অনুসরণকারী

বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ছবিতে ছায়া (দ্বিতীয় পর্ব)


 


ছবিতে ছায়া

সাথী দাস

দ্বিতীয় পর্ব




।। দুই ।।
।। বনি ও বিঙ্গো ।।

-কিরে বৃষ্টি, শাওন আমার সঙ্গে সেভাবে কথা বলল না কেন? তোদের মধ্যে সব ঠিক আছে তো? আমি কোনো খবর না দিয়ে এসে ভুল করে ফেললাম নাকি? তোদের প্রাইভেসিতে...
-না রে! সেসব কিছু না। আর বলিস না; আমাদের একটা ট্রিপের কথা ছিল। উইকেন্ড ট্রিপ। বেশ নিরিবিলি জায়গা। পিকনিক করার, বা দু-একদিনের জন্য পালিয়ে যাওয়ার জন্য বেস্ট অপশন। অফিস থেকে কিছুদিন আগে কয়েকজন ঘুরে এসেছে। আমরাও তাদের কাছে গল্প শুনে আর ওখানকার ছবি দেখেই প্ল্যানটা করে ফেলি। এবার একেবারে শেষ মুহূর্তে আমি একটা কাজে আটকে গেছি। আমার জন্য ট্রিপ ক্যানসেল। তার এখন মাথা গরম।
-সেকি রে! তোদের বেড়াতে যাওয়ার কথা! আমি আবার উড়ে এসে জুড়ে বসলাম।
-তুই কোনো ব্যাপার? তিস্তা তুই আমার নিজের বোনের মতো। আমরা বেরিয়ে গেলেও এই ফ্ল্যাটে তুই থাকতিস। এক্সট্রা রুম আছে। তুই কোনো সমস্যাই না। কিন্তু এখন এদিকে যেভাবে আমি ফেঁসে গেলাম...

পাশের ঘর থেকে দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে শাওন বললো,

-আসতে পারি লেডিস?
-শাওন এসো প্লিজ!

তিস্তা শাওনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেও বৃষ্টি চুপ করে রইল। শাওন বিছানায় উঠে বৃষ্টির পাশে বসে বললো,

-যাওয়া যখন সেই হবেই না, মন খারাপ করে বসে থেকে আর কী হবে?! এই তিস্তা, তুমি কফি খাবে?
-হ্যাঁ সে তো খাবই। দাঁড়াও আমি করছি।
-তুমি বসো, বৃষ্টির সঙ্গে কথা বলো। আমি করছি। তা তোমার এক্স হাজব্যান্ড কেমন আছেন?
-আপসেট আছেন। ঘ্যানঘ্যান করেন। ফিরতেও চেয়েছিলেন।
-তুমি ফিরিয়ে নাওনি?
-দেখো শাওন, ও জীবনে অনেকটা সুখ ডিজার্ভ করে। কিন্তু সেটা আমার সঙ্গে সম্ভব নয়। ওদের বাড়িতে আমার অনেক বিষয়ে অনেক অসুবিধে ছিল, ওর বাড়ির লোকের সঙ্গে মতান্তরও ছিল। তবুও শুধুমাত্র ওর জন্য সবটা মানিয়ে গুছিয়ে চলছিলাম। কিন্তু যেখানে ও নিজেই ঠিক নেই, সেখানে আর দ্বিতীয়বার ভাবার জায়গাও নেই। ও আমার দিক থেকে যে দুটো জিনিস ডিজার্ভ করতো, আমি ওকে দিয়ে দিয়েছি। ডিভোর্স আর মুক্তি। যাও এবার তুমিও আমাকে মুক্তি দাও, নিজের মতো করে সুখে থাকো। আমি তোমার জন্য নই! ফিরিয়ে নিতে পারিনি শাওন। এত মহৎ আমি নই। সরি!
-তুই বলে এত সহজে ছেড়ে দিলি, আমি হলে...
-কী করতিস বৃষ্টি? বড়জোর ওর জীবনে থেকে, গোটা জীবনটা শেষ করে দিতে পারতিস! যাতে ওইদিকে ওই সম্পর্কটাতেও সে মানসিকভাবে স্টেডি থাকতে না পারে, তাই তো?
-নয়তো কি!
-আমিও একবার ভেবেছিলাম তাই করব। ওখানে থেকেই ওকে ছিঁড়ে খাবো। ঘরে-বাইরে সব জায়গায় ওর মান-সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দেব। আমি নিজের জায়গা কেন ছাড়বো? বরং ওর জীবনটা নরক করে দেব। ভেবেছিলাম এটা অনেকবার। তারপর তিনমাস যাবৎ ঘুমের ওষুধ খেয়ে, নিজের বুকের ভিতর চলতে থাকা ঝড়টা সামলে মন দিয়ে অনেক ভাবলাম, কী লাভ এসব করে! কোনো লাভ নেই। আমি কী জানোয়ার নাকি, যে নিজের হারিয়ে যাওয়া জায়গা নিয়ে, গোটা একটা মানুষকে নিয়ে কামড়াকামড়ি করব! এমনিতেই আমার জীবনের বেশ কিছুটা সময় অকারণে নষ্ট হয়ে গেছে। ভুল জায়গায় নিজের আবেগ, অনুভূতি, সময় নষ্ট করেছি। ওই ভুল থেকে যত তাড়াতাড়ি নিষ্কৃতি পাওয়া যায়, ততই তো ভালো। আমিও আবার কয়েক বছর পর নিজের জীবনটা নতুনভাবে, নতুন কারোর সঙ্গে শুরু করতে পারি। কেন সেখানে পড়ে থাকবো, যেখানে আমার কোনো সম্মান নেই! আমার জন্য কোনো ভালোবাসা নেই! আমার হাতে এখনও সেই সময়টা আছে, আমি নতুন করে নিজের জন্য কিছু ভাবতে পারি। সবাই তো সেই সময়টুকুও পায় না। আমি পেয়েছি। কেন প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নিজের বাকি জীবনটা ওই মানুষটার জন্যই নষ্ট করব! ও আমার ভালোবাসা সহজে নিতে পেরেছে বৃষ্টি, কিন্তু ঘৃণাটা সহ্য করতে পারবে না। আমার জীবনে আজ ওর এতটাও গুরুত্ব নেই, যে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, ওর লাইফটা হেল করার জন্য ওর কাছেই পড়ে থাকতে হবে। এই ভালো। ও নিজের মতো ভালো থাক! আমিও নিজের রাস্তায়...

তিস্তার চোখের কোণে একটু জল চিকচিক করে উঠলো। বৃষ্টি একা থাকলে হয়ত ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলতো। কিন্তু শাওনের সামনে মন খুলে কাঁদতে পারলো না। শাওন ওর দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-মনখারাপ?
-তা তো একটু হবেই শাওন। একটা প্রশ্ন প্রতিরাতে কুরে-কুরে খায়। আমি ওর জীবনে থাকার পরেও ও আমাকে না জানিয়ে এটা কিভাবে করলো! আমাকে একবার অন্তত বলতে পারতো! আমি তো ওকে কেঁদেকেটে নিজের কাছে ধরে-বেঁধে রাখতাম না রে বাবা! এখন ছেড়ে দিয়েছি, তখনও ছেড়েই দিতাম। কিন্তু তখন নিজের মুখে ব্যাপারটা বললে, ওর প্রতি যে সম্মানটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, সেটা অন্তত কিছুটা হলেও বজায় থাকত। চলো ঠিক আছে, সত্যিটা নিজের মুখেই বলেছে। নতুন করে কাউকে ভালোবাসতেই পারে, সেটা আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করলো না! আমাকে লুকিয়ে কেন!? দিনের পর দিন ঠকিয়ে কেন? একজনকে সুখ দিতে গিয়ে আর একজনকে যে প্রতি মুহূর্তে মিথ্যে বলছে, ঠকাচ্ছে, সেটা মানুষ হিসেবে একবারও ওর মনে হল না? ওই মেয়েটাকে যে ভালোবাসে, আমার সামনে সেটা স্বীকার করার সাহসটুকুও ওর ছিল না। এটা তো ওই মেয়েটাকেও পরোক্ষভাবে অসম্মান করা। আমাকে বলেই দিতে পারতো, আমি আরও আগে ওকে ছেড়ে বেরিয়ে আসতাম। আচ্ছা আমি কী এতটাই খারাপ বৃষ্টি? ভালোবাসার অযোগ্য?
-তুই না। তোর বর তোর ভালোবাসার যোগ্য মর্যাদা দিতে পারেনি তিস্তা। তার জন্য তুই কেন কাঁদছিস?
-নারে, এখন আমি আর একদম কাঁদি না। ওর কথা মনে পড়লে জাস্ট কনফিডেন্সটা ডাউন হয়ে যায়। মনে হয় আমাকে হয়তো ভালোবাসাই যায় না, বা আমিই ওকে যথেষ্ট ভালোবাসতে পারিনি। নিজের ওপর সন্দেহ হয়। এগুলো মনে পড়লেই সব আত্মবিশ্বাস হারিয়ে অসহায় হয়ে কাঁদতে বসে যাই। আর কোনো কষ্ট নেই। একদম কাঁদি না আমি... আরে ধুর! এমনিতেই তোর এত মনখারাপ বৃষ্টি, আমি আবার তার ওপর এসেই কান্নাকাটি জুড়ে দিলাম। কোথায় ভাবলাম, তোর কাছে এসে দুই বন্ধু মিলে পার্টি দিয়ে আমার ডিভোর্সটা সেলিব্রেট করবো, মদ খাবো, হেঁড়ে গলায় গান গাইবো, নাচ করবো, মাতলামি করবো, এখানে এসে দেখি মেয়ের মুখে বর্ষার ঘন কালো মেঘ জমেছে। দু'চোখ থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামলো ব'লে! সমস্যাটা কী বৃষ্টি? অফিস ছাড়া তোর কী এমন কাজ, যার জন্য এতদিন ধরে প্ল্যান করা ট্রিপটা ক্যানসেল করতে হচ্ছে! শাওনও ডাউন হয়ে আছে। ভালো লাগছে না আমার! একটু আনন্দ করব বলে এলাম, এদিকে তোরা...
-তোমরা কথা বলো। আমি কফি নিয়ে আসছি...

শাওন তিন মগ কফি ট্রে-তে রেখে নিজেদের শোওয়ার ঘর থেকে দুই নারীর তীব্র চিৎকার শুনতে পেল। ও প্রথমে খানিক ঘাবড়ে গেলেও, একটু পরেই বুঝলো, ওটা আনন্দের চিৎকার। শাওন কফি নিয়ে ঘরে ঢোকামাত্র বৃষ্টি ওর দিকে লাফিয়ে দৌড়ে এলো। হতবাক শাওন বললো,

-কী! কী ব্যাপার? তোমাদের দুজনের কিসের এত ফূর্তি? আমিও শুনবো।

ট্রে-টা টেবিলে নামিয়ে রেখে বৃষ্টি শাওনকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-আই লাভ ইউ বাবু!
-ইয়েস! আই নো দ্যাট। আই লাভ ইউ টু! কিন্তু হঠাৎ এত প্রেম!!
-আমি বলছি শাওন।

বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে শাওন চাইলো তিস্তার মুখের দিকে। ও কফিতে একটা চুমুক দিয়ে সহস্যবদনে বললো,

-আমি বৃষ্টিকে বললাম, কাজরীদির যদি খুব অসুবিধে না থাকে, আমি তোর জায়গায় প্রক্সি দিয়ে দিতে পারি। যেমনটা স্কুলে করতাম। ও ফোন করে বললো, তিস্তা আমার বোনের মতো, ওকে বনির দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যেতে পারে, খুব ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করে... আরও গাদাখানেক প্রশংসা! যার ফলস্বরূপ আমি ওদিক থেকে কাজরীদির গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে গেছি। এবার তুমি তোমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে মনের আনন্দে বেড়াতে যেতে পারো। আমি যাবো বনির কাছে। বৃষ্টির ছুটি। ও পুরোপুরি তোমার শাওন।
-তুমি আমাদের কাছে বেড়াতে এসেছো তিস্তা। এখানে এসে বেবিসিটার হয়ে, তুমি একটা বাচ্চার বাড়িতে থাকতে যাবে?
-সমস্যা কী শাওন? সব কাজই সম্মানের। বৃষ্টি পারলে আমি কেন পারবো না! তাছাড়া আমি একটু এনগেজমেন্ট চেয়েছিলাম, একটু রিলিফ! নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেয়েছিলাম। সেই জন্যই তোমাদের এখানে এসেছি। একটা বাচ্চার চেয়ে বেশি এনগেজমেন্ট আমাকে আর কে দিতে পারবে! তোমাদের সঙ্গে আনন্দ করেও রিলিফ পেতাম, এখন দায়িত্ব নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখবো। সত্যি কথা বলতে, আই হেট কিডস। বাচ্চারা ভীষণই ঝামেলার ব্যাপার। তা নিজে মা না হয়েও যখন হঠাৎ করে প্রায় মা হয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ পাওয়া গেছে, যাচাই করে দেখি নিজের সহ্যশক্তির সীমা কতখানি! ডোন্ট ওয়ারি শাওন। তোমরা ঘুরে এসো। মাত্র দুদিনের তো ব্যাপার। আমি বনিকে সামলে নেব। তোমরা ফিরে এলে, আমি ডিভোর্স পার্টি দেব। ওটা ডিউ রইল।

শাওনের বুকে মুখ গুঁজে আনন্দে কেঁদে ফেলেও তিড়িং-তিড়িং করে লাফাতে লাগল বৃষ্টি। শাওন তিস্তার দিকে চেয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে বললো,

-থ্যাঙ্কু সো মাচ তিস্তা!
-মেনশন নট! এনজয়!

বাংলোর মতো বেশ প্রশস্ত একটা বাড়ি। চতুর্দিকে ছড়ানো-ছিটানো। বাইরে থেকে ছাদে ওঠার একটা বাঁকা সিঁড়িও আছে। বাড়ির বাইরে ফাঁকা জমিতে একটা ছোট ঘর। স্টোররুম হবে বোধহয়। অনেকখানি জমিতে ছবির মতো সুন্দর করে সাজানো বাগান। ফুলের গন্ধে মনটা বেশ ভালো লাগছিল তিস্তার। গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী বেশ শৌখিন ও বিত্তবান মানুষ, সেটা বাড়ির সামনে দাঁড়ালেই বেশ বোঝা যায়। ডোরবেল বাজাতেই তিস্তার বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল। ঘ্যাক-ঘ্যাক করে দরজার ওপারে কুকুর ডাকছে। এই প্রাণীটাকে ও ভীষণ ভয় পায়। একলাফে দরজার সামনে থেকে সরে এসে তিস্তা বললো,

-এ বৃষ্টি, কুকুর আছে এই বাড়িতে? তুই আগে বলিসনি কেন?
-কিচ্ছু করে না ও। বিঙ্গো খুব কিউট!
-আমি নেই। এইরকম হাইমাই করে চিৎকার করলে আমি হার্টফেল করে মরে যাব।
-তুই আয় তো!

দরজাটা খোলার সঙ্গে সঙ্গে লাফানো বন্ধ করে চুপ করে দাঁড়ালো তিস্তা। একজন মধ্যবয়সী মহিলা দরজা খুললেন। কেঁউ-কেঁউ করে কুকুরটা একটানা ডাকছে। তিস্তা একবার মুখ বাড়িয়ে দেখলো, ঘরের ভিতর বাঘের মতো ঘোরাফেরা করছে একটা সুবিশাল কুকুর। কিন্তু তেড়ে কামড়াতে আসছে না এটাই বাঁচোয়া। বৃষ্টির সঙ্গে বিঙ্গোর যে বেশ সখ্যতা, তা প্রথম দর্শনেই বুঝতে পারলো তিস্তা। বৃষ্টির সঙ্গে বিঙ্গো এসে তিস্তার হাতের ওপর একবার থাবা রেখে অভিবাদন জানালো। তিস্তা মেঝেতে বসে বললো,

-তুই আমাকে বিরক্ত করবি না, আমিও তোকে খোঁচাবো না। ওকে বিঙ্গো? এটাই আমাদের বোঝাপড়া। দুদিন যখন একসঙ্গে থাকতেই হবে, একটু মানিয়ে নিস আমায়। আমি তোর এরিয়ায় যাবো না। আর তুইও ঘ্যাক-ঘ্যাক করে ওইভাবে আমার দিকে তেড়ে আসবি না। আমার প্রাণপাখি তাহলে ফুরুৎ করে উড়ে যাবে।

বিঙ্গো কী বুঝলো জানা নেই তিস্তার। তবে কাছে এসে ওর গা শুঁকে ঘরের এককোণের মেঝেতে টানটান হয়ে শুয়ে পড়লো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো তিস্তা। বৃষ্টিকে সামনে রেখে কোনোমতে সামলানো গেছে।

-বৃষ্টি এসে গেছ? আপনিই তিস্তা?
-হ্যাঁ কাজরীদি। ওই আমার বন্ধু। প্রায় আমার নিজের বোনের মতোই খুব কাছের একজন মানুষ।

মহিলাকে দেখলে অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্যা বলে মনে হয়। নিজের যত্নে এতটুকুও কার্পণ্য নেই। তিস্তা হাসিমুখে ওঁর দিকে এগিয়ে বললো,

-হ্যালো!
-হ্যালো তিস্তা। প্লিজ টু মিট ইউ। বৃষ্টি আমার অত্যন্ত স্নেহের। আপনি তার বেস্টফ্রেন্ড। আমার কাছে একইরকম সমাদরের। আসুন আপনাকে সবটা বুঝিয়ে দিই। তারপর আমি বেরিয়ে যাব। একটু তাড়াহুড়োয় আছি, বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই। নইলে আমার দিক থেকে আতিথেয়তা...
-নানা, আপনি কাজে বেরোবেন। ব্যস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমাকে একটু বনির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেই হবে।
-আমার বেবি ওর রুমে আছে। ওই যে, ওটা ওর রুম....

বৃষ্টি আর কাজরীদির সঙ্গে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখতে শুরু করলো তিস্তা। মাঝে মধ্যেই বিঙ্গো এসে লেজ দুলিয়ে ওকে দেখে যাচ্ছে। ওর চোখের নীরব দৃষ্টিতে নিখাদ বন্ধুত্ব না থাকলেও সেই জিঘাংসা আর নেই। কাজরী বলে চলেছেন,

-বনিকে এখন ওর মিমি খাইয়ে দিচ্ছে। আপনাকে কিছুই করতে হবে না তিস্তা। আমার মেইড রাত দশটা পর্যন্ত থাকবে। আপনাকে ডিনার সার্ভ করে দেবে। বনিকেও খাইয়ে দিয়ে যাবে। বনি একা ঘুমোতে পারে না। আপনাকে ওর সঙ্গে ওর রুমেই শুতে হবে। ও ঘুমিয়ে পড়ার পর আপনি... এই যে এটা গেস্টরুম, দুদিনের জন্য এটাই আপনার রুম, এখানে এসে বিশ্রাম নিতে পারেন....
-এটা এককালে আমার রুম ছিল তিস্তা। এই বাড়িটাই আমার ঠিকানা ছিল, আর কাজরীদি অর্পণদা ছিল আমার নিজের পরিবার। ওটা আমার জীবনের স্ট্রাগল পিরিয়ড ছিল ঠিকই, তবে এই দুটো মানুষের জন্য লড়াইটা কিছুটা সহজ হয়েছিল।

একটু হেসে কাজরী তিস্তাকে বললেন,

-রাতে এখানে বা আপনি চাইলে বনির সঙ্গেও ঘুমোতে পারেন। যেটা আপনার ইচ্ছে। পুরো বাড়িতে যেকোনো জায়গায় ওয়াই-ফাই পেয়ে যাবেন। পাসওয়ার্ড গেস্টরুমের টেবিলের ওপর রাখা প্যাডে লেখা আছে।
-থ্যাঙ্কু।
-ওয়েলকাম। এবার বনির ঘরে আসুন। আমার সারা বাড়িতে জামাকাপড়-জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, কী আর বলবো আপনাকে... একটু বেড়াতে গিয়েছিলাম। তারপরই খবর এলো আমার এক রিলেটিভ এক্সপায়ার করে গেছেন। হুড়োহুড়ি করে ফিরতে হল। তার আচমকা ডেথ... আর তার প্রপার্টিতে আমারও শেয়ার আছে। এবার তার এক পালিতা মেয়ে এসে অর্ধেক সম্পত্তি দাবি করছে। লাস্ট উইলে যে কী লেখা আছে... এক্ষুণি ওখানে পৌঁছতে না পারলে...
-বুঝতে পারছি আপনি খুবই...

ঘরের দরজা খুলে গেছে। যে মধ্যবয়সী মহিলা দরজা খুলেছিলেন, তিনি চামচ-বাটি হাতে নিয়ে একটি বাচ্চা মেয়েকে অনেক সাধ্যসাধনা করে খাওয়াচ্ছেন। দরজা খুলতেই মেয়েটা দৌড়ে এসে মায়ের কোলে চড়ে পড়লো। পিঠ পর্যন্ত কোঁকড়ানো চুলগুলো খোলা। মেয়েটির মুখটা এতটাই মিষ্টি, প্রথমবার দেখে অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে গেল তিস্তা। বৃষ্টির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লেও তিস্তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো বনি। কাজরী বললেন,

-বনি, এই আন্টি তোমার ভালো আন্টির বেস্টফ্রেন্ড। আন্টিকে হ্যালো বলো?

বৃষ্টির গলা জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইলো বছর ছয়েকের বনি। তিস্তা ওকে জোর করে টেনে কোলে নিলে, তিস্তার বুকের ওপর ঝুলতে থাকা পাথরের মালা আর হনুমানজির লকেটটা হাতে নিয়ে বনি খেলতে শুরু করলো। তিস্তা ওকে জিজ্ঞেস করলো,

-পছন্দ এটা?

মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো বনি।

-আচ্ছা দাঁড়াও!

মাথা দিয়ে মালা আর লকেটটা খুলে বনির গলায় পরিয়ে দিলো তিস্তা। বনি খুব খুশি। কিন্তু প্রবল আপত্তি জানালেন কাজরী।

-তিস্তা এভাবে দেবেন না। আপনি ওটা খুলে নিন।
-থাক না। আমি ওকে ওটা গিফ্ট করলাম। আমার নতুন বন্ধুকে ফার্স্ট গিফ্ট। আমার আরও একটা আছে। বৃষ্টির বাড়িতে রেখে এসেছি ওটা। দু'দিন পর ওর ওখানে গিয়ে পরে নেব।

হাসিমুখে তিস্তার দিকে চেয়ে 'থ্যাঙ্কু' বললো বনি। তিস্তা ওর গালে ঠোঁট ঠেকিয়ে বললো,

-মোস্ট ওয়েলকাম... তোমার নামটা কী যেন...
-স্কুলে টিচাররা-ফ্রেন্ডরা সুবর্ণা বলে ডাকে। মিমি বর্ণা বলে, পাকাবুড়ি বলে, আর মা-পাপা বনি বলে ডাকে। বিঙ্গো কিছু ডাকে না। খালি গা চেটে দেয়। এটা কী?
-এটা? এটা বজরংবলী লকেট। ঠাকুর। ঠাকুরকে এইভাবে নমঃ করতে হয়। এইভাবে কপালে আর বুকে ঠেকিয়ে...

লকেটটা ভালোভাবে দেখে বনি বললো,

-এ মা! ঠাকুরকে মাঙ্কির মতো দেখতে তো! দশটা হাত কই?

শিশুসুলভ উত্তর শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো বৃষ্টি আর তিস্তা। বনি বললো,

-তুমি ভালো আন্টির বেস্টফ্রেন্ড। আবার আমারও ফ্রেন্ড। তাহলে আমি তোমাকে কী বলে ডাকবো? ফ্রেন্ডকে কেউ আন্টি বলে নাকি?
-ঠিকই তো! তুমি আমাকে তিস্তা বলেই ডেকো।
-নানা, আন্টি বলবে বনি।

কাজরী ব্যস্ততাকে অগ্রাহ্য করে বনি হাসিমুখে বললো,

-তোমায় তিস্তা আন্টি বলবো, ঠিক আছে?
-একদম ঠিক আছে। তোমার যা মন চায়, তাই বলেই ডেকো আমায়। নামে কী আসে যায়, আমাদের ফ্রেন্ডশিপ আর বন্ডিংটাই তো সব। হ্যান্ডশেক করো দেখি!

প্রথম আলাপে সহজেই বনির সঙ্গে তিস্তার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। বেশ নিশ্চিন্ত হলেন কাজরী। তিস্তাকে বাইরে ডেকে এনে বললেন,

-আমি আর দেরি করতে পারছি না তিস্তা। অর্পণ অফিস থেকে আধঘন্টার মধ্যেই বেরিয়ে আসবে। আমাকে তার আগে গাড়ি নিয়ে ওর অফিসের সামনে পৌঁছতে হবে। তারপর আমরা বেরিয়ে যাব। আপনাকে তেমন কিছুই করতে হবে না। শুধু বনিকে একটু সঙ্গ দেবেন, ওর সঙ্গে গল্প করবেন, ও যেন আমাদের জন্য কান্নাকাটি শুরু না করে। একটু বিজি রাখবেন ওকে। সন্ধ্যেবেলা ও কার্টুন দেখে, তারপর পড়তে বসে। ডিনার করে ঘুমের আগে গল্প শুনতে চায়, কিছু একটা বেডটাইম স্টোরি শুনিয়ে দেবেন। আপনার ফোন নম্বর আমার কাছে আছে। আমার আর অর্পণের নম্বর ওই প্যাডেই লেখা আছে। আমি বাড়ির ফোনে, আপনার ফোনে কয়েক ঘন্টা পর পরই কল বা ভিডিও কল করবো। ওকে একটু দেখিয়ে দেবেন প্লিজ!
-হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
-কাল আর পরশুদিন ওর পরীক্ষা আছে। আমি মেইডকে বলে দিয়েছি, ও সকাল ছ'টায় চলে আসবে। বনিকে তৈরি করে দেবে। পৌনে আটটায় পুলকার আসে। সাতটা চল্লিশে আপনি ওকে নিয়ে একটু গলির মোড়ে দাঁড়াবেন। আমার মেইড আপনাকে নিয়ে যাবে। ও সব চেনে। তারপর ও স্কুল থেকে না ফেরা পর্যন্ত আপনার ছুটি। বিঙ্গোকে খাওয়ানো, পটি করানো সব মেইড করে যাবে। টয়লেট পেলে ও একাই চলে যায়, আপনাকে বিরক্ত করবে না। সম্ভব হলে বিকেলে সামনের ওই বাগানে বনি আর বিঙ্গোকে নিয়ে একটু ওয়াকে যাবেন। ও বল নিয়ে খেলতে ভালোবাসে। বনিও একটু খেলবে। তাছাড়া ওয়াই-ফাই, বুকস, ফ্রিজে সফট ড্রিঙ্কস, হার্ড ড্রিঙ্কস, আপনার সময় কাটানোর মতো সব কিছু...
-আপনি বনির দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছেন ম্যাডাম। আমি এই দু'দিন সেই কাজেই ডুবে থাকবো। বিনোদনের জন্য সারা জীবন পড়ে আছে। এখন বনি আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। মাত্র দুটো তো দিন। বনি আর
বিঙ্গোর সঙ্গে খেলতে খেলতে, গল্প করতে করতে এমনিই কেটে যাবে। আমার এতসব কিচ্ছু লাগবে না।
-আচ্ছা বেশ। বৃষ্টি তুমি এখন বেরোবে? আমি আর ওয়েট করতে পারবো না।
-হ্যাঁ দি, আমি তোমার সঙ্গেই বেরিয়ে যাই। অর্পণ দা'র অফিসের রাস্তাতেই তো আমার ফ্ল্যাট, আমি নেমে যাবো। আজ রাতে আমিও তো বেরোবো। আর দেরি করাটা ঠিক হবে না।
-এসো তবে। তিস্তা?
-বলুন ম্যাডাম!
-এখানে বাড়ির প্রত্যেকটা দরজার চাবি থাকে। এটা মেইন গেটের চাবি। দেখে রাখুন। রাতে দরজা ভালোভাবে লক করে দেবেন। মাঝরাতে বা শেষরাতে যে যতই ডাকুক না কেন, কিছুতেই দরজা খুলে বাইরে বেরোবেন না। দরজাই খুলবেন না। কোনো ডাকে সাড়া দেবেন না।
-মাঝরাতে কে ডাকবে?!

তিস্তা আর বৃষ্টি সমস্বরে জিজ্ঞেস করে উঠলো। কাজরী একটু ইতস্তত করে বললেন,

-দেখুন ইদানিং এই জায়গাটার একটু বদনাম হয়েছে। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই... লাস্ট মান্থে একদিন সন্ধ্যেবেলা অর্পণ বিঙ্গোকে নিয়ে একটু ওয়াকে গিয়েছিল। ওর একটা ফোন এসেছিল, ওদিকে বিঙ্গো টয়লেট করছিল। অর্পণ একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে, কান থেকে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। বাইকে দুজন ছিল। কিছুই করা যায়নি। আমরা লোকাল থানায় একটা জিডি করে সিম লক করে দিই। সেইজন্যই বলছি, একটু সাবধানে থাকবেন। তেমন কিছুই না, তবুও বলে রাখলাম। রাতে কেউ ডাকলে বা বেল বাজালে দরজা খুলবেন না। কোনোরকম কথাবার্তা বলতে যাবেন না।
-ঠিক আছে। বনি স্কুল থেকে ফেরার পর আমি দিনের বেলাও ডোর লক করে রাখবো। আপনার মেইড ঢোকা বা বেরোনো ছাড়া, আর দরজা খুলবো না।
-অনেক ধন্যবাদ। বনিকে একটু দেখেশুনে রাখবেন। নিজেও সাবধানে থাকবেন।
-নিশ্চিন্ত থাকুন। ও এখন আমার দায়িত্ব।

বৃষ্টি গাড়ির জানালা দিয়ে হাসিমুখে হাত নাড়ছিল। গাড়িটা লন পেরিয়ে চলে গেল তিস্তার দৃষ্টির আড়ালে...

বনির কাছে গিয়ে তিস্তা দেখলো ও মাথা নীচু করে কাগজে রং পেন্সিল ঘষছে। আঁকার খাতার ওপর সদ্য উপহার পাওয়া হনুমানজির লকেটটা এসে পড়েছে। তিস্তা মেঝেতে ওর পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,

-কী আঁকছো বনি?

কাগজের ওপর দু'হাত চেপে দিলো বনি,

-একদম দেখবে না। তোমার রিটার্ন গিফ্ট। তুমি আমাকে গিফ্ট দিলে, এবার আমিও তোমাকে গিফ্ট দেবো। আমি থ্যাঙ্কু কার্ড ড্র করছি।
-ওরে বাবা! একটুখানি দেখি আমি। আমার গিফ্ট আমি দেখবো না?
-একটুও দেখবে না। ফিনিশ করে আমিই দেখাবো।
-আচ্ছা, তাহলে আমি ওয়েট করি। ওয়েট করতে-করতে টুক করে একটা কল করে নিই সোনা?
-হ্যাঁ করো...

বনির ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের মাকে একটা ফোন করলো তিস্তা। বনি ততক্ষণে আবার কাগজে রং পেনসিল ঘষতে শুরু করেছে। বিঙ্গো অদূরে শুয়ে পিটপিট করে চেয়ে আড়মোড়া ভেঙে গা ঝেড়ে লেজ নাড়তে নাড়তে রান্নাঘরের দিকে গেল। বনির ঘরে ফিরে তিস্তা দেখলো, ও একটা সাদা কাগজ ভাঁজ করে তিস্তার দিকে এগিয়ে দিয়েছে। মুখে স্বর্গীয় একটা হাসি আঁকা।

-থ্যাঙ্কু তিস্তা আন্টি। এটা তোমার রিটার্ন গিফ্ট।

কাগজটা হাতে নিয়ে বনির গালে আদর এঁকে দিলো তিস্তা।

-দেখি বনিসোনা নিজের হাতে কী এঁকেছে আমার জন্য!

কার্ড খুলতেই একরাশ বিস্ময় এসে ঘিরে ধরলো তিস্তাকে। কাগজে অপটু হাতে একটা ফ্রেম আঁকা, আর তার ভিতরে একটা মেয়ের ছবি। বনির ছেলেমানুষি আঁচড়ে সেই মেয়েটির ছবি হাস্যকর রূপ ধারণ করলেও, চোখ দুটো বড়ই বিরক্তিকর। দৃষ্টিটা কেমন যেন মরা মাছের মতো স্থির হয়ে আছে। চোখের পাতা নেই। ঘোমটা দেওয়া মেয়েটা স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে তিস্তার দিকে। তার দু'পাশে আবার কালো-কালো কীসব যেন বনি এঁকেছে! ভ্রূ কুঁচকে গেল তিস্তার। তেমন কিছুই নেই ওই ছবিতে। শিশুর সামান্য খামখেয়ালি আঁকিবুকি ছাড়া, আবার যেন কত কিছু লুকিয়েও রয়েছে। মেয়েটার চোখের দিকে তিস্তার একদমই চাইতে ইচ্ছে করছে না। বনির মুখের দিকে চেয়ে ও দেখলো একরাশ আনন্দ ওর চোখেমুখে স্পষ্ট দৃশ্যমান। জোর করে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে তিস্তা বললো,

-ছবিটা খুব সুন্দর হয়েছে বনি। থ্যাঙ্কু। কোথায় দেখেছ তুমি এমন ছবি?
-মা বাবার সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে দেখেছি। মস্ত বড় ছবি।
-আর এই কালো কালো এগুলো কী?
-এটা তো আমার মা আর বাবা। ওরা ছবির সামনে দাঁড়িয়েছিল। এটা ওদের শ্যাডো। আমি তো স্কুলের ড্রইং ক্লাসে লাইট অ্যান্ড শ্যাডো শিখেছি। দাঁড়াও আমাকেও এঁকে দিই। আমিও তো ওখানে ছিলাম।

দ্রুত হাতে একটা ছোট্ট মেয়ের ছায়া ছবির মুখের ওপর কালো রং পেন্সিল ঘষে এঁকে দিল বনি। বাবা-মায়ের হাত ধরে এক শিশুকন্যা মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পিছন থেকে মরা মাছের মতো ওই কুদৃষ্টি সুখী পরিবারের ওপর নিবদ্ধ। কাগজটা হাতে নিয়ে বনিকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিলো তিস্তা...

বনির দরজার সামনে থেকে পা টিপে টিপে চুপিসাড়ে সরে গেল একটা নারীর অবয়ব। বৈঠকখানার কাঁচের টেবিলের ওপর রাখা রূপোর অ্যাস্ট্রেটা দ্রুত হাতে চালান হয়ে গেল তার কাপড়ের আঁচলের মধ্যে। শো-কেসের ওপরের আলগা ধুলো মুছতে মুছতে, ওখানে সাজানো রূপোর ছোট ট্রফিটা অদৃশ্য হয়ে তার ব্লাউজের মধ্যে আত্মগোপন করল।

-মিমি শোনো?

চমকে উঠে পিছন ফিরে সেই মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলা হাত ঝেড়ে দৌড়ে এসে বললো,

-আমার নাম মিমি নয় দিদি, মালতী। বর্ণা আমাকে মিমি বলে ডাকে।
-ও আচ্ছা সরি। মালতী, আমাকে একটু চা খাওয়াতে পারবে?
-আনছি।

রান্নাঘরের দিকে দৌড়ে গেল মালতী। চুরি করা জিনিসগুলো নিজের পাটের ব্যাগের মধ্যে চালান করে ফেললো। সেই রাতে মালতী বেরিয়ে যাওয়ার পর তিস্তা দরজায় তালা ঝুলিয়ে বনিকে নিয়ে যখন নিশ্চিন্তে ঘুমোতে গেল, তখনও মালতী রূপোর অ্যাস্ট্রেটা হাতে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে চেয়েছিল বাড়ির ওই বন্ধ দরজার দিকে। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কথা বলতে বলতে দ্রুতগতিতে অন্ধকারে মিশে গেল মালতী।


ছবি : সংগৃহীত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সেই তো এলে ভালোবাসা দ্বিতীয় পর্ব

  সেই তো এলে ভালোবাসা সাথী দাস দ্বিতীয়  পর্ব মধ্যরাতের এমন কত শুভ্র অপ্রাপ্তি ভোরের আলোর সঙ্গে মিশে আলগোছে ভূমি স্পর্শ করে। যা মনকে যাতনা দে...

পপুলার পোস্ট