অনুসরণকারী

শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০

নির্বাক (তৃতীয় পর্ব)



নির্বাক


সাথী দাস


তৃতীয় পর্ব




-আসেননি এখনও?

-আপনি তখন থেকে বসেই আছেন?আপনার তো কখন চোখ দেখানো হয় গেছে।দেখুন,অযথা ভিড় বাড়াবেন না।কাইন্ডলি বাইরে গিয়ে বসুন...

-ওনার কথা যে জিজ্ঞেস করলাম।

-দিদি এখনও নীচে আসেননি।পরে হয়তো নামবেন।আপনি কি ওনার পরিচিত?বিশেষ কোনো প্রয়োজন?


চুপ করে গেলো আন্তরিক।এবার কিছু বলতে গেলেই মিথ্যে বলতে হবে।আর সেটা বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই।ও মুখ তুলে ওই ওয়ার্ডবয়ের দিকে চেয়েই বললো,


-হুম!ওনাকে গিয়ে বলুন,ওনার বাড়ি থেকে আন্তরিক গোস্বামী এসেছেন।ভীষণ প্রয়োজন।এক্ষুণি যেন একবার নীচে নামেন।

-ওঃ!বাড়ি থেকে...দাঁড়ান-দাঁড়ান!ফোন করে আসেননি?দিদি জানেন না...

-আপনি খবরটা দিন।উনি নিজেই আসবেন!


ভদ্রলোক চলে যেতেই এবার ভয় করতে লাগলো আন্তরিকের।স্কুলে প্রথম একটা পিরিয়ড করেই শরীর খারাপ বলে বেরিয়ে এসেছে।চোখ তো দেখানো হলো।চোখে যে নতুন গয়না নিতে হবে,সেটাও জানা হলো।কিন্তু তার তো দেখা পাওয়া গেলো না।তাই আগেপিছে কিছু না ভেবে ডাহা মিথ্যে কথাই বলে বসলো আন্তরিক....একটু এগিয়ে গিয়ে সবুজ পর্দার পাশে রাখা বেঞ্চটাতে গিয়ে বসলো ও...যা হবে দেখা যাবে....


-আপনি?


ঘাড় ঘুরিয়েই ভাবনার জাল ছিন্ন হয়ে গেলো আন্তরিকের।সেবিকার পোশাকে সেই সেদিনের সে এসে সামনে দাঁড়িয়েছে।তার হাতে আবার কি যেন একটা বন্য ফুল!চোখের দৃষ্টিতে অনেক প্রশ্ন,আর একইসঙ্গে বোধহয় বিশ্বাসঘাতক স্মৃতি হাতড়ে,সে মনে করার চেষ্টা করছে সামনের মানুষটার সঙ্গে জড়িত কোনো ঘটনাপ্রবাহ....


-আপনিই কি...

-হ্যাঁ আমিই....

-বলুন!আপনি নাকি আমার বাড়ি থেকে এসেছেন?আপনি চেনেন আমায়?!ক্ষমা করবেন,আমি কিন্তু আপনাকে চিনতে পারছি না!

-দুঃখিত মিথ্যে কথা বলার জন্য।আমি আপনার বাড়ি থেকে আসিনি।এত পেশেন্টের মধ্যে আপনার আমার কথা মনে থাকার কথাও না।আসলে আমি আপনার সঙ্গে একটু দেখা করতে চাইছিলাম।কিছুদিন আগেই আমার একটা ছোটখাটো একসিডেন্ট হয়েছিলো।তখন আমি এখানেই এসেছিলাম।টিটেনাস নেওয়ার সময় হাত-পা ছড়িয়ে গলা ছেড়ে কাঁদছিলাম,আপনিই তখন ইনজেক্ট করেছিলেন।তারপর এখানে এসে ড্রেসিং করিয়ে গেছি একবার।কিন্তু আপনার সঙ্গে আর দেখা হয়নি।আজ আবার একটু বিশেষ প্রয়োজনে এসেছি,তাই ভাবলাম আজ আপনাকে খুঁজে বের করে একটা ধন্যবাদ জানাতেই হবে।সেজন্যই এটুকু মিথ্যের আশ্রয় নিলাম।ক্ষমা করবেন প্লিজ...থ্যাঙ্কু,সেদিনের জন্য...


কিছুক্ষণ অবাক হয়ে চেয়ে থেকে উনি বললেন,


-আরে এটা তো আমাদের কাজ।ধন্যবাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।আপনি ভালো আছেন তো এখন?হাত কেমন আছে?

-ঠিক আছে।

-তবে আজ আবার হসপিটালে?খুব প্রয়োজন ছাড়া তো কেউ এদিকে আসে না...

-চোখ দেখাতে এসেছিলাম।একটু সমস্যা আছে।গয়না পরতে বললেন উনি।

-চশমা...

-হুম!ওই আর কি!চোখের গয়না...

-বেশ।আপনি সুস্থ থাকুন।যাতে হসপিটালের আশেপাশেও আর আসতে না হয়...এলাম আমি।একটু ব্যস্ত আছি।একটা পেশেন্টের ডিসচার্জ আছে!

-ম্যাডাম?

-হ্যাঁ বলুন?


আন্তরিক দু-পা এগিয়ে গিয়েছিলো।কি করে পরেরবার আবার দেখা করা যায়,তাই ভাবতে লাগলো ও।কিন্তু বলার মতো কিছু খুঁজেই পেলো না।তারপর সেই নারীর হাতের দিকে চেয়ে বললো,


-এই হসপিটালের ভিতরে কি নার্সারী আছে কোনো?না মানে এই ফুল...

-ওহ এটা!এটা আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে দিয়েছে!

-হ্যাঁ!?


একটু ধাক্কা খেলো আন্তরিক।এভাবে প্রথমবারের কথাতেই,কোনো নারী এত খোলাখুলি নিজের প্রেমাস্পদের কথা বলতে পারে বুঝি!কি জানি!হবে হয়তো!যুগ ওকে পিছনে ফেলে রেখে অনেকটা এগিয়ে গেছে,নাকি ওই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পেরে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে,আন্তরিক ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না।জীবনের অর্ধেকটা সময়ই তো,আন্তরিক পড়ার বইতে মুখ গুঁজে কাটিয়ে দিয়েছে।তাই ও এত খোলামেলা কথায় ঠিক অভ্যস্ত নয়।বেশ একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেলো আন্তরিক।সেই সঙ্গে মন ভাঙার চিনচিনে ব্যথায় বুকটাও যেন একটু ভারী হয়ে এলো।তাকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে মনের বেলুন ফুলে আকাশে ওড়ার আগেই,ফুস করে সবটুকু হাওয়া বেরিয়ে গেলো বাইরে...চুপ করে গেলো আন্তরিক....কিন্তু সেই নারী হাসিমুখে তখনও বলে চলেছে,


-হুম!আমার সাত বছরের এক খুদে প্রেমিক।এতদিন আমাদের মধ্যে খুব ভালোবাসা ছিলো।আমার ডিউটি আওয়ারে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই,আমার সঙ্গে সে একঝুড়ি গল্প করতো।আজ ডিসচার্জ হয়ে যাচ্ছে বলে মাকে বলেছে,আমার জন্য ফুল আনতে।আমি কাল ওকে বললাম,তুই বড় হয়ে কি করবি?এখানে কত্ত ডাক্তার আছে।তুই এইরকম ডাক্তার হবি?তখন আমার ওপরেও বেশ ডাক্তারি করবি!আজ সে ছেলে আমার হাতে এই ফুলটা ধরিয়ে দিয়ে বলে কিনা,বড় হয়ে তোমাকে বিয়ে করবো।


মনখারাপের সমস্ত মেঘ কাটিয়ে,সজোরে হেসে উঠলো আন্তরিক...


-সে আজ ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছে।তাই আমার বড্ড তাড়া!আসছি....আপনি নিজের শরীরের যত্ন নেবেন।আর ইনজেকশনে একদম ভয় পাবেন না।

-ম্যাডাম!

-কিই?!!


বিরক্ত হয়ে সে বলে উঠলো...


-এটা কি আমার সেদিনের কার্যকলাপ মনে করে বললেন?নাকি এমনিই...আচ্ছা সত্যি বলুন তো,আপনি আমায় চিনতে পেরেছেন?!


-তুমি এখানে?আমি মাকে কখন থেকে তোমার কথা বলছি....আমি খুঁজছিলাম তো তোমাকে....


মাথা ঘুরিয়ে ঝুমুর দেখলো লিফট থেকে একটা হুইল চেয়ার বেরিয়ে আসছে।তাতে ওর অপরিণত রুগ্ন প্রেমিক বসে আছে।ওখান থেকে বসে-বসেই ডাকছে ও।ওয়ার্ডবয় হুইল চেয়ারটা খানিক এগিয়ে নিয়ে এলে,ঝুমুর দৌড়ে গেলো ওই দিকে।দুহাতে জড়িয়ে ধরলো ওকে...ঠোঁট ঠেকিয়ে দিলো ওর চুলহীন মসৃণ মাথায়....


-এই তো সোনা আমি!

-তোমাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না তো!কোথায় চলে গেছিলে তুমি...

-এই যে আমি...তোমার দেওয়া ফুলটা যত্ন করে কোথায় রাখা যায়,সেই জায়গা খুঁজছিলাম।

-এটা তুমি হারাবে না কিন্তু...

-একদম না!


আন্তরিক একটু দূরে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে উপভোগ করছিলো নিষ্পাপ-নির্ভেজাল একটি ভালোবাসার মুহূর্ত।অসুস্থ সন্তানকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ছেলেটির বাবা-মা।কিন্তু তাদের মুখে একটুও হাসি নেই কেন!!মায়ের চোখের কোণে জল,কান্নাভেজা মুখশ্রী,বাবাও কেমন যেন নিষ্প্রাণ!তার চেয়ে বরং ঝুমুর অনেক বেশি প্রাণোচ্ছল-সপ্রতিভ!এমনকি তার ক্ষুদ্র প্রেমিকের যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখাবয়বেও নির্মল হাসির ছোঁয়া!ওর চোখদুটো যেন হাসছে!বাবা-মায়ের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে অসমবয়সী প্রেমিক-প্রেমিকাকেই একভাবে দেখতে লাগলো আন্তরিক....


-টাটা!আমি আবার আসবো!


একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাক্সিতে উঠে চলে গেলো ঝুমুরের খুদে প্রেমিক।হাত নেড়ে ও সরে এলো কাঁচের জানলা থেকে।


-ঝুমুর কখন বেরোবি?

-এই জাস্ট চেঞ্জ করে আসছি!


অনুসন্ধানে বসে থাকা নারীর প্রশ্নের উত্তরে ঝুমুর বললো।


-আমার আজ দেরি হবে রে।কতগুলো রিপোর্ট আছে,পেশেন্ট পার্টিকে হ্যান্ডওভার করে তবে বেরোবো।পাঁচটা বেজে যাবে মনে হয়।তাছাড়া কিছু কেনাকাটাও আছে,সেগুলো সেরে যাবো।তুই বেরিয়ে যাস!

-আচ্ছা ঠিক আছে।আমিও আজ ভীষণ টায়ার্ড!


-ম্যাডাম?

-আবার কি?কিছু বলবেন?

-ছেলেটির কি হয়েছে?আপনার প্রেমিকের?বাবা-মা সন্তানকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময়ও এমন উদাস কেন?

-কোনো বাবা-মা মৃত্যুপথযাত্রী সন্তানকে কিছুদিনের জন্য ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে,কিভাবে সুখী হবে বলুন তো?

-মানে?কি হয়েছে!

-অ্যাকিউট লিউকেমিয়া!

-মাই গড!ব্লাড ক্যান্সার!

-হুম!এই যাচ্ছে!আবার কদিন পরে ঘুরে এখানেই আসবে হয়তো!তখন হয়তো আরও বেশি অসুস্থ থাকবে,বা হয়তো আর কোনদিন আসবেই না!


চুপ করে গেলো আন্তরিক।বসে পড়লো সামনের ওই বেঞ্চে।ওর নিজের তো কেউ না।ও চেনেও না ওই বাচ্চাটিকে।তাও এত কষ্ট হচ্ছে কেন!যখন ও মাথা তুললো,তখন সামনে আর সে দাঁড়িয়ে নেই।শুন্য বারান্দা।অনুসন্ধানে সেই নারীকন্ঠ ব্যস্ত হয়ে রয়েছেন টেলিফোনের রিসিভারে....ধীরে-ধীরে বাইরে বেরিয়ে এলো আন্তরিক....


-আপনি?


আন্তরিক অনেকবার ভেবেছে এখান থেকে পালাবে।কারণ,বলার মতো তো ও আর কোনো কথাই খুঁজে পাচ্ছে না।আর এসব ব্যাপারে ও বরাবরই বড্ড আনাড়ি!একদিন স্যার হয়ে সেই ছাত্রীর হাত থেকেই পালিয়ে বেঁচেছিলো।বাবা কারণ জিজ্ঞেস করায়,কোনো উত্তর পর্যন্ত দিতে পারেনি।বাবা কি বুঝেছিলো কে জানে!আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি।কিন্তু এখানে গল্প তো অন্যরকম।এখানে অন্তু নিজেই কড়কে গিয়ে হড়কে গেছে।তাই মান খুইয়েও,প্রাণ বাঁচিয়ে প্রেমের পথেই ওকে হাঁটতে হবে।আজ প্রাণ পালাই-পালাই করলেও,মন কান ধরিয়ে হাসপাতালের উল্টোদিকের চায়ের দোকানটায় ওকে দাঁড় করিয়ে রাখলো।কান্না পেয়ে গেলো আন্তরিকের।এ তো রীতিমতো শাস্তি!এতদিন পড়া না পারলে ছাত্রছাত্রীদের শাস্তি দিয়েছে ও।কিন্তু এবার অন্তুর নিজেরই শাস্তিভোগের পালা।কিন্তু তবুও ও কিছুতেই পালাতে পারলো না।চা খেয়ে সবে সিগারেট ধরিয়ে একটা সুখটান দিয়েছে অন্তু,তখনই সে আকাশী রঙের ছাতা মাথায় দিয়ে বেরিয়ে এলো হাসপাতালের গেট দিয়ে।পরনে চুড়িদার।হালকা শীতের আমেজ থাকলেও,শেষ বেলায় রোদ্দুরটা বড্ড গায়ে লাগে।এখানকার রোদ এতটাই চড়া,মুখচোখ রীতিমতো ঝলসে গিয়ে ওই রুক্ষ লালমাটির মতোই হয়ে যায়।এবার বাড়ি ফেরার পর বাবা বলেছিলো,


"ইস!অন্তু পুড়ে গেছিস তো পুরো!কয়েক বছরেই তুই মুখপোড়া হনুমান হয়ে যাবি!"


নিজের দিকে আন্তরিক কোনদিনই ফিরে চায় না।তাই বাবা সেদিন ওই কথা বলতে,ও হেসেই ফেলেছিলো।ওর এতটাই ভুলো মন,ছাতা আর রুমাল ও এত্ত হারায়,তাই ছাতা নামক বস্তুটা ব্যবহার করাই ছেড়ে দিয়েছে।তবে আজ ও বেরোনোর আগে আয়নার দিকে চেয়ে দেখেছে।সত্যিই কয়েক মাসের মধ্যেই বীভৎসরকম ট্যান হয়ে গেছে ও।বাঁকুড়ার জ্বালাময়ী সূর্য জ্বালিয়ে দিয়েছে ওকে।তবে সেসবের পরোয়া ও করে না।শার্ট আর পছন্দের জিন্সে নিজেকে মুড়ে প্রতিদিনের মতোই আজও বেরিয়ে এসেছিলো।সে ছাতা খুলে রাস্তার ওপর উঠে আসতেই,অন্তু পায়ের তলায় সিগারেটটা পিষে দিয়ে,পিছন দিক থেকে এগিয়ে গিয়েছিলো ওর দিকে....ডাকতেই চমকে উঠেছিলো সে,


-হুম ম্যাডাম...আমি।ভয় পাওয়ার কিছু নেই।এই একটু চায়ের দোকানেই ছিলাম।চা খাচ্ছিলাম!

-স্বাভাবিক!চায়ের দোকানে বসে নিশ্চয়ই এগরোল-চাউমিন খাবেন না!আপনি কি চান বলুন তো?আমাকে ফলো করছেন কেন?কি ধান্দা!কেটে পড়ুন!

-নিতান্ত ব্যক্তিগত স্বার্থেই ফলো করছি।ইঞ্জেকশনকে ভয় না পাওয়ার দশটি কারণ....এই বইটা কোথায় পাওয়া যায় বলতে পারেন!


রাস্তার মাঝে আন্তরিকের ডাকে দাঁড়ায়নি ও।তবে আন্তরিকের কথা শুনে হাঁটতে-হাঁটতে হেসেই ফেললো ঝুমুর....আন্তরিকও ওর সঙ্গে হাসিতে যোগ দিয়ে বললো,


-আসলে ম্যাডাম,আপনাকে দেখে ভাবলাম,আমার সঙ্গে একটু কথা বলতে আপনার বোধহয় কোনো অসুবিধে হবে না!

-তা হঠাৎ এই রকম ভাবনার কারণ?

-জানি না...জাস্ট মনে হলো।

-আপনি এবার আসুন।আমিও আসি।বাসে উঠবো...

-চোখের ডাক্তারের খবরটা বৌদি দিয়েছিলো।এবার চশমার দোকানের খবর কোথায় যে পাই...শহরে নতুন হলে যা হয় আর কি!সবই অচেনা।বারবার হোঁচট খাচ্ছি,প্রতিপদে....আসলে হাত ধরার মতো কেউ নেই তো!তার মধ্যে চোখেও আবার একটু কম দেখি!চশমাটা না আসা পর্যন্ত....


কোনো কথার উত্তর দিলো না ঝুমুর।ছাতাটা বন্ধ করে হাত দেখিয়ে সোজা এগিয়ে গেলো বাসের দিকে।থমকে গেলো আন্তরিক।ও জানে না কিভাবে কথা শুরু করতে হয়,বা কোথায় থামতে হয়!বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো মনে হয়।এবার আর জীবনেও কথা বলবে না।কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে পিছন ফিরলো সে...


-কি হলো?দাঁড়িয়ে রইলেন যে?আসুন!চশমার দোকান সামনেই পড়বে।আপনাকে নামিয়ে দেবো।হাতে লাঠি দিতে হবে না নিশ্চয়ই....হাত ধরতেও পারবো না কিন্তু।অন্ধের যষ্টি হওয়ার ক্ষমতা নেই!এমনি আসলে আসুন....


আন্তরিক মাথা নামিয়ে হেসে ফেললো।একদৌড়ে এগিয়ে গেলো বাসের দিকে....


-জানেন ঝুমুর দেবী....

-ইস!ম্যাডাম পর্যন্ত তাও ঠিক ছিলো,দেবী!!আপনি বড্ড সেকেলে!আমি নিতান্তই সাধারণ মানবী!নিখাদ মানবসন্তান!দেবী-টেবী কিসব বলছেন!

-ওটা সম্মান!

-আমি এত সম্মানে অভ্যস্ত নই।ইস...

-আপনি খুব সুন্দর করে ইস বলেন তো!

-কি!!

-ইস!

-সত্যিই ইস!এই ফ্রেমটা ভালো লাগছে না।বয়স্কদের মতো।আপনার পছন্দ পাতে দেওয়ার মতো না।

-সেই জন্যই তো একরকম জোর করে আপনাকে মাঝপথে নামালাম।ফ্রেম পছন্দ করে দেওয়ার জন্য।দেখুন এটা...

-এটা তাও যায়!রিমলেস আপনাকে মানবে না।চওড়া ফ্রেম নিন।সাহিত্যের শিক্ষক যখন।বেশ একটা ভারিক্কি ব্যাপার আসবে।এটা দুর্দান্ত কিন্তু...

-এটাই থাকবে।দাদা এই যে প্রেসক্রিপশন।কবে নিতে আসবো?

-পরশু বিকেলে আসুন!

-আচ্ছা!


-দিব্যি আচ্ছা বলে তো বেরিয়ে এলেন।এবার পরশু বিকেল পর্যন্ত চশমা ছাড়া একা কাটাবেন কি করে?একটু আগেই তো এক মুহূর্তও কাটাতে পারছিলেন না!!আপনি তো নাকি আবার চোখেই দেখেন না...


ঝলমলে হাসি হেসে বলে উঠলো ঝুমুর....আন্তরিক বললো,


-দেখুন ঝুমুর দেবী...

-আবার দেবী?এত দেবী-দেবী করলে নৈবেদ্য দিতে হবে কিন্তু....তাও নিয়ম করে দুবেলা!

-রাজি!

-কি!!

-না সত্যিই!আদ্যোপান্ত বামুনঘরের নিপাট ভদ্রসন্তান আমি!আমার ঘরে নৈবেদ্যর অভাব হবে না!পাত পেড়ে আপনার সামনে সাজিয়ে দেবো,তাও নিজের হাতে...

-আপনি ব্রাহ্মণ?

-হুম!আন্তরিক গোস্বামী!

-ওহ!শুধু ব্রাহ্মণই নয়,রীতিমতো ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ যাকে বলে,সেই দলে পড়েন তো আপনি....এলাম....

-এই দাঁড়ান!কি হলো?ব্রাহ্মণ হয়ে অপরাধ করে ফেললাম নাকি!

-আমার সঙ্গে মিশবেন না।আপনার জাত চলে যাবে।

-জাত আবার কি?

-সেটা আপনারা ভালোই বোঝেন!

-না বুঝি না।বোঝান!

-আমার পুরো নাম জানেন?পদবী সহ?জানলে ছিটকে সরে যাবেন।

-কি?

-ঝুমুর প্রামাণিক!

-তো?রক্তের রঙ তো লাল!


অবাক হয়ে আন্তরিকের মুখের দিকে চেয়ে রইলো ঝুমুর।তারপর মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো.... আন্তরিক মৃদুস্বরে বললো,


-জানেন ঝুমুর দেবী,আজ হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আমরা বেশ অনেকটা সুন্দর সময় একসঙ্গে কাটালাম।তবুও একটা ব্যাপার আমি কিন্তু কিছুতেই মন থেকে বের করতে পারছি না।

-কি ব্যাপার?

-আপনার প্রেমিকের অসুখটার কথা শুনে বড্ড আঘাত পেয়েছি!এসব জাত-ধর্ম কি!পেশেন্টকে ক্রাইসিসের সময় রক্ত দেওয়ার হলে,চিকিৎসার সময় আপনারা জাত-ধর্ম বিচার করতে বসেন!ওইটুকু বাচ্চার ওই অবস্থা দেখে আমারই কি ভীষণ খারাপ লাগছে।আপনার খারাপ লাগে না?

-লাগে।কিন্তু মনকে শক্ত করতে হয়।নইলে কাজ করতে পারবো না।মৃত্যু বড় সহজ আমাদের কাছে!বরং জীবনটা টিকিয়ে রাখাই কঠিন।আর ওই কঠিন কাজটাই আমরা করি!জীবনকে ধরে রাখার সর্বান্তকরণে চেষ্টা...জানেন তো,সবচেয়ে সহজ সমাধানকে হারাতেও কিন্তু কঠিন অধ্যবসায় লাগে!আমরা যারা এই সেবা নামক প্রফেশনের সঙ্গে যুক্ত,ডাক্তার-নার্স,প্রতিটা মানুষ....তারা ওই সহজ সমাধানের বিরুদ্ধেই প্রতিমুহূর্তে পাঞ্জা লড়ি।আর আমাদের ভুল হওয়ারও কোনো জায়গাই নেই।সরি বলি আমরা অনেক জ্বালায়!যতক্ষণ না বলে পারা যায়!বুঝলেন?!

-ছেলেটি কি সত্যিই বাঁচবে না?মানে আমি জানি না এসব রোগের চিকিৎসা...রক্ত দিয়ে বা কোনো অপারেশন করে যদি...

-বাঁচবে...

-সত্যি!?

-হুম!এটা সবসময় ওর পরিবারকে বলতে হবে।ওনাদের সন্তান সুস্থ হয়ে যাবে।এটাই বারংবার বলে মানাতে হবে ওদের।যাতে ওনারা ভেঙে না পড়েন।সন্তানের আসন্ন মৃত্যুভয়ে,যেন হেরে না যান!আমরা পুরোপুরি হেরে না যাওয়া পর্যন্ত,কিছুতেই হার মানি না!

-আইসক্রিম খাবেন ঝুমুর দেবী?

-না!থ্যাঙ্কু!

-রেগে আছেন নাকি কোনো কারণে?

-ইস!!নানা!

-আবার ইস!উফ!কি কিউট আপনি!

-এই নানা....আমি রাগি না তো!আমার মতো শান্ত মেয়ে পুরো বাঁকুড়া টাউনে আর দুটি নেই!

-তাই!!তবে আপনাকে রাগী দেখায় কেন?এত গম্ভীর!?

-কি আশ্চর্য!আমার মুখটাই তো এইরকম রাগী-রাগী!আমি কি করবো?

-কিচ্ছু করতে হবে না।ভালো লাগে তো বেশ।ব্যক্তিত্বময়ী!

সহজে কথা বলতে ভয় করে!তবে হাসলেই বেশী ভালোলাগে।আপনার প্রেমিকের কিন্তু এলেম আছে বলতে হবে।দিব্যি আপনার প্রেমে পড়ে গেলো।আবার বলেও দিলো কত্ত সহজে!ভীষণ কিউট বাচ্চা...

-হুম!ভীষণই মিষ্টি!তারপর...আপনি বলুন,আপনার ক্লাসের সবচেয়ে পচা স্টুডেন্টটি কে?কি তার কার্যকলাপ?

-হোয়াট!খুব খারাপ প্রশ্ন এটা!আমি আমার সব ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসি!আমার কাছে কেউ খারাপ নয়!সবাই সমান!

-ইস!বললেই হলো?!

-আপনি ইস বলতে থাকুন....অসম্ভব ভালো লাগে!কিন্তু সত্যিই আমার কোনো অপছন্দের স্টুডেন্ট নেই!

-হতেই পারে না!আমারও ঘাড়-ত্যারা পেশেন্ট আছে।ভীষণ কথার অবাধ্য।সব জায়গায় অপছন্দ থাকতে বাধ্য।আপনারও আছে...থাকবেই!

-ওয়েল....বলেই ফেলি তবে!?

-একদম...সচ্ছন্দে!

-এই সত্যিই আপনি কিছু খাবেন না?

-কেন বলুন তো?আপনার কি খিদে পেয়েছে?বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত হেঁটে যাবো,এইটুকু তো রাস্তা!তার মধ্যে আপনি অন্তত বার তিনেক খাবার কথা বললেন!

-আসলে আমি রন্ধনে অষ্টরম্ভা!তবে আদ্যোপান্ত খেকো একজন মানুষ!


সশব্দে হেসে উঠলো ঝুমুর।পুরো ভেবলে গেলো আন্তরিক।হাসির মতো ও কি বললো,সেটাই ওর মাথায় ঢুকলো না...


-সরি!আমি কি বললাম!?ভুল কিছু বললাম?

-খেকো একজন মানুষ!নাকি মানুষখেকো!?

-নাঃ!মানুষে অরুচি!বাকি সব চলে!

-সত্যি!

-একদম!আমি বিশাল ফুডি!

-এই জন্যই খাই-খাই করছেন!

-এভাবে বলবেন?

-আচ্ছা সরি!আপনি কি বলছিলেন,আপনার অপছন্দের স্টুডেন্ট?

-হুম!আছে বুঝলেন তো!দুজন ছাত্র!তারা বেস্টফ্রেন্ড!আর তাদের আমাকে নিয়ে বড্ড বেশি প্রব্লেম।প্রথম দিন থেকেই।কেন জানি না!আমি ক্লাসে ঢোকার পরও ওরা কথা বলেই যাবে গুজগুজ করে।আমি জানি,আমার পিছনেও ওরা আমাকে নকল করে হেব্বি মজা পায়।ওই দুজনের ওপর না,আমার খুব রাগ হয়।আবার ওদের সামনে গেলে হেসেও ফেলি!মনে হয় যেন নিজের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।নিজেও তো এককালে স্কুলে থাকতে এমনটাই করতাম।ওরাই বা করবে না কেন!তবে একটা ব্যাপার আছে।সেটা হলো,তারা আমার ক্লাসে পড়া পারলো তো বেঁচে গেলো।আর না পারলে অন্যদের চেয়ে তাদের শাস্তিটা একটু বেশিই হয়।

-যেমন?

-যেমন...অন্যরা যদি ক্লাসের মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকে,তারা ক্লাসের বাইরে...

-এটুকু?!ব্যাস!হাতে বেত নিয়ে টিকি দুলিয়ে পড়ান না!তেল-মাখানো বেত দিয়ে সাঁই-সাঁই করে পেটান না?

-এ কি কথা!আমি কোনোদিনও কোনো ছাত্রছাত্রীর গায়ে হাত দিইনি,দেবোও না।যেটুকু শাসন ওই মুখেই।আর তাছাড়া,একটা হাইস্কুলের বাংলার টিচার আমি।ফিনফিনে ধুতি পড়ে পাঠশালায় পড়াই নাকি,যে টিকি থাকবে!

-না,বামুনদের তো পৈতে থাকে,টিকিও থাকে।টিকিতে একটা গাঁদাফুলও থাকে।আপনার নেই কেন?


বলেই হেসে ফেললো ঝুমুর।সঙ্গে আন্তরিকও...


-উফফ!আপনি পারেন বটে!পৈতে সে একবার টাকলু হয়ে উপনয়নের পর গয়নার মতো পরেছিলাম ঠিকই,তারপর সে ছিঁড়ে-ফেঁড়ে কোথায় অদৃশ্য হয়েছে,আজ তার আর কোনো অস্তিত্বই নেই!চলুন না,কিছু খাই...

-ইস!!খালি খাই-খাই!আমি খাবো না....আপনি খেলে খান!

-না থাক!তবে একটু চা পেলে মন্দ হতো না অবশ্য!চা আর সিগারেট ছাড়া একজন ব্যাচেলরের জীবনে আর আছেটা কি!!মনটা বড্ড চা-চা করছে!

-জীবনে আরও অনেক কিছু আছে!আপনি জানেন,সিগারেট ক্যানসারের....

-জানি!

-তাও...

-ছাড়তে পারি না!

-দাঁড়ান!আপনাকে একদিন আমাদের ওয়ার্ড থেকে ঘুরিয়ে আনবো।দেখবেন,কারোর গাল খুবলে কাটা,কারোর গলার একাংশ কাটা,কারোর তো সারা জীবনের মতো,আর কথা বলার ক্ষমতাই নেই।নিজে ডেকে আনা রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে,এখন হাতের শেষ সম্বল দু-চারগাছা সোনার চুড়ি,এমনকি ঘটি-বাটি পর্যন্ত বিক্রি করতে হচ্ছে।সবকিছুর কারণ এই তামাক!তাও তো এগুলো দেখতে পাচ্ছেন!শরীরের ওপরকার ক্ষত!আর আপনার শরীরের ভিতরে নিকোটিন কত ক্ষতি করছে জানেন!ফুসফুসের হাল কি করছেন,সে খেয়াল আছে?!সিগারেটের প্যাকেটের ওপরের অমন মর্মান্তিক ছবি দেখেও কি আপনাদের শিক্ষা হয় না!?সত্যি....আপনারা দেখে নয়,ঠেকে শেখেন!যখন ঠেকবেন,তখন ছাড়বেন!

-তাও পারবো না বোধহয়!

-কি অবস্থা!মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও...

-ওরে বাপ রে!আচ্ছা খুব ভুল হয়ে গেছে।চা-সিগারেট সমস্ত ক্যানসেল!আসলে ভুলতে চাইছিলাম!

-কাকে?প্রাক্তনীকে?এভাবে নিজেকে শেষ করে!

-নানা!আমার প্রাক্তনী কেউ নেই।কোনোদিন কেউ ছিলোই না!কারোর প্রাক্তন হয়ে ওঠার সৌভাগ্য,আমার আজ পর্যন্ত হলো না!

-ইস!

-উফ!

-কি?

-কিছুনা!!

-আপনার কত্ত সৌভাগ্য!আমার কিন্তু ভীষণ হিংসে হচ্ছে!আপনার মন ভাঙেনি!আপনি তো তবে কোটিতে একজন মশাই!

-আপনি?

-কি করবেন জেনে!কোনো প্রয়োজন আছে কি!আমি কেন বলবো আপনাকে?

-ঠিক!এটা বললে মানতে পারি।আপনি আমার মতো স্বল্পপরিচিত একজনের কাছে কেন এসব ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে কথা বলবেন!এটা মেনেই নিলাম।কিন্তু ওটা মানবো না।

-কোনটা?

-ওই যে,কোনো প্রয়োজন আছে কি!কেন?সবসময় কি প্রয়োজন-স্বার্থ থাকাটা খুব প্রয়োজন?বন্ধু হয়ে বন্ধুকেও তো বলা যায়!

-ইস!ভারী মজা!!নার্সের সঙ্গে বন্ধুত্ব?ভেবে বলছেন তো?কথার আগেই কিন্তু সূঁচ ফুটিয়ে দেবো!তখন আবার চেল্লাবেন!

-ভালোই তো!আপনার কারণে আহত হলে,আপনিই সেবা করবেন।সেবাই আপনার পরম ধর্ম!ঠিক কিনা!


একরাশ হাসি জুড়ে রইলো ঝুমুরের সারাটা মুখাবয়বে...


-খুব তো কথার মারপ্যাঁচ জানেন!তা কাকে ভুলতে চাইছেন,বললেন না তো?

-ওই বাচ্চাটিকে।আমি শুধু ভাবছি,আমরা কত সামান্য কারণেই অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি।আর ওই একরত্তি বাচ্চাটা লড়াই করেই যাচ্ছে,করেই যাচ্ছে।কত্ত কষ্ট পাচ্ছে!শারীরিক,মানসিক!আর ওর বাবা-মা চোখের সামনে এভাবে নিজের সন্তানকে দেখছেন!সন্তানের মর্মান্তিক পরিণতির জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা....উফ!

-হুম!

-সত্যিই বড্ড খারাপ লাগছে বাচ্চাটার জন্য।

-কি আর করা যাবে!?আমি আসছি!বাসে উঠবো।আপনি তো উল্টোদিকে যাবেন?আসুন তাহলে!

-বলছিলাম কি!নেহাৎ হাত-পা কেটেকুটে না ফেললে আপনার হসপিটালে আসা যায় না!তাই না!!

-না!ওখানে আসতে হলে,রোগী হয়ে রোগ বাধিয়েই আসতে হবে।

-ও আচ্ছা....রোজ-রোজ কিভাবে অসুস্থ হই বলুন তো!

-আপনি মশাই ঠিক সুবিধের ঠেকছেন না!কি চান বলুন তো?

-ভরসা করতে পারেন।

-কেন করবো?

-তার কারণ দেখানোর জন্যও তো আমাকে অসুস্থ হয়ে হসপিটালে যেতে হবে।আপনার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।কি বিড়ম্বনা!!আর তো কোনো উপায় নেই!

-তাহলে আর কি করা যাবে?!স্কুল আর বাড়িই করুন,নিশ্চিন্ত মনে...

-হুম!কিচ্ছু করার নেই।আমার কপাল!

-বেশ!তবে...আমার পছন্দের চশমা পরে আপনাকে দেখতে কেমন লাগছে,সেটা আমায় জানাবেন না?


মাথা নামিয়ে হাসলো আন্তরিক....


-আপনি না হয় নিজেই দেখে নেবেন!পরশু!এইখানেই...ওই চশমার দোকানের সামনে।ঠিক বিকেল পাঁচটা!সেদিন কিন্তু আপনাকে চা খাওয়াবোই!

-শুধু চায়ের জন্য ব্রেক-জার্নি পোষাবে না মশাই!

-চায়ের সঙ্গে টা-টাও না হয় জুড়ে দেবো,নৈবেদ্য হিসেবে!আশা করি এই অধমের হাতের নৈবেদ্য গ্রহণ করবেন!

-আসছি....

-আসুন!


বাসটা ঝুমুরকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো আন্তরিকের চোখের সামনে দিয়ে।আন্তরিক রাস্তা পেরিয়ে এপারে এলো।বাড়ি যাওয়ার জন্য ফিরতি-বাসে উঠবে বলে....মনে-মনে একবার শুধু বললো,

"ইস!!!!"


-অন্তু দাদা!কখন থেকে ডাকছি!শুনতে পাও না নাকি!


আনোয়ারের মায়ের এক ধাক্কায় অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে এলো আন্তরিক।উঠে বসলো বিছানার ওপরে।বন্ধ করে বালিশের পাশে সরিয়ে রাখলো "সঞ্চয়িতা"....


-আপা!তুমি?ডাকছিলে আমায়?

-ডাকছিলে মানে!কখন থেকে ডাকছি।নীচ থেকে ডাকতে-ডাকতে গলা ফেটে গেলো তো!তোমার বাবা কখন থেকে বসে রয়েছে,একসঙ্গে বসে খাবে বলে!আমি ডাকতে এসে দেখি,তুমি চোখ বন্ধ করে হাসছো!জেগে-জেগেই স্বপ্ন দেখছিলে!নাকি ঘুমুচ্ছিলে?

-ওই চোখটা একটুখানি লেগে এসেছিলো আপা!চলো,বাবা বসে আছে না?তুমি খেয়েছো?

-হ্যাঁ....এই তোমাদের খেতে দিয়েই খাবো....


আনোয়ারের মায়ের সঙ্গে কথা বলতে-বলতেই চশমার কাঁচটা জামার এককোণ দিয়ে ঘষে মুছে নিচ্ছিলো আন্তরিক।তারপর চশমাটা চোখে পরে নিয়ে বেরিয়ে গেলো ঘরের বাইরে...বালিশের পাশে অবহেলায় আত্মগোপন করে পড়ে রইলো অতীতের একমুঠো স্মৃতিস্বরূপ "সঞ্চয়িতা"....


-বলো মণিমা!ডেকেছিলে?


হাত নাড়িয়ে ঘড়ির দিকে ইশারা করলেন সৌদামিনী দেবী।


-এই মিনিট দশেকের মধ্যেই বেরোবো!রেডি হচ্ছি।


আলমারী খুলে কতগুলো শাড়ি বের করে দিলেন সৌদামিনী দেবী।তার মধ্যে বিয়ের লাল বেনারসীটাও রয়েছে।রাত্রির পরনের শাড়িটা টেনে ওর ব্লাউজে হাত রাখলেন উনি!তারপর দেখালেন টেবিলের ওপরে রাখা বাংলা ক্যালেন্ডারের দিকে....রাত্রি মৃদু হেসে বললো,


-জানি মণিমা!বিয়ের আর বেশিদিন বাকি নেই।শাড়ি ফলস-পিকো-ব্লাউজ সব হবে।তুমি ঘরে বসে-বসে এত চিন্তা কোরো না তো!দেখছি কবে যাওয়া যায়!


হাত নেড়ে চোখ রাঙালেন সৌদামিনী দেবী।


-অসম্ভব!আজ হবেই না!কাজ আছে।


আলমারী খুলে কতগুলো বড়-বড় নোট রাত্রির হাতে গুঁজে দিতে গেলেন সৌদামিনী দেবী।


-মণিমা,আমার কাছে আছে।এত টাকা লাগবে না!আছে তো...


সেই মুহূর্তেই ওপর থেকে নেমে শাশুড়ির ঘরে পা রাখলো অফিসযাত্রী স্বর্ণালী।রাত্রি আর সৌদামিনী দেবী দুজনেই থমকে গেলেন।পুত্রবধূকে দেখে হাতের টাকাটা আবার আলমারীতে রাখলেন সৌদামিনী দেবী....


-সরিয়ে রেখে কি হবে মা!দিয়েই দিন!সত্যিই এমন কপাল পেতে অনেক ভাগ্য লাগে রাত্রি।একদিকে স্বপ্ন,একদিকে তার মা,টাকা ঢেলে দিচ্ছে তোমার জন্য!


রাত্রি মাথা নামিয়ে নিলো।সৌদামিনী চির-নির্বাক....


-তা বাড়ির বউয়ের প্রতি কেউ কোনো দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করুক বা না করুক,বউয়ের তো বাড়ির প্রতিটা সদস্যের প্রতি একটা দায়িত্ব থেকেই যায়।সেটা আমি অস্বীকার করি কি করে?

-স্বর্ণ নীচে এসো।রোজ-রোজ তোমার জন্য আমার অফিসে ঢুকতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।

-তুমি যাও!আমি আসছি!


তাও মায়ের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়েই রইলো স্বপ্ননীল....


-কি হলো?যাও!

-মা আসছি!রাত্রি এলাম!

-হুম...


স্বপ্ননীল নীচে নেমে গেলে স্বর্ণালী বললো,

-রাত্রি সামনেই তোমার বিয়ে।সবাই তোমার জন্য অনেক করছে।আমার আলাদা করে আর কিছু করার প্রয়োজন পড়ে না।বা কেউ আমাকে ডাকবেও না কিছু করতে।কিন্তু আমি তো দূরে সরে থাকতে পারি না।যেহেতু আমার বাড়িতেই একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে।তোমার বিয়েতে কিছু একটা গয়না দেবো।আমার বাজেট ভাই এদের মতো এত আনলিমিটেড নয়!ছোটখাটো কিছুই নিও।আমার সঙ্গে গিয়ে পছন্দ করে কিনে নেবে।ওটা আমার তরফ থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু করার শুভকামনায় একটা সামান্য উপহার...কবে বেরোবে বলো?আজ!কতক্ষণ তোমার শিফট?

-বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।দুটো শো আছে।তুমি ছেড়ে দাও না বৌমনি।সবাই তো এত দিচ্ছে।আর দরকার নেই।এই অনেক....

-না!সবাই দিলেও আমার দিক থেকে কিছু একটা তোমায় নিতেই হবে।যাতে ও বাড়ি যাওয়ার পর ওই গয়নাটা তোমাকে আমার কথা মনে করিয়ে দেয়।তুমি যেন ভুলে না যাও,স্বপ্ননীল মুখার্জী বিবাহিত!

-সেটা আমি কোনোদিনও ভুলবো না বৌমনি!এভাবে একথা বলার মানে কি!

-মানেটা না বুঝতে পারার মতো অবুঝ তো তুমি নও!

-আমার কোনো গয়না লাগবেনা।

-কেন?তোমার নীল দা না দিয়ে,নীল দার বউ দিচ্ছে তাই?!

-আমার অযথা তর্ক করতে ভালো লাগছে না।আমি বেরোবো বৌমনি!তোমারও বোধহয় দেরী হয়ে যাচ্ছে!

-হুম....আমার দিকটা কে কোনদিন বুঝেছে!তোমার কাছে তো কিছু আশাই করি না।তুমি তো বাইরের মেয়ে।কিন্তু মা আপনার কাছ থেকেও কোনোদিনও একটু সম্মান পেলাম না...আমি অফিস থেকে বেরিয়ে তোমাকে ফোন করবো রাত্রি।তারপর সোনার দোকানে যাবো।এলাম!মা আসছি....


সৌদামিনী স্বর্ণালীর হাত টেনে ধরলো।হাত গোল করে দেখালো....স্বর্ণালী কোনোরকমে দায়সারা উত্তর দিলো,


-না মা,রাত্রি বলেছিলো।আমিই কিছু টিফিন নিইনি।আজ ক্যান্টিনেই কিছু খেয়ে নেবো।পিসিমনি ছাদে জামাকাপড় মেলতে গেছে মা।নামলে মামনিকে নতুন ড্রেসটা পরে দেখতে বলবেন।অল্টার করতে হলে,আজ-কালের মধ্যেই পিসিমনি আর মামনিকে নিয়ে বেরোবো।বিয়ের তো আর বেশিদিন বাকি নেই।রাত্রি,তুমি কবে যাবে ব্লাউজ বানাতে...আমি যাবো সঙ্গে?

-নাঃ!থাক!

-ও....তোমার বর আসবে বুঝি?

-দেখি,ও কি বলে!

-ঠিক আছে,দেখো।দরকার হলে আমাকে বলবে।আমি আছি।

-বৌমনি....


সৌদামিনীর ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসেছিলো স্বর্ণালী।আবার রাত্রির ডাকে ও ফিরলো,


-কিছু বলবে?

-কাল রাতে তোমাকে অনেকবার ডেকেছিলাম শাড়ি দেখতে...তুমি তো শাড়ি কেনার সময় ছিলে না,তাই....

-রাত্রি কাল রাতে আমার একটু মেজাজটা বিগড়ে ছিলো ভাই।সরি!কিছু মনে কোরো না।

-না!ঠিক আছে!

-তুমি নিতান্ত অবুঝ নও,তাই তুমি বুঝবে!সবকিছু ভাগ করা যায়,কিন্তু ভালোবাসা না!ভালোবাসার মানুষটাকেও না।তোমাকে আর বেশি কিছু বোঝাতে হবে না আশা করি।বিয়েটা করো,ভালো থাকো,সুখে সংসার করো।দূরে থাকো!আমাকেও ভালো থাকতে দাও!দেখো,তোমার সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্বের জায়গাই নেই।তোমার সঙ্গে আমার তুলনাই চলে না...

-তাহলে করছো কেন?

-এটা তুলনা নয়।এটা ভয়!হারিয়ে ফেলার ভয়।

-তোমার কোনো ভয় নেই!

-মুখে সেটা বলে-বলেই তো তুমি আজ এই পর্যন্ত পৌঁছে গেছো!পিসিমনি বলে....

-পিসিমনি যা বলে,ভুল বলে!একটা কথা ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করো বৌমনি,কেউ নিজে ভালো না থাকলে,সে কিন্তু কারোর ভালো থাকাটাও সহ্য করতে পারে না!তার চোখে লাগে সেটা!কেউ এতটাও উদার না।তোমারটা বোঝা যায়,কারণ তুমি কষ্ট পেলে মুখের ওপর বলে ফেলো তো!সেইজন্য!!কিন্তু পিসিমনিরটা বোঝা যায় না!সে নিজে শেষ হয়ে যাচ্ছে!এই সংসারটাও শেষ করে দেবে।আমার কি!আমি আজ বাদে কাল চলেই যাবো।মণিমার অবর্তমানে এই বাড়িতে আর পা-ও রাখবো না।কিন্তু পিসিমনির কথা শুনে তুমি ওই মানুষটাকে কষ্ট দিও না।মণিমার তো তোমরা ছাড়া আর কেউ নেই....ছুরি-দা-কাটারি তো মিথ্যে-মিথ্যেই এত বদনাম কুড়োয় বৌমনি!সবচেয়ে বেশি আঘাত কিন্তু কথাই করে!এর বেশি আমার আর কিছু বলা মানায় না।কারণ,এই সংসারটা তোমারই...যাও!সাবধানে এসো...


স্বর্ণালী আর একটা কথাও বলতে পারলো না।চুপ করে বেরিয়ে গেলো।সৌদামিনী দেবীর ঘরের দিকে ফিরেই রাত্রি দেখলো,মণিমা ঠিক দরজার সামনেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে....রাত্রি ঢুকতেই উনি বিয়ের বেনারসীটা রাত্রির দিকে এগিয়ে দিলেন।ওটা কাঁধের ওপর ফেলে,রাত্রি এগোলো আয়নার দিকে....বিভোর হয়ে ওর দিকে চেয়ে রইলেন সৌদামিনী দেবী....দুটো চোখ ওনার জুড়িয়ে গেলো....


-আজ বৌমনি গয়নার দোকানে যাবে বললো।এগুলো নিয়ে কাল যাবো মণিমা।আসছি আমি।শো-এর সময় হয়ে যাচ্ছে!এরপর দেরি হয়ে যাবে।


মণিমাকে প্রণাম করে দোতলা ছেড়ে নীচে নেমে গেলো রাত্রি।ওর বিয়ের বেনারসীটা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ পালঙ্কের পাশে বসে রইলেন সৌদামিনী দেবী।তারপর ধীরে-ধীরে এগোলেন নিজের আলমারীর দিকে।বের করে আনলেন পিঁজে ফেঁসে যাওয়া লাল চেলিটা।চুমকি ঝরে গিয়ে শতছিদ্র হয়ে যাওয়া,জালের মতো জরি দেওয়া মাথার ওড়নাটা।ওইগুলো বুকে করে নিয়ে,ঘরের দরজাটা বন্ধ করলেন উনি।টেবিলে ফ্রেমবন্দী হয়ে একমাত্র পুত্রসন্তান স্বপ্ননীল হাসছে।তার পাশেই ফ্রেমবন্দী সাদাকালো ছবিতে পাশাপাশি নবদম্পতি।সাদা-কালো একটি ছবি।চেয়ারে সোজা হয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে রয়েছেন নববধূ সৌদামিনী মুখার্জী,পাশেই দুটো হাত বুকের কাছে নিয়ে যন্ত্রমানবের মতো সটান দাঁড়িয়ে রয়েছেন রজতশুভ্র মুখার্জী!বহু বছর ধরে সযত্নে আগলে রাখা ছবিটা,একেবারেই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।রাত্রি গত বছর বিবাহবার্ষিকীতে জোর করে এটা বের করে নিয়ে গিয়ে,ফ্রেমে মুড়ে এনে দিয়েছে।মুখগুলো আবছা হলেও,এখন বেশ বোঝা যায়।নিজের সিঁদুরে রাঙা লাজুক মুখ,আর স্বামীর প্রখর ব্যক্তিত্বে আজও মোহিত হয়ে গেলেন সৌদামিনী দেবী।চুপিচুপি চুরি করে ছবিটা একবার বুকে চেপে ধরলেন।ড্রয়ার থেকে বের করে আনলেন রজতশুভ্র বাবুর শেষ জীবনে ব্যবহার করা হাতঘড়িটা...ওটাকে কানে ধরলেন।চলে না আর....কাঁটাও নড়ে না।সময় যেন থমকে রয়েছে অতীতেই...রাত্রির বিয়ের কারণে আয়োজিত এই বৈবাহিক পরিমণ্ডলে,নিজের বিয়ের দিনটা মনে পড়ে গেলো সৌদামিনী দেবীর।তবে গল্পটা তো শুরু হয়েছিলো,তারও আগে।যেদিন সে বড়দাদার সঙ্গে এসে দাঁড়িয়েছিলো ঠাকুর-দালানে....হাতের ছবিতে চোখ রেখে অতীতের সুন্দর স্মৃতিচারণে মগ্ন হলেন সৌদামিনী দেবী....


তখন সদ্য জামা ছেড়ে কাপড় পরেছে নবযৌবনা সৌদামিনী।কাপড় ঠিকমতো সামলাতেও পারে না।আর সেদিন?সেদিন তো শরতের আকাশে ছিলো ভাসমান মেঘের আনাগোনা।গ্রামের ভটচাজ বাড়ির ঠাকুর-দালানে ডাকের সাজের একচালার ঠাকুর এসে গিয়েছে আগের দিনই।সকাল থেকেই বিস্তর হুড়োহুড়ি,চরম ব্যস্ততা।সেবার পুজোয় প্রথমবার কাপড় পরেছে সৌদামিনী।সবাই ওকে রকমারি ফ্রক না দিয়ে,কাপড় উপহার দিয়েছে।বালিকা থেকে নারীত্ব বরণ করে নিয়েছে সে।কিন্তু ওর দস্যিপনায় কেউ একটুও লাগাম দিতে পারেনি।সেদিনও কোমরে কাপড় গুঁজে দুহাতে একগাদা সিক্ত পদ্মফুল হাতে নিয়ে ছুটতে-ছুটতে সৌদামিনী পৌঁছেছিল বাড়ির চৌকাঠে।কাপড় ছিলো আলুথালু!লাল-লাল ফিতে দিয়ে দুদিকে কলা-বিনুনী করে দেওয়া চুলগুলো ছিলো অবিন্যস্ত....আর সেই সঙ্গে নূপুর পরা দু-পায়ে পুকুরের পাঁক শুকিয়ে একেবারে মাখামাখি অবস্থা....ভিজে পায়ে সদ্য গোবর-নিকোনো উঠোনে ঢুকতে যেতেই পেল্লায় একখানা রাম-আছাড় খাচ্ছিলো সৌদামিনী!সে সামনে না থাকলে,বোধহয় পড়ে গিয়ে পুজো-বাড়িতেই একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলতো।সেই সেদিন ওকে ধরে বলছিলো,


-এই রে!তোমার লাগেনি তো!যাঃ!!ফুলগুলো তো সব আমার পায়ের ওপরেই পড়ে গেলো।এবার তুমি পুজো দেবে কি দিয়ে?এভাবে কেউ দৌড়োয়?লেগেছে?কি হলো....!!


রজতশুভ্রর হাত ছাড়িয়ে সেদিন ঠাকুর-দালানের দিকে দৌড় দিয়েছিলো সৌদামিনী।এতগুলো কথার একটাও উত্তর না পাওয়ায়,বেশ একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলো রজতশুভ্র।দৌড়োতে-দৌড়োতেই সৌদামিনী শুনেছিলো সেদিন,বড়দাদা তাকে বলেছিলো,


-ও মিনী!আমাদের ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো ও।মিনী কথা বলতে পারে না রজত।ও বোবা!


সেদিন সৌদামিনী ঠাকুর-দালানের আড়াল থেকেই দেখেছিলো,চমকে উঠে সে চেয়েছিলো তার নিজের পায়ের দিকেই।তার পায়ের ওপরেই বুঝি তখনও পড়েছিলো সৌদামিনীর হাত থেকে অর্পণ করা একগুচ্ছ পদ্মফুল...হেঁট হয়ে সেই ফুল নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলো সে।তারপর তার দুচোখ খুঁজছিলো মিনীকেই।মিনী সেটা বুঝেই নিজেকে লুকিয়ে ফেলেছিলো মা দুর্গার মূর্তির অন্তরালে...তারপর ছুটেছিলো ঠাকুমার কাছে....


(চলবে.....)


ছবি : সংগৃহীত


ধারাবাহিকটি ভালো লাগলে ব্লগ থেকে নির্দ্বিধায় শেয়ার করুন ও সবাইকে পড়ার সুযোগ করে দিন।😊😊

 

৭টি মন্তব্য:

সেই তো এলে ভালোবাসা দ্বিতীয় পর্ব

  সেই তো এলে ভালোবাসা সাথী দাস দ্বিতীয়  পর্ব মধ্যরাতের এমন কত শুভ্র অপ্রাপ্তি ভোরের আলোর সঙ্গে মিশে আলগোছে ভূমি স্পর্শ করে। যা মনকে যাতনা দে...

পপুলার পোস্ট