়িতে আর থাকা যাবে না দেখছি....উফফ!!প্লিজ!একটু চুপ করো!
-কেন চুপ করবো?আমি কেন চুপ করবো?!সত্যিটা শুনতে খুব খারাপ লাগছে,তাই তো?আমারও শুনতে খুব খারাপ লেগেছিলো,যখন পাশের বাড়ির কাকিমা এসে বললো,দিদি তোমার ছেলে ওই ঢলানী মেয়েছেলের সঙ্গে গলাগলি হয়ে জড়াজড়ি করে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।মনে হচ্ছিলো ওইখানেই বিষ খেয়ে মরে যাই।এই দিনটা দেখবো বলে,ছোট থেকে তোকে এতবড় করেছি!আমার শিক্ষার এই মূল্য দিলি তুই?একটা বারোভাতারি বেশ্যা মেয়েছেলেকে বিয়ে করবি বলে উঠে-পড়ে লেগেছিস!
-মা!!
চিৎকার করে বাড়ি মাথায় করলো অরিত্র...নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে,মায়ের চোখে-চোখ রেখে বললো,
-ঝোরার বিরুদ্ধে তুমি আর একটাও কথা বলবে না!!
-কেন?কি জানিস তুই ওই মেয়ের সম্পর্কে?দুবেলা দুটো ব্যাটার হাত ধরে ঘোরে।আজ এর সঙ্গে,তো কাল ওর সঙ্গে!!তুই কি জগতে আর মেয়ে পেলি না বাবু!ওই মেয়ে ছাড়া,তুই যা এনে আমার সামনে দাঁড় করাবি,আমি তাই মেনে নেবো।কিন্তু ওই মেয়েকে আমি কিছুতেই এ বাড়িতে ঢোকাবো না।দুপাতা লেখাপড়া করে তুমি যদি মনে করো স্বেচ্ছাচার করবে,মায়ের ওপর দিয়ে যাবে,তাহলে তুমি ভুল করবে।ওই মেয়ে এ বাড়িতে আসবে না,এটাই আমার শেষ কথা।তুই আমার একটাই ছেলে বাবা!!এভাবে তোর জীবনটা আমি কিছুতেই নষ্ট হতে দেবো না!আমি বেঁচে থাকতে এ অনাচার কিছুতেই হবে না।আমার ঘরে ঠাকুর আছে....চোদ্দটা ছেলের সঙ্গে শুয়ে এসে,ওই বেশ্যা মাগী....
আর শুনতে পারলো না অরিত্র।আর দাঁড়াতে পারলো না মায়ের সামনে।মাথা গরম হয়ে গেলে,মাঝে-মাঝে ভাষাজ্ঞানই লোপ পেয়ে যায় মায়ের।ভুলেই যায়,নিজের ছেলের সঙ্গে কথা বলছে।নিজের ঘরে ঢুকে সজোরে দরজা বন্ধ করে ছিটকিনি তুলে দিলো।যেদিন থেকে মায়ের কানে ঝোরার খবরটা পৌঁছেছে,সেদিন থেকেই বাড়িতে শুরু হয়েছে এই অশান্তি!এমনিতেই মুখরা বলে অরিত্রর মায়ের পাড়ায় বেশ বদনামই আছে।প্রতিবেশীরাও পারতপক্ষে একটু এড়িয়েই চলে ওনাকে।খুব প্রয়োজন না থাকলে,বাবাও মায়ের সামনে খুব একটা মুখ খোলে না।আর গত কয়েক দিন ধরে তো বাবাও নির্বাক!নীরবে যেন মাকেই প্রশ্রয় দেয়।অথচ এই বাবাই ওকে ছোটবেলা থেকে শিখিয়ে এসেছে,কোনো কিছুকে সম্পূর্ণভাবে তলিয়ে না দেখে বিশ্বাস করা উচিত নয়।আর ঝোরা তো একটা জলজ্যান্ত মানুষ!অরিত্র শুধু জীবন দিয়ে ওকে ভালোবাসে।থাকতেই পারে ওর কিছু অতীত!সেসব নিয়ে অরিত্রর কোনো মাথাব্যথা নেই।ও শুধু ঝোরার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ হতে চায়।যে বাবাকে আদর্শ মেনে এতদিন জীবনের সব বড় সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে এসেছে,সেই বাবাকেই যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনের সময়,ও নিজের পাশে পাবে না,বাবাও যে ওর প্রতি এতটা উদাসীন হয়ে পড়বে,এটা ভাবতেও পারেনি অরিত্র!নীতিকথা বোধহয় শুধুমাত্র বইতে পড়তেই ভালো লাগে।আর ভালোলাগে শিশুমনে গম্ভীর সব নীতিকথার বীজ বপন করতে।কিন্তু বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ বুঝি বড়ই বেমানান।তখন সবার মন জুগিয়ে,কড়ায়-গন্ডায় লাভ-ক্ষতির হিসেব করেই চলতে হবে।কোনো মেয়েকে নিজের ঘরের বউ করে আনার সময়,চক্ষু-কর্ণের বিবাদভঞ্জন করে,নিখুঁত মেয়েই ঘরে তুলতে হবে।নইলে আবার ঘরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ঠাকুর যে রাগ করবেন!!এই কঠিন সত্যিটা প্রথম দিনই বুঝে গেছিলো অরিত্র।লড়াইটা এখন ওর একার,একদম একার।তাও ও সমানে লড়ে যাচ্ছে,কিন্তু সবচেয়ে বেশি আঘাত যে ও ঝোরার দিক থেকেই পাচ্ছে।যার জন্য এত লড়াই করছে অরিত্র,সেই মেয়েই তিনদিন ধরে ওর ফোন ধরছে না!আসছেও না দেখা করতে।তিন-তিনটে দিন হয়ে গেছে,ও ঝোরাকে একটু চোখের দেখাও দেখেনি।ফোন করলেও কিছুতেই ধরছে না।এমনিতেই পাগল-পাগল লাগছে অরিত্রর,তার ওপর ঘরের মধ্যে মা যা শুরু করে দিয়েছে,এবার তো ওর আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করছে।মা বাইরে এত জোরে চেঁচাচ্ছে,বন্ধ দরজা ভেদ করেও অরিত্রর কানে এসে পৌঁছলো কয়েকটা বাক্য,
"ওসব ছেলেধরা মেয়েছেলেকে আমার খুব ভালো করেই জানা আছে।ওষুধ করেছে-ওষুধ করেছে!!আমার একটাই মাত্র ছেলে,তাকেও ওই ঢলানী মেয়েছেলে শরীর দেখিয়েই বশ করেছে।ছেলেদের মাথা কি করে খেতে হয়,সেই শিক্ষা কেউ নিতে চাইলে,ওই মেয়েছেলের স্কুলে ভর্তি হয়ে যাও!!সেই শিক্ষা ওই মেয়ে দেবে!
আর শুনতে পারছে না অরিত্র।দুহাতে মাথা চেপে ধরলো ও।কান গরম হয়ে যাচ্ছে।শার্টটা টেনে গায়ে দিয়ে,ফোনটা পকেটে ভরে,জামার বোতাম লাগাতে-লাগাতে দরজা খুলে বেরোলো ও....ওকে দেখেই মায়ের গলা আবার সপ্তমে চড়ে গেলো।কিন্তু সেদিকে আর কান দিলো না অরিত্র।আজ রবিবার।ঝোরা অফিসেও বেরোবে না,তাই ওর অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেও দেখা হবে না।কিন্তু আজ একটু ওর সঙ্গে কথা বলতে না পারলে,অরিত্র মারা পড়বে।
-কিরে?কোথায় যাচ্ছিস তুই?বাবু....
পিছু ডেকে চিৎকার করে উঠলো অরিত্রর মা...
-মরতে!
বলেই বাইকে উঠে বসলো অরিত্র,চোখের সামনে দিয়েই হুশ করে বেরিয়ে গেলো বাইকটা।একেবারে চুপ করে গেলো অরিত্রর মা।বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠলো ওনার...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে এসে বাইক দাঁড় করালো অরিত্র।আজ এইখানে দাঁড়িয়েই যতক্ষণ পর্যন্ত ঝোরা ফোন না ধরবে,ততক্ষণ ও ফোন করেই যাবে।কানে ফোনটা ধরলো অরিত্র....চুপ করে বাইকে বসেই রইলো।ঝোরার ফোন রিং হচ্ছে...বেশ কয়েকবার কেটে-কেটে ফোন করলো অরিত্র।কিছুতেই ধরছে না মেয়েটা...অরিত্র চোখটা বাঁ-হাত দিয়ে মুছে নিলো...
-বুনি তোর ফোন বাজছে!তখন থেকে বেজেই যাচ্ছে!ধর না!
-এই ঝোরা,তুই যা!তোর দাদা আবার চেঁচাবে!মাংসটা আমি নাড়ছি...
-দেখবে কিন্তু বৌদি!ধরে যায় না যেন...
-না রে!আমি দেখছি তো,তুই যা...
ফোনটা হাতে নিয়ে একবার দেখেই রেখে দিলো ঝোরা।এইজন্যই ও যতক্ষণ বাড়িতে থাকে,ফোন সাইলেন্ট বা ভাইব্রেট করে রাখে।আটটা মিসড কল।একটু চিন্তায় পড়ে গেলো ঝোরা।ছুটির দিন তো অরি এতবার ফোন করবে না।ওকে তো রবিবার করে ফোন করতে বারণই করেছে ঝোরা।ওর কথার অবাধ্য তো অরি কিছুতেই হবে না।একটু ভেবেচিন্তে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে অরিকে ফোন করলো ঝোরা...মৃদু ধমকে উঠলো,
-তোকে কতবার করে বারণ করেছি না...
-ঝোরা!!
কেঁদেই ফেললো অরিত্র...গলা বুজে এলো ওর।
-কি হয়েছে তোর?
-একবার দেখা কর!
-না!আর না!
-প্লিজ-প্লিজ!!
-না...
-আমি সুইসাইড করবো!
-গান্ডুর মতো কথা বলিস না অরি!সালা বাড়িতে দাদা-বৌদি রয়েছে।রাখছি আমি...
-রাখ!রাখ,তুই ফোন রেখেই দে।এরপর আর ফোন করেও আমাকে পাবি না...রাখ-রাখ-রাখ!
ফোনের ওপার থেকে চেঁচিয়ে উঠলো অরি...
-উফফ!!অরি...আচ্ছা,আজ হবে না।কাল...ফেরার পথে...
-ওকে!!আমি তোর ব্যাঙ্কের সামনে...
-দরকার নেই অরি।আমিই জায়গামতো চলে আসবো!
-ঠিক আসবি তো ঝোরা?
-আসবো!এখন রাখছি!
ঝোরা লাইনটা কেটে দেয়।অরি তাও কিছুক্ষণ ফোনটা কানে ধরেই রাখে।তারপর পকেটে ঢুকিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়....
প্রিয়ম চলে আসার পর একবার মাত্র ওকে ফোন করেছিলো ঝোরা।সেইদিনই মেয়েটা খবর নিয়েছিলো,ও ঠিকমতো পৌঁছেছে কিনা!সেদিন রাত থেকেই প্রিয়ম একাধিকবার ফোন করেছে ওকে।কিন্তু আর ধরেনি ঝোরা।নিজেও ফোনও করেনি।দুটো দিন বেশ অস্থিরভাবেই কেটেছে প্রিয়মের।কিন্তু তবুও ও আর ফোন করেনি ঝোরাকে।এই কদিনে যতটুকু ও ঝোরাকে চিনেছে,যা জেদ ওর....ওই মেয়ে যদি ঠিক করে থাকে,ও প্রিয়মের ফোন ধরবে না,ওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে না,তাহলে প্রিয়মেরও সাধ্য নেই ওকে বাধ্য করে।ঝোরাকে দিয়ে আর যাই হোক,জোর করিয়ে কিচ্ছু করানো যাবে না।তাই প্রিয়মও আর ফোন করেনি।তবে বড্ড কষ্ট হচ্ছে ওর।বুকের মধ্যে একটা চিনচিনে ব্যথা।মিনিট দশেকের ব্রেকে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে দূরের বহুতলগুলোর দিকে চেয়েছিলো প্রিয়ম।বলতে গেলে প্রায় পুরোটাই অফিস-পাড়া।তাই যতদূর দৃষ্টি প্রসারিত করা যায়,ততদূর পর্যন্ত আকাশের বেশিরভাগ অংশই ঢাকা পড়েছে বহুতলে...চোখদুটো জ্বালা করছিলো প্রিয়মের।অর্ধদগ্ধ সিগারেটটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো ও....
-কি হয়েছে?
-আমি আর বাড়িতে টিকতে পারছি না ঝোরা!
-তো আমাকে কি করতে হবে?
চুপ করে গেলো অরিত্র।
-কি হলো?বল!তুই বাড়িতে টিকতে পারছিস না,তার জন্য আমাকে কি করতে হবে?
-একবার বিয়েটা হয়ে গেলে তখন আর মা কিছু বলতে...
-অরি!শেষবারের মতো বলছি!আর কিন্তু একবারও বলবো না।ওসব ভুলে যা!
-তুই এইভাবে চুল কেটেছিস কেন?তোকে একদম ভালো লাগছে না দেখতে!!ভীষণ বাজে লাগছে...
"তোমাকে একদম অন্যরকম সুন্দর লাগছে ঝোরা..."
ওই একটা বাক্য মনে পড়ে গেলো ঝোরার।চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই পুরুষের মায়াময় মুখটুকু।উজ্জ্বল দুখানি চোখ।কথায়-কথায় নীচের ঠোঁটটা আত্মগোপন করে দাঁতের অন্তরালে।সে নিজেই কামড়ে ধরে ঠোঁটটা।তখন যে কি ভীষণ আকর্ষণীয় দেখায় তাকে,সে বোধহয় নিজেও জানে না...ঠোঁট কামড়ে ধরে বাঁকা হাসি হেসে ওঠে সেই পুরুষ...সেই তো ওকে বলেছে,যে ওকে ভীষণ সুন্দর লাগছে দেখতে।তারপর থেকে ঘরে-বাইরে-বন্ধুমহলে-অফিসে,সব জায়গায় উঠতে-বসতে হাজার রকম কথা শুনলেও,আর গায়ে মাখেনি ঝোরা।আর আত্মবিশ্বাসের অভাব ঘটেনি ওর মধ্যে।ঝোরা শীতল কণ্ঠে বলে উঠলো,
-আমি কি সবসময় ভালো লাগতে বাধ্য?নিজেকে উজাড় করে সবসময় সবাইকে আনন্দ দিতে বাধ্য আমি?কেন রে?আমি কি সার্কাসের জোকার নাকি?!সং হয়ে সেজেগুজে তোর সামনে আসবো,আর তুই সুন্দর লাগছে বলে হাততালি দিয়ে উঠবি!!ফোট বাল আমার সামনে থেকে...আমার যেটা ইচ্ছে হবে,আমি সেটাই করবো।তোর ভালো লাগবে না,তুই নিজের চোখ বন্ধ করে নিবি!ব্যাস!গল্প শেষ!!
-এত রেগে যাচ্ছিস কেন?তুই আগে সবসময় সুন্দর করে সেজে থাকতিস,দেখতে খুব ভালো লাগতো।এখন একদম সাজগোজও করিস নি,কিভাবে এসেছিস!!তার ওপর চুলটাও কি বাজেভাবে কেটেছিস,তাই তো বললাম।ওই তুই কোথায় চললি?একটু কফি অর্ডার করি!
ঝোরার হাত টেনে ধরলো অরিত্র।
-তুই গেল কফি!!
-আচ্ছা সরি!সরি বাবা!বোস-বোস!
ঝোরার হাত ধরে টেনে ওকে বসালো অরিত্র।আবারও চেয়ারে এসে বসলো ঝোরা।
-তিনদিন ধরে ফোন করছি ঝোরা।একবারও ধরছিস না..
-আমি তো ধরতে বাধ্য নই।
-তুই এইরকম করছিস কেন?
-জানি না!!
-কি হয়েছে তোর?
-জানি না!!
-মন খারাপ?
-জানি না!!
-ভালোবেসেছিস?
-জানি না!কি?তুই কি বললি অরি?!
অরিত্রও চুপ করে একভাবে চেয়ে রয়েছে ঝোরার দিকেই...মাথা নামিয়ে নিলো ঝোরা...অরিত্র আবার মৃদু হেসে বললো,
-তুইও ভালোবেসেছিস ঝোরা...আমায়!!
"যোগাযোগ রাখবে তো ঝোরা?ফোন করবে তো আমায়?আমি ফোন করলে ধরবে তো?প্লিজ..."
বুকের ভিতরটা সংঘাতিকভাবে ব্যথা করে উঠলো ঝোরার।ব্যাপারটা ঠিক কি হলো!বহু বছর পর কোনো পুরুষের কথা ভেবেই ওর চোখে জল এসে গেলো...গাল বেয়ে গড়িয়ে আসা জলটা মুছে ফেললো ঝোরা...
-তুই আমায় ভালোবাসিস ঝোরা!সেটা তুই নিজেও জানিস না।কিন্তু আমি জানতাম!তাই তো বাড়ির এত অশান্তির পরও তোকে ছাড়তে পারিনি...
ঝোরা অরির দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো।ও কি বলছে,তার একবর্ণও আর ওর কানে ঢুকছে না...
"যোগাযোগ রাখবে তো ঝোরা?"
ওয়েটারকে ডেকে অরি বুঝি কোল্ড-কফি অর্ডার দিচ্ছে।এখানে বসলে ঝোরা ওটাই নেয় কিনা!!উঠে পড়লো ঝোরা।একছুটে বেরিয়ে এলো ওখান থেকে...ওর পিছন-পিছন অরি দৌড়ে এসেও ওকে ধরতে পারলো না।সোজা স্কুটিতে উঠে ও স্টার্ট দিলো স্কুটি...চোখ দিয়ে জল বেরিয়েই আসছে....আর কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে শুধুমাত্র ওইটুকু কথাই,
"যোগাযোগ রাখবে তো ঝোরা!!"
নিজের বহুপরিচিত পার্কের সামনে এসে দাঁড়ালো ঝোরা।ফোনটা বেজেই যাচ্ছে।অরি ফোন করছে,ঝোরা জানে।ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে ও বন্ধ করে দিলো।ওকে দেখেই সেই বৃদ্ধ কাকুর রুগ্ন-গালভাঙা মুখে একটা অমলিন হাসি ফুটে উঠলো।আজ একদম ইচ্ছে করছিলো না ঝোরার।তাও কাকুর মুখের ওই হাসিটুকুর দিকে চেয়ে,একটা আইসক্রিম কিনেই ফেললো ও।তারপর পার্কের ভিতরে গিয়ে সেই বেঞ্চটাতেই ও বসলো,যেখানে একদিন সেই পুরুষের সঙ্গে ও বসেছিলো।কারণে-অকারণেই চোখে জল এসে যাচ্ছে আজ...বেঞ্চে বসে সবেমাত্র একবার আইসক্রিম মুখে দিয়েছে ঝোরা,আবার ওর মনে পড়ে গেলো,
"ভালোবাসতে ভয় পাও ঝোরা!?"
মাথা নীচু করে হু-হু করে কেঁদে ফেললো ঝোরা।মাত্র দু-তিনদিনেই এ কি সর্বনাশ করে রেখে গেলো সেই পুরুষ!!কেন ও এইরকম করছে!আর না!আর ও ভালোবাসবে না!কিছুতেই না!!এই একত্রিশ বছরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে,জীবনের ত্রিশটা বসন্ত পেরিয়ে এসে,আজ হঠাৎ করে একটা সদ্য টিনেজারের মতো অবুঝ আচরণ করতে শুরু করেছে ও....আর তো থাকতেই পারছে না!আইসক্রিমটাও আর খেতে পারলো না ঝোরা।ছুঁড়ে ফেলে দিতে যাচ্ছিলো সেই ক্যাঙ্গারুর মুখগহ্বরে,কিন্তু তার আগে দেখলো লালু ওর সামনে বসে লেজ নাড়ছে...ঝোরা এখানে এলেই একটা ছোট বিস্কুটের প্যাকেট বরাদ্দ থাকে লালুর জন্য।আজ আনতেই ভুলে গেছে...নিজেকেই ভুলতে বসেছে ঝোরা,আর বিস্কুটের প্যাকেট!!আইসক্রিমের কাপটা লালুর সামনে নামিয়ে দিলো ঝোরা!
-কিরে লালু,খাবি?খুব ঠান্ডা কিন্তু!!
লেজ নাড়তে-নাড়তে লালু এসে একবার জিভ ঠেকিয়েই সরে গেলো ওটার কাছ থেকে।ঝোরার পাশে এসে বসে লেজ নাড়তে লাগলো।ঝোরা হেসে উঠে ওর মাথায় একটা হাত বুলোতে লাগলো।একবার নিজের পাশের ফাঁকা জায়গাটায় দিকে চাইলো ও।এর আগেরবারই যখন এখানে এসেছিলো ও,ঠিক এই জায়গাটাতেই সে বসেছিলো।আজ সে বসে আছে কয়েক হাজার মাইল দূরত্বে...নিজের পাশের ফাঁকা জায়গাটায় একটা হাত রাখলো ঝোরা।চোখ দিয়ে জল বেয়ে পড়ছে...ধীরে-ধীরে উঠে পড়লো ও...একেবারে পার্ক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে,একবার মাত্র পিছন ফিরে চাইলো ঝোরা।দেখলো,প্রিয়ম ওখানেই বসে আছে,ওই জায়গাতেই,ওর নীচের ঠোঁটটা দাঁতের ভিতরে হারিয়ে গেছে।মৃদু হেসে প্রিয়ম চেয়ে রয়েছে ঝোরার দিকেই,কেঁপে উঠে মুখ ফিরিয়ে নিলো ঝোরা।আবারও একবার ওদিকে দেখলো,আর কেউ কোত্থাও নেই।একাকী লালু আইসক্রিমের কাপটায় মনোসংযোগ করার চেষ্টা করছে....বেঞ্চটা শুন্য!সে নেই ওখানে...
মাথা নামিয়ে নিয়ে বেরিয়ে এলো ঝোরা...স্কুটিতে বসে স্টার্ট দিলো ও...দোকানটা পেরিয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে এসেও আবার পিছিয়ে গেলো...দোকানে গিয়ে বললো,
-ফলস নোজ-পিন!একটু ম্যাট কিছু দেখান!আমায় যেন গিলে খেতে না আসে!নাকের মাঝে পরবো...
লিফটে উঠে বারো নম্বরে আঙুল রাখলো ঝোরা।ছ-নম্বরে উঠেই বুকের ভিতরটা তিরতির করে কাঁপতে লাগলো।সাততলায় উঠেই তড়িঘড়ি আট নম্বরে আঙুল রাখলো ঝোরা।উত্তেজনায় এবার সর্বশরীর একটু কাঁপছে।খুলে গেলো লিফটের দরজা।হাঁটু দুটোও কাঁপছিলো ঝোরার।ও বেরিয়ে এসে দাঁড়ালো সেই ফ্ল্যাটের সামনে,যার নেমপ্লেটে লেখা রয়েছে,অপর্ণা সমাদ্দার,প্রিয়ম সমাদ্দার।ঠিক সাহস পাচ্ছিলো না ঝোরা,তবুও অনেকটা শক্তি সঞ্চয় করে বেলটা বাজিয়েই দিলো ও....কয়েক মুহূর্ত পর বেরোলো অপর্ণা...
-হাই আন্টি!!
-কে?ও তুমি?এসো-এসো!আসলে চুলটা ছোট করে ফেলেছো তো,হঠাৎ করে মানে...আরে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলে কেন?ভিতরে এসো!
একটু হেসে অপর্ণার সঙ্গে ভিতরে ঢুকলো ঝোরা।
আগেরবার যখন ঝোরা এসেছিলো,তখন অপর্ণা প্রিয়মকে নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলো যে,ঝোরাকে একটুও সময় দিতে পারেনি।আজ আর অপর্ণা আতিথেয়তার কোনো ত্রুটিই রাখলো না।
-আন্টি,আমি এতকিছু তো খেতেই পারবো না...
-খুব পারবে!এই বয়সে খাবে না তো,কখন খাবে?নাও-নাও,শুরু করো!!এই তুমি কফি খাবে না চা?আমিও একটু কিছু খেয়ে নিই।একটু পরেই আবার ছেলেমেয়েগুলো পড়তে চলে আসবে।ওদের ছাড়তে-ছাড়তে সেই নটা,আবার কোনো-কোনো দিন সাড়ে ন-টাও হয়ে যায়।তাই সন্ধ্যেবেলা একটু কিছু খেয়ে না নিলে...
-আন্টি প্লিজ,আপনি এত হেজিটেট করবেন না।আমিই বোধহয় অসময়ে বিরক্ত করতে চলে এলাম...
-এমা!একদমই না!আমি সেটা কখন বললাম!আমি বলছি,তুমি কি খাবে?চা না কফি?
-কফিই...
-আচ্ছা!তুমি বসো।আমি করে আনছি!
অপর্ণা উঠে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলে চামচ দিয়ে একটু মিষ্টি ভাঙলো ঝোরা।মুখে তুলতে গিয়েই ওর চোখটা পড়লো,দেওয়ালের কাছে রাখা ছোট টেবিলের ওপর তার একটা ছবির দিকে।ছবির মধ্যে থেকেও একভাবে সেই পুরুষ ওর দিকেই চেয়ে আছে।ফ্রেমবন্দী থেকেও এতটাই তার চোখের উজ্জ্বলতা,যে চোখে-চোখ রাখা যায় না সেই পুরুষের!খাওয়া মাথায় উঠে গেলো ঝোরার।মুখের সামনে থেকেও নামিয়ে আনলো চামচটা...
-ওমা!খাও!মুখের সামনে থেকে খাবারটা নামিয়ে রাখলে কেন?
চমকে উঠে ঝোরা দেখলো,অপর্ণা আন্টি একটা কাঁচের গ্লাসে জল নিয়ে ওকেই দিতে আসছিলো।ব্যাপারটা দেখে ফেলেছে।লজ্জায় মরে গিয়ে ঝোরা বললো,
-এই তো আন্টি খাচ্ছি!!
বলেই খেতে শুরু করলো ঝোরা....অপর্ণা গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রেখে আবার রান্নাঘরে চলে গেলো...আবারও ঝোরা সেই ফ্রেমবন্দী পুরুষের চোখে-চোখ রাখলো...ওইদিকে চেয়েই প্রশ্ন করলো ঝোরা,
-আন্টি?
-হ্যাঁ বলো!
-একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-হ্যাঁ বলো না...
-আচ্ছা আন্টি,এই যে প্রিয়ম রক্ত দেখে এত ভয় পায়,আপনারা কোনোভাবে এটা কাটানোর চেষ্টা করেননি?ও তো নন-ভেজ কিছুই খেতে পারে না!
-হুম!জানি!
একটা ট্রে-তে করে দুটো কফি মগ নিয়ে অপর্ণা ঝোরার মুখোমুখি এসে বসলো।
-কম তো করিনি মা!চাইল্ড-সাইক্যাট্রিস্ট থেকে শুরু করে,যে যেখানে বলেছে সেখানে ছুটেছি একটা সময় পর্যন্ত।আমার বাবা যে কি একটা ভুল করে রেখে গেলো!আমিও আসলে তখন মেনে নিয়েছিলাম সবটা!তুমি কি জানো ব্যাপারটা?
-হুম!প্রিয়ম বলেছে আন্টি!
-আচ্ছা!তাহলে তো সবটুকু জানোই!আসলে আমিও তখন একটা সুস্থ-জীবিত সন্তানের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।তাই আর কি....সারারাত চিৎকার করে কেঁদে-কেঁদে,সেদিনের পর থেকেই আতঙ্কে আমার ছেলেটার স্ট্যামারিং প্রবলেম এসে গিয়েছিলো।কতদিন তো ঠিকমতো কথাও বলতে পারেনি।রাতে ঘুমের মধ্যেও চিৎকার করে উঠতো!কেঁদে-কেঁদে অজ্ঞান হয়ে যেতো!তখন ওটা ঠিক করবো,না ভয়টা কাটাবো,আমি দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম ঝোরা।পরের দিকে ওর বাবা অনেক চেষ্টা করেছিলো ভয়টা কাটানোর।পড়ে গেলে-কেটে গেলে-ফেটেও গেলেও ছেলেকে ধরতো না ওর বাবা।কিন্তু তবুও ওই ভয়টা আর কিছুতেই কাটাতে পারেনি।রক্তের ভয়টা যেন ওর রক্তেই মিশে গেছে!নন-ভেজ খেলে আজও পাপাই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে।তাই এখন আমিও আর জোর করি না।থাক!যেভাবে ছেলেটা ভালো থাকে,সেভাবেই থাক!আর কি করবো বলো....তা তুমি কি করো ঝোরা?বাড়িতে কে-কে আছে?
ঝোরা একভাবে একাত্ম হয়ে চেয়ে রয়েছে টেবিলে রাখা ছবিটার দিকেই...অপর্ণার শেষ কথাটুকু ঠিকমতো কানেও ঢুকলো না ওর।অন্যমনস্কভাবে কফি মগে একটা চুমুক দিলো ও...
অপর্ণা দেখলো,ঝোরার দৃষ্টি দূরে টেবিলে রাখা প্রিয়মের ছবিটার ওপরেই আটকে রয়েছে...অপর্ণা আবার ডাকলো,
-ঝোরা?
-হ্যাঁ আন্টি!!কিছু বললে?
-হুম!বলছি তোমার বাড়িতে কে-কে আছে?
-আমার মা নেই আন্টি!বাবাও মরে গেছে।আমি আর আমার দাদা-বৌদি!
-ও আচ্ছা!দাদা কি করেন?
-দাদা একা নয় আন্টি!আমরা তিনজনই...
কথার মধ্যেই বেজে উঠলো টেবিলে রাখা অপর্ণার ফোনটা।ও উঠে গেলো...
-ওই পাপাই বুঝি ফোন করলো।তুমি খাও ঝোরা।আমি বরং দুধটা গরম করে নিই...
ফোন হাতে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো অপর্ণা।পাপাই নামটাই ঝোরার হৃদপিন্ড কাঁপিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।কাঠ হয়ে চুপ করে বসে রইলো ঝোরা...
-বল বাবা!
-আরে ফোনটা ধরে কানে দিয়েছো কেন?আমি তো ভিডিও কল করছি!
সারা শরীর কেঁপে উঠলো ঝোরার।আন্টির তো হেডফোনের বালাই নেই।তাই সবটাই ও শুনতে পাচ্ছে।ওর সারা দেহের সমস্ত রোমকূপ থেকে রোম দাঁড়িয়ে গেছে তার কণ্ঠস্বর শুনেই...
-ধুর বাবা!তুই এমনি ফোন কর তো!ওসব আমি পারি না!
-না!শিখতে হবে না তোমায়?ফোনটা কিনে দিলাম কেন?ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখার জন্য?
-আমার আগের ছোটো ফোনটাই ভালো ছিলো।
-ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে,এটাও ভালো লাগবে!আরে ক্যামেরাটা তোমার দিকে ঘোরাও।আমি কি গ্যাসের ওপর বসানো দুধ দেখবো?উফফ!তোমায় তো কত করে শিখিয়ে এসেছিলাম মা!!
কফি খেতে-খেতে ঝোরা সমানে হেসে যাচ্ছে মা-ছেলের কান্ডকারখানা দেখে...বেচারা এত শখ করে ভিডিও-কল করে এবার দুধ উথলানো দেখছে,রান্নাঘর দেখছে...হেসে ফেললো ঝোরা।
-ধুর!কি সব বুঝিয়ে গেছিস,সে তুই যাওয়ার পরই আমি সব ভুলে গেছি!কি করবো এবার?কোনদিকে ঘোরাবো?এদিকে,দেখতে পাচ্ছিস...
-উফফ!এবার গ্যাসের সিলিন্ডার দেখতে পাচ্ছি!আরে ফোন এত ঘোরাতে হবে না।তোমার ফোনের ব্যাক-ক্যামেরা অন করা,শুধু ফ্রন্ট-ক্যামেরাটুকু অন করো!!তা হলেই হবে...
-সে আবার কিভাবে করবো?
হাসতে-হাসতে উঠে এলো ঝোরা...
-আন্টি আমাকে দিন!আমি দেখিয়ে দিচ্ছি!
-এই নাও তো!এসব ফোন কি আমাদের হাতে ভালোলাগে!না আমরা কিছু বুঝি এসবের...এইসব হাতজোড়া ফোন তোমাদের মতো ছেলেমেয়েদের হাতেই মানায়...
-কে এসেছে মা!!
অস্থির হয়ে পড়লো প্রিয়ম।এই কণ্ঠস্বরটুকু শোনার জন্যই গত তিনদিন ধরে অপেক্ষা করে-করে ও আধমরা হয়ে গেছে।কিছুতেই সে ফোন ধরেনি,ফোন করেওনি।আর আজ ওখানে মায়ের সঙ্গে বসে আছে!!
-ওই তো ঝোরা এসেছে!
বলেই অপর্ণা ফোনটা এগিয়ে দেয় ঝোরার দিকে...
-গ্যাসটা বন্ধ করুন আন্টি!দুধটা উথলে পড়ে যাবে...এবার এদিকে আসুন!কিছুই না,এটাকে ক্লিক করলেই ফ্রন্ট-ক্যামেরা ওপেন হয়ে যাবে।
প্রিয়মের চোখে জল এসে গেলো।তিনদিন পর ও ঝোরাকে দেখতে পেলো।বেল বেজে ওঠায় অপর্ণা ছুটলো দরজার দিকে....ওর ছাত্রছাত্রীরা পড়তে এসে গেছে।
-এখন রাখ পাপাই!রাতে কথা হবে...
প্রিয়মের আর সেসব কোনো কথা কানে ঢুকলো না।ও একভাবে চেয়ে রয়েছে ঝোরার দিকেই।মেয়েটা তো আর ফোনটুকুও করবে না।সৌভাগ্যক্রমে একটু সুযোগ যখন পাওয়া গেছে,যতটুকু চোখের দেখা দেখে নেওয়া যায়...ঝোরা কোনোরকমে বললো,
-প্রিয়ম,আন্টি এখানে নেই।রাতে তোমায় ফোন করবে।রাখছি....
-ঝোরা,এক মিনিট?
-বলো!
-ভালো আছো?
-হুম!
-তুমি কিছু কথা দিয়েছিলে আমায়!
-প্রিয়ম!কি করছো তুমি?হেডফোন নেই...আন্টি এখানেই আছে...
-ওকে-ওকে!সরি!!সরি!একবার তো একটু ফোন করতে পারো ঝোরা...
-আমি রাখছি!
আঙুলের মৃদু ছোঁয়ায় ঝোরা প্রিয়মকে আবারও ঠেলে দিলো সহস্র যোজন দূরে।কেটে দিলো লাইনটা....
-দিদি,ভালো আছো?
-হ্যাঁ তীর্থ!তুমি ভালো আছো ভাই?
-হ্যাঁ দিদি!
একটু হেসে তীর্থ মাথা নীচু করে পাশের ঘরে চলে গেলো।শতরঞ্চিতে গিয়ে বসলো...
-আন্টি,এবার আমি আসি!কাজের সময় আপনার অনেকটা সময় নষ্ট হলো।
-কি যে বলো!মাঝে-মাঝে চলে আসতে পারো তো।শনি-রবিবার সন্ধ্যেগুলো তো একাই থাকি।আর যা জায়গা,বিকেলের পর ছেলে আর একা বাইরে বেরোতেও বারণ করে।বলে,তোমার যা দরকার কাকাকে দিয়ে আনিয়ে নেবে।আমিও আর একা মানুষ বলে বেরোতেও ইচ্ছে করে না।তুমি কিন্তু একটু সময় পেলেই চলে এসো...
-আসবো আন্টি!আজ এলাম!
-আচ্ছা!!এসো!
ঝোরা বেরোনোর সময় দেখলো,বেশ কয়েকটা ছেলেমেয়ে ধীরে-ধীরে ঢুকছে...বাইরে বেশ অনেকগুলো জুতোর মধ্যে থেকে নিজের জুতোজোড়া বের করে পরে নিলো ঝোরা...তারপর এগিয়ে গেলো লিফটের দিকে...কানে বাজছে সেই হাহাকার,
"তুমি কিছু কথা দিয়েছিলে আমায়.....একবার তো একটু ফোন করতে পারো..."
লিফটে উঠেই বারো নম্বরে আঙুল রাখলো ঝোরা...
করবেই না ঝোরা ফোন।রাখবেই না যোগাযোগ।বুঝে গেছে প্রিয়ম।আর কি করবে!এতদিন ওর ফোনের অপেক্ষা করে-করে রাত জেগেও প্রিয়মের এত কষ্ট হয়নি।আজ ও মুখের ওপর ফোন রেখে দেওয়ায় যা কষ্ট হচ্ছে....সন্ধ্যে থেকেই মেজাজটা বিগড়ে রয়েছে।উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশে মুখটা ঠেসে দিলো প্রিয়ম...
কানের সবকটা দুল খুলে ফেললো ঝোরা।ছোট্ট নোজ-পিনটা নিয়ে নাকের মাঝে পরলো।বেশ ভালোই তো লাগছে।চুলটার জন্য একইসঙ্গে মডার্ন আর নাকেরটার জন্য ট্রাডিশনাল লাগছে...নিজেকে এভাবে দেখে ভালোই লাগলো ঝোরার।আগে নাকের মাঝে ও কোনোদিনও কিছু পরেনি।কেমন যেন নাক সুড়সুড় করতো।আজ আর খুলতেই ইচ্ছে করলো না।নিজের মুখাবয়বের একটা ছবি তুললো ঝোরা....
কিছুতেই ঘুম আসছে না প্রিয়মের।বেশ অনেকদিনই হয়ে গেছে,ঘুমের ওষুধের সঙ্গে ওর কোনো সম্পর্ক নেই।এতদিন তবু একটা আশা ছিলো।কিন্তু আজ যেভাবে ঝোরা মুখের ওপর ফোনটা রেখে দিলো,আর কোনো আশা নেই।তাই আজ নিতেই হবে।বিছানা ছেড়ে উঠে ড্রয়ারের দিকে হাত বাড়ালো ও...সেই মুহূর্তেই বেজে উঠলো ফোনের মেসেজ-টোন!একহাতে ঘুমের ওষুধ নিয়ে আর এক হাতে ফোনটা নিলো প্রিয়ম।প্রেরকের নাম দেখেই ওষুধটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো টেবিলে,তাড়াতাড়ি খুললো মেসেজটা....
একটা ছবি!তার ছবি....কান একেবারে ফাঁকা।নাকের মাঝে একটা রুপোলি নোজ-পিন!মাথার ছোট চুলগুলো একেবারে এলোমেলো,চোখের কোণে গভীর করে কাজল টানা!!সবুজ রংয়ের একটা হাতকাটা জামা মতো পরে রয়েছে সে...শুধু হাতের কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে।গলার একটু নীচ থেকে কেটে গেছে ছবিটা...প্রিয়মের চোখ আটকে গেলো,কাজল কালো দুটো চোখ আর নাকের মাঝের ওই এক টুকরো অলংকারে....
চোখে জল এসে গেছে প্রিয়মের।ঝাপসা হয়ে গেলো ঝোরার ছবিটাও...কিন্তু মুখে সুন্দর একটা হাসি।নিজের অজান্তেই নীচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরলো প্রিয়ম...তাড়াতাড়ি মেসেজ করলো...
"Can I call?"
যেন ওদিকের মানুষটাও এটুকুই বার্তার অপেক্ষাতেই ছিল।সেই মুহূর্তেই উত্তর এলো,
"Ok"
সঙ্গে-সঙ্গে ফোনটা কানে ধরলো প্রিয়ম।রাত তখন সাড়ে-বারোটা...
-বলো...
-তোমায় ভীষণ সুন্দর লাগছে ঝোরা!
-তাই?
-হুম!
-থ্যাঙ্কু ঝোরা!আমার অনুরোধটুকু রাখার জন্য...
-হুম!
অপার নিস্তব্ধতা...কোনদিক থেকেই আর কোনো কথা নেই,কিন্তু তবু কোনো শুন্যতাও নেই...ওরা একে-অপরকে আবৃত করে রেখেছে,পরস্পরের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মৃদু শব্দের মাধ্যমে...
-ঝোরা?
-হুম!
-কিছুনা!আমি ভেবেছিলাম,তুমি বোধহয় আর যোগাযোগ রাখবেই না...
-রাখবো নাই তো!আজ শুধু একটু...
আর বলতে পারলো না ঝোরা,বলতে পারলো না,যে আজ শুধু একটু দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম।আর থাকতে পারছিলাম না প্রিয়ম...
-কেন রাখবে না?
-যা হয় না,সেই পথে না এগোনোই ভালো প্রিয়ম।তাতে দুজনেরই কষ্ট বাড়বে ছাড়া কমবে না...আমি তোমাকে শেষ করতে পারবো না!
-কি হয় কি না হয়,এত হিসেব করে জীবনে বাঁচা যায় না ঝোরা।শুধু ভাসিয়ে দাও না নিজেকে....
-না!আর না!কিছুতেই না প্রিয়ম!!
কেঁদেই ফেললো ঝোরা...
-ওকে-ওকে!সরি!কেঁদো না প্লিজ,চুপ করো।আমি এখন তোমার সামনে নেই ঝোরা,তোমার কাছে নেই।তাই তোমাকে থামাতেও পারবো না।প্লিজ তুমি কেঁদো না!তাতে আমার আরও কষ্ট হবে...
-প্রিয়ম?
-বলো!
-কোরো না এসব!আমি....আমি...
-কি?বলো?
বুকের মধ্যে কথাটা আর চেপে রাখতে পারছে না ঝোরা।প্রিয়ম দূরে বসেও প্রতিনিয়ত আঘাত হানছে ওর হৃদপিন্ডে।কিছুতেই যে ওই পুরুষ বেরোচ্ছে না ওর মন থেকে,মস্তিষ্ক থেকে।নিজেকে চারিদিক থেকে প্রতিনিয়ত যে কঠিন অবরণে আবৃত রাখে ঝোরা,সেই আবরণ ভেঙে ফেলেছে প্রিয়ম।ভেঙেছে অনেক আগেই,এবার প্রিয়ম প্রবেশ করছে ওর হৃদয়ের অন্তঃস্থলে।আর ওকে কিছুতেই আটকাতে পারছে না ঝোরা,নিজেকেও যে আটকাতে পারছে না।ও বলেই ফেললো,
-প্লিজ-প্লিজ!!আমি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি প্রিয়ম!!প্লিজ ডোন্ট ডু দিস!আমার কিন্তু কিচ্ছু হবে না।আমি সবকিছু থেকে বেরিয়ে যেতে পারি।আমার মন বলে কিচ্ছু নেই,আবেগ-অনুভূতি মরে গেছে বহু-বছর আগেই।কিন্তু তুমি শেষ হয়ে যাবে।আমার মতো মেয়েকে ঘরে তোলা যায় না প্রিয়ম...
-কেন যায় না?কোথায় আটকাচ্ছে ঝোরা?সেসব আমি বুঝে নেবো... তুমি শুধু আমার সঙ্গে একটু যোগাযোগ রেখো।এই ফোন ছাড়া,দিনের শেষে এইটুকু কথা ছাড়া,তোমাকে জানার আর তো কোনো উপায় নেই বলো!তুমি কোথায় আর আমি কোথায়...দূরত্ব বড় কঠিন জিনিস ঝোরা।আমি চাই না দূরত্ব আমাদের শেষ করে দিক।আমি শুধু তোমাকে জানতে চাই!বাকিটা আমি বুঝবো!সব ভাবনা পরে ভাবা যাবে।আমি ভাববো!আমার ওপর ছেড়ে দাও!প্লিজ ঝোরা....
-না প্রিয়ম প্লিজ!আমাকে পুরোপুরি জানলে সবার আগে তুমিই মুখ ফিরিয়ে নেবে...
কানে ফোন ধরে বালিশে নিজেকে ঠেসে দিলো ঝোরা।কেঁদে উঠলো হাউহাউ করে।কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো প্রিয়ম...তারপর বললো,
-ভুল!
-ভুল!!কি ভুল!
-তুমি বললে তোমার মন-আবেগ-অনুভূতি সব মরে গেছে!ভুল বললে ঝোরা।হয় তুমি এখনও নিজেই নিজেকে সম্পূর্ণভাবে জানো না,নয়তো ভুল জানো!!একটা কথা আগে আমায় বলো তো তুমি,এত কাঁদছো কেন?
-জানি না প্রিয়ম....আমি কিচ্ছু জানি না!
-আমি জানি!তুমি কষ্ট পাচ্ছ!!কারণ তোমার মন ব্যথিত।তার মানেই তোমার মন আছে।আর আবেগ-অনুভূতি আছে বলেই চোখ থেকে জল বেরোচ্ছে...তুমি তো মরে যাওনি ঝোরা...তুমি মৃতপ্রায়!!কঠিন ঝোরার ভিতরে কোমল শ্রী এখনও বেঁচে আছে...চিরসবুজ শ্রী!!আজ যে গাছটাকে মৃত-শুকনো লাগছে,পৃথিবীর চোখে যে মৃতদেহ,যাকে পরিপাটি-নিখুঁত সুন্দর বাগান থেকে উপড়ে ফেলার জন্য সবাই তৈরী,এমনকি তুমি নিজেও সেটাই চাইছো,সে কিন্তু পুরোপুরি মৃত নয় ঝোরা!একটু ভালো করে দেখো,তার মধ্যেও একটু স্পন্দন এখনও আছে।নিজেকে তিল-তিল করে গড়ার বদলে শেষ করতে চাইছো তুমি....কিন্তু আমি জানি ঝোরা,একটু যত্ন পেলেই কাল কিন্তু ওই শুকনো গাছ থেকেই আবার সবুজ পাতা বেরোবে,একদম নতুন পাতা,নরম-কমনীয়!!তখনই কিন্তু সেই সবুজকে স্পর্শ করা যাবে না ঝোরা।তাকে পরিণত হতে দিতে হবে।সময় দিতে হবে তাকে....তবেই আবার সৃষ্টি হবে নতুন অধ্যায়!!ধীরে-ধীরে আবার সেই সবুজ পাতা,এক থেকে একাধিক হবে।যে গাছটাকে একদিন মৃতদেহ ভেবেছিলে তুমি,দেখবে একদিন সেই গাছেই সবুজ পাতার সম্ভার,সবুজায়নের সম্ভার দেখে,তুমি নিজেই অবাক হবে!!একদিন সেই মহীরুহের প্রত্যেকটা সবুজ পাতা পরস্পরকে আলিঙ্গন করবে....বসন্তের মৃদুমন্দ বাতাসে দুলবে,বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে ভিজবে,শেষ রাতের শিশির সবুজ পাতায় ধরে রাখবে,আবার প্রখর রোদে ক্লান্ত হয়েও নুইয়েও পড়বে।কিন্তু তবু শেষ হওয়ার কথা ভাববে না....উপযুক্ত সময়ে,আবারও গাছের সবুজের ফাঁকে-ফাঁকে রঙিন ফুল ফুটবে ঝোরা....
প্রিয়মের এটুকু কথাতেই হৃদপিন্ড বিদীর্ণ করে কান্না বেরিয়ে এলো ঝোরার ভিতর থেকে...ও কান থেকে ফোনটা নামিয়ে পাশে রাখলো,দুহাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলো...
-হ্যালো ঝোরা...ঝোরা....
ওকে একটু সময় দিলো প্রিয়ম।ঝোরা আবার ফোন ধরলো,কাঁদতে-কাঁদতেই ডাকলো,
-প্রিয়ম?
-এইতো,এখানেই তো আছি আমি।বলো!
-আমি মরে গেছি প্রিয়ম!
-অসম্ভব!আমি বিশ্বাস করি না!
-আর পারবো না আমি!
-দরকার নেই তো পারার।সবসময় যে পারতেই হবে,এমন তো কোনো কথা নেই।তবে চেষ্টাটুকু তো করাই যায়!তুমি শুধু আমার সঙ্গে একটু যোগাযোগ রেখো।আমি তো তোমায় জোর করতে পারবো না বলো....বড়জোড় অনুরোধ করতে পারি।প্লিজ!!আমায় একটু সময় দাও,তুমি যে কতটা ভুল,আমি তা প্রমাণ করে দেবো।শুধু একটু সময় দাও আমায়...
চুপ করে রইলো ঝোরা...
-ঝোরা?
-হুম?
-একটু ভালো আছো এখন?
হেসে ফেললো ঝোরা।আজকাল আর একদম কাঁদে না ঝোরা।প্রিয়ম বেশ অনেকদিন বাদে ওকে কাঁদিয়ে ছেড়েছে...আর তাতেই বেশ অনেক বছরের চেপে রাখা ব্যথা কিছুটা বেরিয়ে গেছে....একটু হেসে ঝোরা বললো,
-হুম!ভালো আছি প্রিয়ম!
-আগের চেয়ে ভালো তো?
-হুম!অনেক-অনেক ভালো!
-তুমি আরও ভালো থাকবে ঝোরা।ইউ ডিসার্ভ টু বি হ্যাপি!
-কার সঙ্গে?
-ভালো থাকতে কি কারোর সঙ্গ প্রয়োজন হয় ঝোরা?নিজের সঙ্গেও তো ভালো থাকা যায়!তুমি নিজের সঙ্গেই ছিলে,নিজের বৃত্তেই ছিলে।শুধু ভালো ছিলে না।এবার আমি শুধু তোমায় ভালো থাকা শিখিয়ে দেবো...
-কিভাবে?
-এখন কেন বলবো?রোজ অল্প-অল্প করে তোমার ক্লাস নেবো!একটু-একটু করে শেখাবো...
হেসে ফেললো ঝোরা...
-আর তারপর?
-তারপর কি?
-পরীক্ষা নেবে আমার?সারা বছর ক্লাসে কি পড়লাম,সেই হিসেব নেবে না?
-নাঃ!!আমার কাজ তো পড়ানো!ক্লাস নেওয়া।পড়ার তাগিদ,শেখার তাগিদ তো তোমার...তুমিই না হয় একদিন আমায় বলে দিও,আমি ঠিকঠাক শেখাতে পারলাম কিনা!!শেখানোর পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হলাম কিনা!!
-তাই?
-হুম!তাই তো...এই ঝোরা?
-হুম?
-সিলভার নোজ-পিনটা কোথা থেকে কিনলে?আমি ওখানে থাকতে-থাকতেই তো কিনতে পারতে।আমি কিনে দিতাম...অবশ্য চুলটা কাটলেই তো একেবারে শেষ দিনে।সময় আর ছিলো কই?
চুপ করে রয়েছে ঝোরা....প্রিয়ম কলকল করে বকে যাচ্ছে...ভালোলাগার আবেশে দুটো চোখ বন্ধ করে ফেললো ঝোরা....হোক!যা হচ্ছে হোক!!যা হচ্ছে,এখন তো ভালো লাগছে।পরে যা হবে দেখা যাবে।ও বুঝে গেছে,এই পুরুষই ওকে শেষ করে ছাড়বে!আবারও...
দূরত্বের কারণে ঝোরা প্রিয়মের কাছেও যেতে পারছে না,আবার মানসিকভাবে ওর থেকে দূরেও সরে যেতে পারছে না।ও বহুদূরে থেকেও ওকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে....এতদিন ঝোরার হাত থেকে,ওর শরীরী আবেদন থেকে কোনো পুরুষ পার পেতো না।কেউ যদি বা পার পেতো,এড়িয়ে যেতো ওকে,ঝোরা তাকেও টেনে নিজের দিকে ফেরাতো।এবার বুঝি সেই ঝোরারই আর প্রিয়মের অদৃশ্য বন্ধন থেকে বেরোনোর ক্ষমতা নেই,বাঁধা পড়ে গেছে ও এই পুরুষের কাছে....
-ঝোরা?ওই....ওই মেয়ে...
কোনো সাড়া নেই....
-ঝোরা?
ফোনের ওপার থেকে ভেসে আসছে ঝোরার ভারী নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ!প্রিয়ম ফোনে দেখলো,রাত সাড়ে তিনটে বাজে।ওর নিজেরও এবার ঘুমে চোখ জ্বালা করছে।একটু আগেও কথা বলতে-বলতে ঘুমের চোটে কথা জড়িয়ে যাচ্ছিলো ওর নিজেরও।এখন বুঝি মেয়েটাও ঘুমিয়েই পড়েছে....ফোনটা একেবারে ঠোঁটের কাছে নিয়ে প্রিয়ম একবার মাত্র ডাকলো,
-"শ্রী!!"
তারপর আলতো করে চুমু খেলো নিজের ফোনে।একটু হেসে বললো,
-গুড নাইট শ্রী!উঁহু!গুড মর্নিং!সূর্যোদয় তো প্রায় হয়েই এলো।একটুখানি ঘুমিয়ে নাও...
ঝোরার হাত থেকে অনেক আগেই খসে পড়েছে ফোন।গভীর ঘুমরাজ্যে পাড়ি দিয়েছে ও...এবার প্রিয়মও ফোন রেখে দুটো চোখ একটু বন্ধ করলো।বড্ড ঘুম পাচ্ছে....
ঝোরার মেসেজ পেয়েই টেবিলের ওপর ঘুমের ওষুধটা ছুঁড়ে ফেলেছিলো প্রিয়ম।সেটা এখনও অপেক্ষমান,কখন তাকে প্রিয়ম গলাধঃকরণ করবে,সেই মুহূর্তের জন্য...কিন্তু আর প্রিয়ম সেদিকে ফিরেও চাইলো না।বালিশ আঁকড়ে ধরে পরম সুখনিদ্রায় ভেসে গেলো বিছানায়...
রাতের আঁধার সরিয়ে সূর্য তখন দিনের প্রথম কিরণটুকু ছড়িয়ে দিয়েছে দিগন্তবিস্তৃত আকাশে....কিন্তু আকাশের সেই রক্তিম রূপ দেখার জন্য,দুজনের কেউই তখন আর জেগে নেই।একটু বেলা বাড়তেই জানলার পর্দা ভেদ করে প্রখর সূর্যালোক এঁকেবেঁকে ওদের বিছানায় এসে পড়লো...
(চলবে....)
উপন্যাসটি আংশিকভাবে (প্রথম দশটি পর্ব) প্রকাশিত হবে। সংগ্রহে রাখতে whatsapp করতে পারো পাঠকবন্ধুর নম্বরে - 7439112665
এছাড়াও পাওয়া যাবে flipkart ও amazon এও।
বাংলাদেশ থেকে পাওয়া যাচ্ছে: Indo Bangla Book Shop - +880 1556-436147
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন