সপ্তপর্ণী
সাথী দাস
দ্বিতীয় খণ্ড
প্রথম পর্ব
লেলিহান চিতার আগুনে ও যুদ্ধ পরবর্তীকালে প্রায় ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া অমরাবতী রাজ্যের মধ্যভাগে অবস্থিত গগনচুম্বী রাজপ্রাসাদ। সেই প্রাসাদের অভ্যন্তরভাগে পৃথ্বীশের শয্যায় অবসন্নদেহী পর্ণা গভীরভাবে নিদ্রামগ্ন। অমরাবতীর সুবিস্তৃত নভোমণ্ডলে দর্শন মেলে না কোন বিহঙ্গ পরিবারের। সমগ্র আকাশব্যাপী কেবল বিধ্বংসী আগুনের শিখা, ধুম্রজাল ও চতুর্দিকে স্বজন হারানোর মর্মান্তিক আর্তি। অদূরে আপন উদ্যোগে ও স্বহস্তে অসংখ্য অস্থায়ী সেনা ছাউনি নির্মাণ করেছেন অমরাবতীর রাজসেনাধ্যক্ষ বীরদত্ত। প্রাথমিক চিকিৎসা চলাকালীন আহত ও অঙ্গহারা অজস্র সৈন্যদের যে প্রচণ্ড আর্তনাদ, তা পর্ণার কর্ণকুহরে প্রবেশমাত্র, তাঁর গভীর নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটল। চক্ষুদ্বয় উন্মোচনপূর্বক তিনি আপন প্রেমাস্পদের শয্যা আলিঙ্গন করে, দীর্ঘক্ষণ মৃতবৎ স্থবির হয়ে রইলেন। অতঃপর বীরদত্তের ব্যস্ত ও উদাত্ত কন্ঠ রানির কক্ষে প্রবেশমাত্র, রাজ্যের প্রয়োজনজ্ঞানে সুখশয্যা ত্যাগ করলেন মহারানি সপ্তপর্ণী। আপন রাত্রিবাস পরিত্যাগপূর্বক সবুজাভ আবরণ ও স্বল্প স্বর্ণালংকারে সজ্জিতা রানি আপন কক্ষদ্বার উন্মোচন করে রণসজ্জায় সজ্জিত বীরদত্তের সম্মুখে হাজির হলেন। দীর্ঘ অনিদ্রা ও অনাহারের কারণে হতচকিত পর্ণার দৃষ্টির সম্মুখে একাধিক বীরদত্তের মুখমণ্ডল নৃত্য করতে শুরু করল। প্রস্তরভূমির পানে ক্ষণিক দৃষ্টিপাত করে নিজেকে স্থির রাখার ব্যর্থ প্রয়াসে বিফল হয়ে মৃদুভাষে পর্ণা বললেন,
-যুদ্ধশেষেও এমন রণসজ্জার কারণ বীরদত্ত? হাতে অস্ত্র! কী তোমার অভিপ্রায়? আপন রাজ্যের উদ্ধারকার্য কী এখনও অব্যাহত? আমার সঙ্গে সম্মুখ সমরে উপনীত হতে চাও? অমরাবতীর সিংহাসনের প্রতি লুব্ধ তুমি! দেহে প্রাণ থাকতে আমি এই অমরাবতী রাজ্য পরিত্যাগ করব না। জটিল রাজনীতি তোমার মনের অভ্যন্তরে চলাকালীন, আমি তা অনুভবে সক্ষম বীরদত্ত।
অকারণ উত্তেজনা ও অস্থির বাক্যব্যয়ের কারণে পর্ণার দুর্বল দেহ ক্রমে শিথিল হয়ে এলো। কক্ষদ্বার মুষ্টিবদ্ধপূর্বক আপ্রাণ প্রচেষ্টায় নিজের অনিবার্য পতন রোধ করলেন তিনি। পর্ণার পদতলে বসে অবনত মস্তকে বীরদত্ত বলল,
-ক্ষমা করুন রানি। আমার এমন কোন অভিপ্রায় নেই। আপনার বিরুদ্ধাচরণের ন্যায় এইরূপ দুঃসাহসিক চিন্তা এই অমরাবতী রাজ্যে যে প্রজা আপন মনে পোষণ করবে, আমি স্বহস্তে তাকে নৃশংসভাবে বধ করব। আমি মহাসমাদরে আপনাকে এই রাজ্যের অধিষ্ঠাত্রীরূপে মনে স্থান দিয়েছি মহারানি সপ্তপর্ণী। আপন মনে এমন নীচ ভাবনা জন্ম নেওয়ার আগে, আমি সেই ভাবনাকে সমূলে উৎপাটন...
-তুমি রাজদ্রোহী বীরদত্ত! তোমার এ অতীত আমি বিস্মৃত হব না কোনোকালেই। আমার পশ্চাতে আমার সঙ্গেও যে অনুরূপভাবে...
-আমি রাজদ্রোহী, সত্য এ বাক্য! তবে আমি ধর্মত ন্যায়ের পক্ষ নিয়েছি। অমরাবতীর সকল প্রজাকে জীবনদান করেছি আমি। প্রভাকরবর্মন ও পরমেশবর্মনের অকথ্য অত্যাচার হতে মুক্তি প্রদান করেছি। আমিই এ রাজ্যের পরিত্রাতা। এই পুণ্যকার্য কি আমার রাজদ্রোহের ন্যায় পাপের স্খলন...
-কিছুমাত্র না! তুমি রাজদ্রোহী! তোমার পরনে রণসজ্জা, হাতে অস্ত্র! লোভী তুমি! তোমার পরবর্তী উদ্দেশ্য অমরাবতীর রাজসিংহাসন লাভ। আর সেই লোভ চরিতার্থ করতে, তুমি আমাকে হত্যার অভিপ্রায়ে...
-রানি মিথ্যা এ বাক্য! সমগ্র অমরাবতীর আরাধ্য দেবতা কালভৈরব ও প্রথম প্রভাতের সূর্যদেবের নামে শপথ করে আমি এই বাক্য... রানি!
অস্ত্র পরিত্যাগপূর্বক ভূপতিতা সপ্তপর্ণীর অচৈতন্য দেহ আপন বাহুডোরে তুলে চিৎকার করে উঠল বীরদত্ত,
-প্রহরী!
জনশূন্য অন্দরমহলের প্রতিটি প্রান্তে প্রতিধ্বনিত হল বীরদত্তের কন্ঠ। অনতিবিলম্বে বৃন্দার সাহায্যে রাজশয্যায় আশ্রয় নিলেন পর্ণা। রাজবৈদ্যের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে যখন কক্ষ মধ্যস্থিত সকলের মুখাবয়বে দুশ্চিন্তার মলিন ছায়া, তখন বৈদ্যের অনুরোধ ও আহ্বানে কক্ষ পরিত্যাগপূর্বক একান্তে গেল বৃন্দা। রাজবৈদ্য বিদায় গ্রহণের কিঞ্চিৎ পরই বৃন্দার সম্মুখে হাজির হয়ে বীরদত্ত বলল,
-মহারানি পর্ণা কী কোন কঠিন অসুখে আক্রান্ত বৃন্দা? এত গোপনীয়তা কেন? কোন বিলুপ্তপ্রায় মহৌষধি, কোন জড়িবুটি যদি...
-এ বড় কঠিন অসুখ বীরদত্ত। এই রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় একপ্রকার অসম্ভব! নির্দিষ্ট সময়ে এই রোগ নারীদেহ পরিত্যাগপূর্বক, দীর্ঘকালব্যাপী অপরিবর্তিত এক স্থায়ী চিহ্ন উপহারস্বরূপ রেখে যায়।
-মহারানি পর্ণার জীবন বিপন্ন? আমি কীরূপে সাহায্য করতে পারি বৃন্দা? কোনভাবে নিরাময়...
-সম্ভব নয় বীরদত্ত। পুরুষ দ্বারা এই রোগের সূত্রপাত নারীদেহে ঘটলেও, কোন পুরুষ এই রোগের প্রকোপ হতে নারীকে উদ্ধার করতে অক্ষম। প্রকৃতির নিয়মানুসারে সঠিক সময়ে নারী নিজেকে মুক্তিপ্রদান করবে। বীরদত্ত, এই রোগের নাম মাতৃত্ব। আজ জ্বলন্ত অমরাবতীর অগণিত গণচিতা দর্শনের পর এই বাক্য বলতে মন বড় ব্যথিত হয়, যে এমন সুখবর প্রাপ্তিতে খানিক আনন্দ করুন! সমস্ত রাজ্যে আগামী এক পক্ষকালব্যাপী আনন্দ উৎসবের কথা ঘোষণা করুন। সম্ভব নয়! স্বজনের বিয়োগব্যথায় কাতর অজস্র প্রজা। এমতাবস্থায় আমি দরাজ কণ্ঠে ঘোষণা করতে পারি না নতুন অতিথির আগমনবার্তা। তবে অভিজ্ঞ রাজবৈদ্য এমনই সুখবরের আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করা যায়, কিছুকালের মধ্যে আমাদের মহারানি আপন দেহের অভ্যন্তরে নতুন প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করতে সক্ষম হবেন। বীরদত্ত, আপনি এই মুহূর্তে অন্দরমহল পরিত্যাগ করুন, আমি আপনাকে জোড়হস্তে অনুরোধ করছি। রানির স্বাস্থ্যের বিষয় চিন্তা করে আমি কিছুকালব্যাপী রাজকার্য স্থগিত রাখার নির্দেশ দিলাম। যথাসময়ে আপনাকে আহ্বানপূর্বক রাজ্য ও রাজকার্য বিষয়ক প্রয়োজনীয় আলোচনাসভার আয়োজন, এই অন্দরমহলেই করা হবে। এখন পর্ণার বিশ্রামের প্রয়োজন। পর্ণার সুসংবাদ এই মুহূর্তে প্রজার দরবারে ঘোষণার প্রয়োজন নেই। পর্ণার নির্দেশানুসারে যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে। সেই ক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে এই সংবাদ জনসমক্ষে গোপন রাখার বিনীত অনুরোধ করছি।
অবনত মস্তকে পর্ণার সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী বৃন্দাকে নীরব অভিবাদন জানিয়ে সেই স্থান শীঘ্রই পরিত্যাগ করল বীরদত্ত। পর্ণার অন্দরমহল হতে নির্গত হয়ে অস্থিরচিত্তে তিনি অগ্রসর হলেন সেনা ছাউনির উদ্দেশে...
কিছুকাল পর পুনরায় পরস্পরের সম্মুখীন হলেন পর্ণা ও বীরদত্ত। সামান্য বৈষয়িক আলাপ আলোচনার পর কক্ষ হতে সকলকে বিদায় করলেন পর্ণা। বৃন্দাও কক্ষ পরিত্যাগ করলে, পর্ণা আপন শয্যাপ্রান্তে বীরকে আহ্বান জানালেন। পর্ণার পানে অগ্রসর হয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখল বীর। সচকিত পর্ণা বীরদত্তের পানে স্থির দৃষ্টিনিক্ষেপপূর্বক বললেন,
-আজ এমন পোশাক?
-পূর্বদিন আপনি আমার পোশাক দর্শনমাত্র উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। মূর্ছা গিয়েছিলেন।
-সেই কারণেই পোশাকের পরিবর্তন?
-আমার কারণে আপনার বিন্দুমাত্র অসুবিধা অনভিপ্রেত রানি। সেইক্ষণে ক্ষমা প্রার্থনার মতো কিঞ্চিৎ সময়ও আমার নাগালে ছিল না। এই ক্ষণে ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক আপনাকে অবগত করতে চাই, মহান অমরাবতী রাজ্যের রাজ সেনাধ্যক্ষের পোশাকই পূর্বদিন আমার দেহে ছিল। কাঞ্চনগড় ও অমরাবতীর ক্রমাগত এবং ক্রমবর্ধমান বিবাদ-যুদ্ধবিগ্রহের কারণে আমাদের ও প্রথম শ্রেণীর সেনা ছাউনির সকল সৈন্যদের সদাসর্বদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ ছিল। যুদ্ধে পারদর্শী অশ্ব ও মাতঙ্গবাহিনী প্রস্তুতপূর্বক আমরা সারাবছরব্যাপী সমর নামক ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করতে বাধ্য হতাম। এই অমরাবতী রাজ্যের সুবিস্তৃত প্রাঙ্গনে বহু নিষ্পাপের রক্তক্ষয় ও জীবনহানি ইতিপূর্বে হয়েছে রানি। কিন্তু সেই সকল বিষয়ে অতিরিক্ত বার্তালাভ এইক্ষণে অনুচিত।
-কেন?
-আপনার দেহ ও মনকে এই সুসময়ে আমি যুদ্ধের গল্পকথা বলে অকারণে বিচলিত করতে অসম্মত রানি! আপনি উদ্বিগ্ন হবেন। আপনার ও আপনার অনাগত সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। আমার দেহে প্রাণ থাকতে, আপনাকে ও আপনার সন্তানকে আমি সকল বিঘ্ন ও বিপত্তি হতে উদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর। শুধু একটিমাত্র আর্জি!
-বলো?
অবনত মস্তক বীরদত্ত বলল,
-পূর্বদিন আমি আপনার নিকট একটি বিষয়ে আলোচনা করতেই...
-কী বিষয়?
-মহান অমরাবতী রাজ্য পরমেশবর্মনের একাধিপত্য ও অত্যাচার হতে চিরমুক্তি লাভ করেছে। নিপীড়িত প্রজা আজ আপনার ছত্রছায়ায় সুখে দিন যাপন করছে। আমি সামান্য রাজভৃত্য। এই ক্ষণে আমার দায়িত্ব কী রানি? আপনি কী আমায় পদচ্যুত করবেন? অমরাবতীর সকল সভাসদ আপনার কথানুসারে নবরূপে অলংকৃত করবেন রাজদরবার। তাদের পদ বা পদোন্নতি...
-তুমি এই সুবিশাল অমরাবতী রাজ্যের রাজসেনাধ্যক্ষ। সেই পদ সম্মানের সঙ্গে শুধুমাত্র তোমারই থাকবে। আর সেই সঙ্গে কিছু অতিরিক্ত দায়িত্বভার আমি তোমার ওপর অর্পণ করতে ইচ্ছুক বীরদত্ত।
-আপনার অর্পণ করা সকল ভার সানন্দে গৃহীত হবে রানি। কেবলমাত্র ইচ্ছেপ্রকাশ নয়, আপনি আদেশ করুন! আপনার মুখনিঃসৃত প্রত্যেক বাক্য আমার নিকট কালভৈরবের স্বপ্নাদেশের ন্যায় অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। আদেশ করুন!
-আজ এই ক্ষণ হতে, তুমি আমার দেহরক্ষী পদে নিযুক্ত হলে। সম্মত?
-আপনার দেহরক্ষী? সর্বক্ষণ আপনারই সঙ্গে থাকার অনুমতি...
-তুমি অসম্মত বীর?
অশ্রুসজল দৃষ্টি গোপন করে বিগলিত কণ্ঠে বীরদত্ত বলল,
-এই সম্মান ও এই গুরুদায়িত্ব আমি আজীবন বহন করতে ইচ্ছুক মহারানি পর্ণা।
-বেশ!
মৃদুহাস্যে পর্ণা বীরদত্তের পানে দৃষ্টিনিক্ষেপ করলেন। প্রভাতী সূর্যালোক পর্ণার মলিন রোগক্লিষ্ট দেহকে অপরূপ রূপদানপূর্বক বীরের দৃষ্টিপথে, একটি সতেজ পদ্মফুলের ন্যায় প্রস্ফুটিত করেছে। বীরদত্ত সামান্য বাক্য বিনিময়ের ইচ্ছায় আপন ওষ্ঠ ও অধর চালনামাত্রই স্থির হয়ে গেলেন। সতর্ক পর্ণা সহজেই বীরের ওষ্ঠের অস্থির কম্পন অনুধাবন করলেন। সেই ক্ষণে পর্ণা বললেন,
-কিছু বলতে চাও?
-আপনার মুখনিঃসৃত সকল বাক্য বড় মধুর। কেবল একটিমাত্র শব্দ আমার মনকে বড় পীড়া দেয় রানি। রাজদ্রোহী নই আমি!
-আমি এই ক্ষণে সমগ্র অমরাবতীর মহারানি, তা তোমার রাজদ্রোহের কারণেই বীরদত্ত। যে ইতিহাস তুমি স্বহস্তে রচনা করেছ, সেই ইতিহাসকে তুমি আর কোনোকালেই অস্বীকার করতে পারবে না। বীরদত্ত রাজদ্রোহী, এ বাক্য চন্দ্র সূর্যের ন্যায় সত্য!
-এই রাজতন্ত্রের প্রতি গভীর আনুগত্য আমার দেহের প্রতিটি প্রান্তে খোদাই করা করা রয়েছে রানি! আমি এই রাজ্যের স্বার্থরক্ষায় ইতিপূর্বে একাধিকবার আপন জীবন বিপন্ন করেছি।
-তোমার বীরত্বের কথা অবশ্যই ইতিহাস স্মরণে রাখবে। তুমি এখন এসো বীরদত্ত। আমি অবিলম্বে স্নানঘরে প্রবেশ করব।
-কালভৈরব...
-না। আরাধ্যা দেবী মহাভৈরবী অমরাবতীর সকল প্রজার সহায় হোন। অমরাবতী থাকুক শত্রুমুক্ত। মাতৃতান্ত্রিক রাজ্য কোন পুরুষের আরাধনা করবে না বীরদত্ত। মায়াকানন, কাঞ্চনগড় এবং অমরাবতী, এই তিন রাজ্যে পূজিতা হবেন দেবী মহাভৈরবী। অবিলম্বে মাতার সুউচ্চ ও নয়নাভিরাম প্রস্তরমূর্তি নির্মাণ করার নির্দেশ দিলাম।
-যথা আজ্ঞা রানি।
-কালভৈরবের অস্তিত্ব সকল প্রজার স্মৃতি হতে বিলুপ্তির দায়িত্ব তোমার।
-আমি আমার কর্তব্য অবিলম্বে পালন করতে বদ্ধপরিকর। মহাভৈরবী সহায় হোন।
-অমরাবতী থাকুক শত্রুমুক্ত।
কয়েক পক্ষকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর, আপন কক্ষের প্রস্তরনির্মিত দেওয়ালে পৃথ্বীশের সুবৃহৎ তৈলচিত্রের পানে অপলক দৃষ্টিতে চেয়েছিলেন পর্ণা। সন্ধ্যার প্রাক্কালে অমরাবতীর আকাশে মেঘের ঘনঘটা। সমগ্র নভোমণ্ডল জুড়ে কেবল মুহুর্মুহু বিদ্যুতের চমক। পর্ণা আপন দুই চক্ষু মুদলেন। ফিরে গেলেন আপন রাজ্য মায়াকাননে। আয়তনে ও ক্ষমতায় অমরাবতী রাজ্য মায়াকানন অপেক্ষা সুবিশাল। তবে প্রকৃতির অপার কৃপায় মায়াকাননের নৈসর্গিক দৃশ্যের নিকট অমরাবতী অত্যন্ত ক্ষুদ্র। পর্ণার আপন কর্ণকুহরে মহাভৈরবী মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি যেন বারংবার প্রতিধ্বনিত হল। স্ফীত উদরে নতুন প্রাণ আপন স্বস্তিত্ব জানান দেয় প্রতিক্ষণে। রাতের প্রতি প্রহরে গর্ভ মধ্যস্থিত ওই শিশুটিকে আলিঙ্গন করে পর্ণা প্রত্যেকটি কালরাত্রি একাকিনী যাপন করেন। আপন সিক্ত গন্ডদেশ দক্ষিণ হস্ত দ্বারা স্পর্শ করামাত্র কক্ষের বাইরে প্রহরী উচ্চৈঃস্বরে জানান দিল বীরদত্তের আগমনবার্তা। দেহ হতে খসে পড়া অবিন্যস্ত উত্তরীয় দ্বারা আপনাকে আচ্ছাদিত করে কক্ষের সম্মুখ দ্বারের পানে পর্ণা ফিরলেন। বীরদত্ত এসে নতমস্তকে পর্ণাকে সান্ধ্য অভিবাদন জানালেন।
-প্রহরী মুখে এই সংবাদ অবগত হলাম, বড় জরুরি তলব! আজ্ঞা করুন রানি!
-আমি মায়াকাননে ফিরে যেতে চাই বীরদত্ত। আমার প্রস্থানের সকল ব্যবস্থার ভার...
-আপনি অমরাবতী পরিত্যাগ করবেন পর্ণা! ক্ষমা করবেন, মহারানি পর্ণা!
-না। আমি কেবল আপন রাজপ্রাসাদে রাজমাতা নলিনীদেবীর প্রসূতিগৃহে এই সন্তানকে জন্ম দেওয়ার একান্ত ইচ্ছে মনের গভীরে পোষণ করি। এই শুভক্ষণে রাজমাতা জীবিত থাকলে, তিনি এমন গর্ভাবস্থায় আমাকে কত সোহাগ করতেন! আমি তার প্রসূতিগৃহে পৌঁছে প্রসববেদনা উপভোগ করতে ইচ্ছুক। রাঙা মা গত হয়েছেন। উত্তরা ও ফাল্গুনী মাতৃস্নেহে আমার কন্যাকে আপন করে নেবে। এই স্থানে আমার আপনজন, আমার প্রিয়পাত্রবৃন্দের বড় অভাববোধ করি বীরদত্ত। তুমি আমার যাত্রার আয়োজন করো।
-অমরাবতীর রাজসিংহাসন শূন্য হয়ে যাবে রানি। অভিভাবকহীন অবস্থায় এই সুবৃহৎ রাজ্য...
-আমি শীঘ্রই অমরাবতীর উত্তরাধিকারিণীকে নিয়ে এই রাজ্যে ফিরব।
-এই যদি আপনার সদিচ্ছা হয়, তবে আমাকেও আপনার সঙ্গে মায়াকাননে গমন করার অনুমতি প্রদান করুন রানি। আমি আপনার দেহরক্ষী। এমন অবস্থায় আপনার নিকট সর্বক্ষণ উপস্থিত থাকা ও আপনাকে রক্ষা করা আমার একমাত্র কর্তব্য।
-আর অমরাবতী রাজ্য?
-আমার এক বিশ্বস্তের হস্তে অর্পণ করে যাব। প্রতি এক পক্ষকাল অন্তর এই রাজ্যে আমি ফিরে ফিরে আসব। আপনি ও অমরাবতীর ভবিষ্যৎ রানিকে সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত অবস্থায় দর্শন করে, প্রফুল্লচিত্তে আমি অমরাবতী রাজ্যে পুনরায় পদার্পন করব রানি। আপনার আগমনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত, এ রাজ্যকে শত্রুপক্ষের দৃষ্টি হতে রক্ষা করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার। কিন্তু কোনরূপ দায়িত্ব ও কর্তব্যের কারণে, নিজ হতে আমাকে বিচ্ছিন্ন করবেন না। রাজভৃত্যের এই সামান্য অনুরোধ অগ্রাহ্য করবেন না মহারানি। অধমকে আপনার সঙ্গে গমনের অনুমতি প্রদান করুন।
কিঞ্চিৎ চিন্তান্বিত পর্ণা বললেন,
-কাঞ্চনগড়?
-বৃন্দার অধীনে থাকবে। আপনি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী রানি। অবশ্যই এই বিষয় অবগত আছেন, অমরাবতীর অভ্যন্তরভাগে রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে অবস্থানপূর্বক এই সুবৃহৎ সাম্রাজ্য আপনি একাকী সুচারুভাবে পরিচালনা করতে অক্ষম। আপনার দৈহিক অবস্থা সঙ্গীন। ক্রমে আপনার স্বাস্থ্যের অবনতি আসন্ন। এমতাবস্থায় আপন বিশ্বস্ত হস্তে এক একটি রাজ্যের গুরুভার অর্পণ করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। বৃন্দা ব্যতীত দ্বিতীয় কে আছেন আপনার প্রাণাধিক প্রিয় ও বিশ্বস্ত সঙ্গী! মন্ত্রণালয়ে উপস্থিতি এই ক্ষণে অনাবশ্যক। আপনার ভগ্নস্বাস্থ্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিশ্রম সইতে পারবে না। আগামীকাল রাজকার্য সমাধাপূর্বক, আপনার কক্ষে একটি গোপন আলোচনাসভার অনুমতি দিন রানি। আমি এক মূর্খ সেনাধ্যক্ষ। তরবারি শিক্ষা ও অস্ত্রচালনা ব্যতীত দ্বিতীয় কোন বিষয়ে মতামত প্রকাশের স্পর্ধা আমার ন্যায় মূর্খের কল্পনাতীত। আপনাকে উপদেশ দেওয়ার মতো পুঁথিগত বিদ্যা আমার নেই। রাজ্যের রাজমন্ত্রী ও উপদেষ্টা আপনাকে সকল বিষয়ে বিস্তারিত পরামর্শ প্রদান করবেন বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। দেহ ভেঙে পড়ার পূর্বে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার রাজকার্যের সমাপ্তি প্রয়োজন মহারানি পর্ণা। পর্ণা?
হিমশৈল পর্বতমালার পানে অপলক দৃষ্টিপাত করেছিলেন পর্ণা। জোয়ারের সময়কাল ব্যতীত সমুদ্রদয়িতা রুদ্রাণীর প্রবল জলোচ্ছ্বাস পৃথ্বীশের কক্ষের অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত পর্ণার কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না। রাত্রির অন্তিম প্রহরে সমগ্র নভোমণ্ডল যখন চন্দ্রালোকে নিশ্চুপে অবগাহন করে, বিনিদ্র রাত্রি যাপনকালে আপন সঙ্গীকে মুহুর্মুহু আহ্বানের পর যে মুহূর্তে নিশাচর খেচর দম্পতির চক্ষুদ্বয় ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে যায়, বিশ্ব চরাচর স্তব্ধ হয় রাত্রির অন্তিম প্রহরে, সেই মুহূর্তে রাজশয্যায় একাকিনী পূর্ণযৌবনা পর্ণা আরও একটি অভিশপ্ত রাত্রিযাপন করেন। অদূরে প্রায় নিদ্রামগ্ন প্রহরীর সাড়া পেয়ে পর্ণা অবগত হয়, প্রথম প্রভাতের আর বড় বেশি বিলম্ব নেই। রাত্রির অন্তিম ক্ষণের নিশ্চিদ্র অন্ধকারে নিমজ্জিত অমরাবতী রাজ্যে কান পাতলে শোনা যায়, বাতাসে ভর করে ভেসে আসা সমুদ্রকান্তা রুন্দ্রাণীর নিদারুণ আস্ফালন। পর্ণার অবাধ্য মনটা সেই ক্ষণে পাড়ি দেয় মায়াকাননের সর্বাধিক গভীরতর অংশে। জলাশয়ের উপরিভাগে শতদলের ন্যায় প্রস্ফুটিত হয়ে আপন সর্বস্ব প্রেমাস্পদের চরণে অর্পণ করতে মরিয়া হয়ে পড়ে রাজ-ভিখারিনি পর্ণার দেহ। উদ্বেলিত নারীমন তীব্র যৌবনজ্বালার কারণে আপন প্রেমাস্পদের স্পর্শ সন্ধানে বড় কাতর হয়। পুরুষের বলিষ্ঠ ও নিবিড় আলিঙ্গনে শত-সহস্রবার আপন মরণসুখ কামনা করেন মহারানি পর্ণা। কিন্তু চক্ষু উন্মোচনপূর্বক পুনরায় শূন্য শয্যায় আপনাকে আবিষ্কার করেন রানি। ললাটের একাধিক রেখা ক্রমে বক্র হয়ে উঠল। মনে হল বহুদূর হতে এক উদাত্ত কন্ঠস্বর তার নাম উচ্চারণ করছেন বারংবার। কম্পিত দেহে নিকষ কালো মেঘে আবৃত হিমশৈল পর্বতমালার পাদদেশ হতে দৃষ্টি ফেরালেন পর্ণা। বিস্ফারিত নেত্রে উপলব্ধি করলেন বীরদত্ত একাধিকবার তার নাম ধরে আহ্বান করছেন। সম্বিৎ ফিরে পেতেই পর্ণা বললেন,
-বীরদত্ত!
-আপনার স্বাস্থ্য বুঝি অনুকূল নয় রানি! অতিরিক্ত বাক্যব্যয়ে আপনি ক্লান্ত। এই ক্ষণে বিশ্রাম গ্রহণ করুন।
-রাজ্যের সকল দায় দায়িত্ব অগ্রাহ্য করে, নিতান্ত সাধারণ প্রজা হয়ে ওই মায়াকাননে বিচরণ করতে তোমার মন চায় না বীরদত্ত?
-না। আমি পরম ধার্মিক রানি।
-তবে আমার একটিমাত্র আদেশে আপন আরাধ্য দেবতা কালভৈরবের মূর্তি ধূলিস্যাৎ করে ফেললে যে!
-আমার ধর্ম কোন নির্দিষ্ট পুরুষ বা নারীর মূর্তিপূজায় বিশ্বাসী নয় মহারানি পর্ণা। আমার ধর্ম নিরাকার। রাজকার্য আমার জীবনের একমাত্র কর্ম। আর আমার নিকট কর্মই পরম ধর্ম! আপনার সেবার নিজ ক্ষুদ্র জীবন উৎসর্গ করেছি আমি। আপনার ও আপনার গর্ভজাত সন্তানের জন্য আমার জীবন বলিপ্রদত্ত। এই কর্মেই আমার স্বস্তি, এই কর্মেই আমার মুক্তি! আপনার সঙ্গ ব্যতীত কেবল অমরাবতী ও মায়াকানন কেন, এই ত্রিভুবনের কোন প্রান্তে পৌঁছে, চরম বিলাসিতা ও রাজসুখেও আমি স্বস্তি পাব না। আপনার সঙ্গলাভেই আমার কর্মসুখ। আপনি আমার ধর্ম! আপনার সঙ্গত্যাগের অধিক যন্ত্রণা, আমার জীবনে আর দ্বিতীয়টি নেই। জীবনের অন্তিম ক্ষণ পর্যন্ত এই কর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে এই ভৃত্য বদ্ধপরিকর মহারানি পর্ণা। এই ভৃত্যকে কোনোকালেই আপনি পরিত্যাগ করবেন না, এ বাক্য একটিবার আপন ওষ্ঠ হতে উচ্চারণ করুন রানি! নিজ হতে আমাকে পৃথক করবেন না!
-মায়াকাননে আজও বৃষ্টি হয় বীরদত্ত?
-অবশ্যই হয় রানি। আপনি মায়াকানন যেতে আগ্রহী, আমি অবগত এই বিষয়ে। আমি সকল প্রকার আয়োজন করছি। রথ নয়, আপনি বেহারাকর্তৃক পালকিতে গমন করবেন। পথশ্রমে আপনি কিছুমাত্র ক্লান্তি অনুভব করবেন না।
আকস্মিক বিদ্যুতের দ্যুতি সমগ্র অমরাবতীকে প্রভাতের ন্যায় আলোকিত করে তুলল। শশব্যস্ত বীরদত্ত পর্ণার সম্মুখে পৌঁছে তার হাত ধরে বলল,
-রানি, এই স্থান পরিত্যাগ করুন। কক্ষে ফিরে চলুন। বৃষ্টি আসন্ন।
গভীর দৃষ্টি বীরদত্তের পানে নিবদ্ধ রেখে পর্ণা বললেন,
-ওই বিদ্যুতের নাম ত্রিযামা। আর ওই স্রোতের শব্দ শুনতে পাচ্ছ বীরদত্ত?
-পাচ্ছি পর্ণা!
-ওই স্রোতের নাম রুদ্রাণী! মধ্যরাতে যে নিশাচর বিহঙ্গ দম্পতি আপন অস্তিত্ব জানান দেয়, তুমি কখনো শুনেছ তাদের প্রেমালাপ?
-আমি প্রতিটি রাত্রি আপনার কক্ষদ্বারের বাইরে বিনিদ্র অবস্থায় যাপন করি রানি। আপনি রাত্রির যে সকল সৌন্দর্য উপভোগ করেন, আমিও সেই একই সৌন্দর্যে অবগাহন করি পর্ণা।
-ওই দম্পতির নাম কুমার ও নলিনী। আর আমি? আমি মহারানি সপ্তপর্ণী। তিন রাজ্যের রানি।
পর্ণার চাপা ক্রন্দনধ্বনিতে ব্যথিত হল বীরদত্তের হৃদয়। উদ্বেলিত কণ্ঠে বীর বলল,
-আপনার মনোরঞ্জনের জন্য আমি আগামীকালই অন্দরমহলে এক বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন...
-তুমি কী এ বিষয় অবগত বীরদত্ত, একটি কিশোরী কন্যা বহুপূর্বে তার মাতার নিকট রাজ্যবিস্তারের ইচ্ছা পোষণ করেছিল। বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু সেই মুহূর্তে ওই মূর্খ কিশোরী এই বাক্য অবগত ছিল না, যে এই রাজ্যবিস্তারের জন্য, মিথ্যা ক্ষমতায়নের জন্য তাকে সুবৃহৎ মূল্য পরিশোধ করতে হবে! আমি, আমি কে বলো তো বীর?
অক্ষিকোটরে আগত অশ্রু গোপন করে বীরদত্ত বলল,
-আমার... এই রাজ্যের সকলের সম্মানীয়া মহারানি, পর্ণা!
-হ্যাঁ আমি পর্ণা, আমি সপ্তপর্ণী। আমি সশরীরে আছি। ক্ষমতায়নের শীর্ষে আমি আছি বীর। কিন্তু সে নেই। সে হারিয়ে গেছে মায়াকাননের গভীর অরণ্যে, হিমশৈল পর্বতের উচ্চতায়, রুদ্রাণীর গভীরতায়। তার এই কঙ্কালসার রাজ্য আগলে আমি একাকিনী যক্ষের ন্যায় এক একটি বিরহী রাত্রিযাপন করি। তুমি জানো?
-না! আপনার ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কে আমি অবগত নই। আমি জানি না, জানতে কিছুমাত্র আগ্রহী নই। তবে আমার মনে এই ভাবনার উদয় হয়েছে, এই ক্ষণে এই স্থান পরিত্যাগ করা আমার অবশ্য কর্তব্য। আমি বৃন্দাকে আপনার নিকট প্রেরণ করছি রানি। আমার ধারণা, তিনিই আপনার ব্যথিত হৃদয়কে কিঞ্চিৎ প্রশান্তি প্রদান করতে পারবেন।
কন্ঠ সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ বীরদত্তর। আপন হস্তমধ্যে অবস্থিত পর্ণার দুটি কম্পিত হস্ত, বীর সর্বশক্তিদ্বারা করায়ত্ত করল। রুদ্ধকণ্ঠে বলল,
-আপনার মন বড় ব্যাকুল রানি। সামান্য রাজকার্য সমাধাপূর্বক আপনি এ রাজ্য হতে প্রফুল্লচিত্তে মায়াকানন গমন করবেন। আমি আপনার ছায়াসঙ্গী হয়ে আপনাকে পৌঁছে দেব। কিন্তু সর্বাগ্রে কাঞ্চনগড়ের দায়িত্ব তুলে দিতে হবে আপনার আবাল্য সই বৃন্দার হাতে। অবিলম্বে আমি আলোচনাসভার আয়োজন করছি। অতঃপর আপনি ও আমি একত্রে, মায়াকাননের চিরহরিৎ সৌন্দর্যে অবগাহন করব রানি।
অতঃপর পৃথ্বীশের শয্যায় আরও একটি সঙ্গীহীন কালরাত্রি যাপন করলেন সপ্তপর্ণী। তার কক্ষদ্বারের সম্মুখে বিনিদ্র রাত্রিযাপন করল রাজভৃত্য বীরদত্ত।
(ক্রমশ....)
চিত্র : সংগৃহীত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন